ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)’র শুভেচ্ছা দূত ও সুইডেনের ক্রাউন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সকালে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত খুলনার উপকূলীয় কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের নোয়ানি গ্রামের যজ্ঞমন্দির এলাকায় ইউএনডিপি, ইউএনসিডিএফ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও সুইডেন সরকারের অর্থায়নে এবং বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীন পরিচালিত লজিক প্রকল্পের আওতায় নির্মিত রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং সিস্টেম পরিদর্শন করেন। ক্রাউন প্রিন্সেস এসময় স্থাপিত হওয়া ওয়াটার হারভেস্টিং সিস্টেম থেকে স্থানীয় মানুষদের লবণমুক্ত সুপেয় পানি সংগ্রহ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন এবং ওয়াটার হারভেস্টিং সিস্টেমের উপকারভোগীদের সাথে সংক্ষিপ্ত সময় মতবিনিময় করেন। মতবিনিময়কালে উপকারভোগীরা দেশের দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ততা সমস্যার কারণে অতীতে পানযোগ্য পানির সংকটের কথা তুলে ধরেন। তারা জানান, আগে গ্রামীণ উৎস হতে পরিবারের পানযোগ্য পানি সংগ্রহের জন্য নারীদের বাড়ি থেকে দূরে যেতে হতো আবার অনেক সময় লবণমুক্ত পানি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়তো। এখন নতুন ওয়াটার হারভেস্টিং সিস্টেম হওয়ার পরে সহজেই লবণমুক্ত বিশুদ্ধ পানি পাওয়া যাচ্ছে। পরে ক্রাউন প্রিন্সেস একই ইউনিয়নের শিকারিপাড়া এলাকায় লজিক প্রকল্পের আওতায় জলবায়ু সহনশীল জীবিকায়নের অংশ হিসেবে ভেড়া পালন, মৎস্য চাষ এবং জলবায়ু ও জীবিকা উন্নয়ন সমবায় সমিতির মধু বিপণন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। পরে তিনি কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে অবস্থিত ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার পরিদর্শন করে ডিজিটাল সেন্টার হতে সেবাগ্রহীতারা কিভাবে সেবা পান তার সম্যক ধারণা লাভ করেন এবং ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে ডিজিটাল সেন্টারের সুবিধা-সেবাসমূহ নিয়ে পটগানের পরিবেশনা উপভোগ করেন।
এরপরে কয়রা উপজেলা সদরে বাংলাদেশ ডাক অধিদপ্তরের স্মার্ট সার্ভিস পয়েন্ট অফ পোস্ট অফিস উদ্বোধন করেন ক্রাউন প্রিন্সেস। উদ্বোধনী কার্যক্রম শেষে তিনি চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে হেলিকপ্টার যোগে কয়রা ত্যাগ করেন। ক্রাউন প্রিন্সেসের সফরকালে সুইডেনের Minister for International Development Cooperation and Foreign Trade Mr. Johan Forssell, বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তাঁর সাথে ছিলেন।
এসময় প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আমরা খুবই আনন্দিত যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ও আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরনের জন্য যে কার্যক্রমগুলো হাতে নেয়া হয়েছে সুইডেনের ক্রাউন প্রিন্সেস সেগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার পরিদর্শন ও স্মার্ট ডাক সার্ভিস পয়েন্ট পোস্ট অফিস উদ্বোধন করলেন। সরকার দেশের সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন, তিনশত ১৯টি পৌরসভা ও সকল সিটি কর্পোরেশনে ডিজিটাল সেন্টার চালু করেছে। এসকল সেন্টার থেকে প্রতি মাসে প্রায় এককোটি মানুষ সেবা গ্রহণ করছেন। যার মাধ্যমে আমরা ডিজিটাল সরকার ব্যবস্থা প্রণয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী সারাদেশের আট হাজার ডাকঘরকে মেইল ডেলিভারি সেন্টার থেকে সার্ভিস ডেলিভারি সেন্টারে রূপান্তর করতে চান। তারই অংশ হিসেবে আমরা আজ একটি ডাকঘরকে স্মার্ট সার্ভিস পয়েন্ট অফ পোস্ট অফিস হিসেবে উদ্বোধন করলাম।
এর আগে সকালে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মোঃ ফিরোজ শাহ, বাংলাদেশ পুলিশের খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) জয়দেব চৌধুরী, জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান খুলনার কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের ভিকেএসএ পাঞ্জুগাজী গিলাবাড়ি ইউনাইটেড একাডেমি মাঠের অস্থায়ী হেলিপ্যাডে ক্রাউন প্রিন্সেসকে স্বাগত জানান।