ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : প্রজনন মৌসুমেও সুন্দরবনে নিধন হচ্ছে ডিমওয়ালা মা কাঁকড়া। অসাধু জেলেরা মাছের পাশ নিয়ে বনের বিভিন্ন নদী ও খালে বহালতবিয়তে এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আর বনবিভাগের কতিপয় কর্মকর্তারা এ কাঁকড়া নিধনে সহযোগিতা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরা পাশ পারমিট বন্ধ রাখার নির্দেশনা শুধু কাগজ কলমে সীমাবদ্ধ থাকছে। প্রতি মৌসুমে এভাবে চলতে থাকলে চিংড়ির চেয়েও অর্থনৈতিক কারনে উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক এই সম্পদ অচিরেই বিলুপ্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাস মা কাঁকড়ার প্রধান প্রজনন মৌসুম। এ সময়ে প্রাকৃতিক এই মৎস্য সম্পদের প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষে সরকারিভাবে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরার পাশ পারমিট বন্ধ রাখার নির্দেশনা রয়েছে। এই দু‘মাসে মেদী-মায়া কাঁকড়া কোটি কোটি বাচ্চা ছাড়ে। আর বনের উপকূলীয় এলাকার হাজারো জেলে এই কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। এছাড়া এই কাঁকড়া বিদেশে রপ্তানি করে ব্যবসায়ীরাও বছরে কোটি টাকা আয় করেন। কিন্তু সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বনবিভাগের বিভিন্ন স্টেশনধীন নদী ও খালে অবাধে ডিমওয়ালা মা কাঁকড়া নিধন চালিয়ে যাচ্ছেন। নিয়মনীতির কোন প্রকার তোয়াক্কা করছেন না অসাধু জেলেরা। আর আর্থিক চুক্তিতে বনবিভাগের কতিপয় দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এসব অসাধু জেলেদের সহযোগিতা করছেন। আগে কাঁকড়ার দাম কিছুটা কম থাকলেও বর্তমানে ঢাকাসহ বড় মোকামে ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বনিন্মে ১০০০ থেকে সর্বোচ্চ ২৮০০ টাকা কেজি দরে কাঁকড়া বিক্রি হচ্ছে বলে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর সাথে আলাপ করে জানা গেছে। অধিক লাভের আশায় স্বার্থনেষী এসব শত শত জেলে মাছ ধরার পাশ পারমিট নিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মন মা কাঁকড়া আহরন করে প্রজনন বৃদ্ধিতে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে চলেছেন। আবার প্রকাশ্যে আই ওয়াশ দিয়ে এসব কাঁকড়া হ্যাচারীর বলে বিভিন্ন বাজারের ডিপোতে বিক্রি করছেন জেলেরা। মাঝে মধ্যে আবার লোক দেখানো এসব কাঁকড়ার দুই একটি চালান ধরা পড়লেও কিছুতেই বন্দ হচ্ছে না মা কাঁকড়া নিধন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলের সাথে আলাপকালে জানান, বনবিভাগের কতিপয় স্টেশন কর্মকর্তারা সপ্তাহে বা অমাবশ্যা ও পূর্নিমার গোনে কাঁকড়া ধরা দোনদড়ির, নিষিদ্ধ আটন ও সিক ভিন্ন ভিন্ন খাদে উৎকোচের টাকা নিয়ে মাছের পাশ দেয়। এ ছাড়া নৌকায় দুইজনের বেশি হলে, নিষিদ্ধ এলাকায় কাঁকড়া ধরলে, এক রেঞ্জ হতে অন্য রেঞ্জে, আবার যে টহল ফাঁড়ির আওতায় যাওয়া হবে সেখানেও খাদে খাদে বেশি টাকা দিতে হয়। এভাবে পদে পদে টাকা দিতে দিতে যেতে হয়। আবার মাঝে মধ্যে সুযোগ পেলে ঐ কর্মকর্তারা জেলেদের নৌকা থেকে ইচ্ছামত কাঁকড়া তুলে বিক্রি করে নেয় বলেও জানান।
এ বিষয়ে চুনকুড়ি এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য জীবননান্দ মন্ডল বলেন, কতিপয় দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কারণে প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরা বন্ধ হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে চিংড়ির চেয়েও অর্থনৈতিক কারনে উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক এই সম্পদ অচিরেই বিলুপ্ত হতে পারে। তিনি সরকারি এই সম্পদের ক্ষতি ও নষ্টের সাথে জড়িত কতিপয় দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও অসাধু ব্যবসায়ী এবং জেলেদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি জানান।
এ ব্যাপারে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোঃ নুরুল করিম বলেন, প্রজনন মৌসুমে বনে কাঁকড়া ধরা বন্ধ। এ সময়ে কোন জেলেকে কাঁকড়া ধরা অবস্থায় পাইলে গ্রেফতার করার নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। তারপরও দুই একজন চুরি করে কাঁকড়া ধরতে পারে। এ পর্যন্ত ৬ জন জেলেকে আটক করে জেলে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলাও দেওয়া হয়েছে। ১২০ কেজি কাঁকড়া জব্দ করে অবমুক্ত করা হয়েছে। বেশ কয়েক জনকে জরিমানাও করা হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।