শুক্রবার , অক্টোবর ১৮ ২০২৪

সুন্দরবনে পর্যটক ভ্রমণে ৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : খুলনা উপকূলকে রিমালের তণ্ডব থেকে বাঁচাতে বুক পেতে নিজের ধ্বংস মেনে নিয়েছে সুন্দরবন। ফলে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি মেনে নিতে হয়েছে সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতির। আর এই সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আজ শনিবার (১ জুন) থেকে তিন মাসের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশ বন্ধ রাখা হচ্ছে। এসময় পর্যটক প্রবেশ ও সাধারণ মানুষের চলাচলসহ নদী-খালে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব ও জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি বন বিভাগের বিভিন্ন বন অফিসসহ টহল বোট, টিনের চালা, জানালা-দরজা, সোলার প্যানেল ও অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ সময় জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়ে কটকা অভয়ারণ্যে অফিস ঘাটের জেটি ও পুকুর বঙ্গোপসাগর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দুবলা, কটকা, কোচিখালি, বগিসহ বিভিন্ন বন অফিসসহ ২৫টি টহল ফাঁড়ির রান্নাঘরসহ অবকাঠামোর টিনের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেছে।

বন রক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, জুন থেকে আগস্ট—তিন মাস সুন্দরবনের নদী-খালের মাছের প্রজনন মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এ ছাড়া, এই সময়ে বন্য প্রাণীরও প্রজনন মৌসুম।  তিনি আরও বলেন, ‘সুন্দরবনের অভ্যন্তরে মিঠাপানির পুকুরগুলোও জলোচ্ছ্বাসে লোনা পানিতে তলিয়ে গেছে। সুন্দরবনের ৮০টি মিঠাপানির উৎস পুকুরে ৮-১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে লোনা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বনকর্মীদের পাশাপাশি বাঘ, হরিণসহ বন্য প্রাণীরাও সুপেয় পানির সংকটে পড়েছে। সুন্দরবনের বন্য প্রাণীরা অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়ে মারা যাওয়ারও খবর মিলেছে। তিন মাস বনে পর্যটক ও জেলে না গেলে বনের জীববৈচিত্র্য ও বন্য প্রাণী নিরুপদ্রব থাকবে বলে জানান বন রক্ষক মিহির কুমার দো। ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে সুন্দরবনে প্রাণী ও জীববৈচিত্র্যের যে ক্ষতি হয়েছে, তাও দ্রুত কাটিয়ে উঠবে বলে আশা বন কর্মকর্তাদের।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতের ক্ষতচিহ্ন এখন সুন্দরবনজুড়ে। গাছপালার ক্ষতি তেমন না হলেও বন্যপ্রাণীর ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৯৬টি হরিণের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। কটকা ও কচিখালীতে ক্ষতি সবচেয়ে বেশি। মিষ্টি পানির আধারে লবণ পানি ঢুকে পড়ায়, সেগুলো বৃষ্টির পানি দিয়ে আবারো ভরাট করতে হবে। এছাড়া অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন বিভাগের। সুন্দরবনের এই ক্ষত কাটিয়ে উঠতে লেগে যাবে দীর্ঘ সময়। কটকা অভয়ারণ্যের জামতলা পয়েন্টে পা রাখলেই স্পষ্ট ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব। কিছুদূর এগোলেই চোখে পড়ে মৃত হরিণ। এখানেই পাওয়া গেছে ৩৮টি হরিণের নিষ্প্রাণ দেহ। একই অবস্থা কচিখালীতে। এখানে এবং পাশের সুপতি খাল থেকে অন্তত ১০টি হরিণের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে । উদ্ধার হয়েছে দুটি শুকরের মৃতদেহও । আর এগুলো বনেই রাখা হয়েছে অন্যান্য প্রাণীর খাবার হিসাবে।

This post has already been read 1278 times!

Check Also

ইতালিতে সম্মান সূচক পুরষ্কার পেলেন সিকৃবির ড. ইব্রাহিম খলিল

সিকৃবি সংবাদদাতা: সম্প্রতি ইতালির ইউনির্ভাসিটি অব উদিন থেকে পিএইচডি ডিগ্রি সম্পন্নকারী সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য …