নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের প্রাণিস্বাস্থ্য সেবা খাতের স্বনামধন্য বহুজাতিক কোম্পানি এলানকো বাংলাদেশ লি. হঠাৎ বন্ধ হওয়ার ঘোষণায় বিপাকে পড়েছেন কোম্পানিটির একশ’রও ওপর কর্মকর্তা-কর্মচারিবৃন্দ। জানা যায়, গত ১৮ জুলাই ১১৯ জন কর্মকর্তাকে হঠাৎ চাকুরিচ্যুত করে কো্ম্পানিটি বন্ধ ঘোষণা করে চলতি চলতি মাসের শেষদিন পর্যন্ত (৩১ জুলাই) সময় বেঁধে দেয়া হয়। এতে প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করলে ভারতীয় ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে গত ২৯ জুলাই কর্মকর্তাদের পুলিশি হুমকি দেয়া হয়। গতকাল (৩০ জুলাই) কোম্পানিটির গুলশানস্থ অফিসে সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায়, অফিসটি বাইরে থেকে তালাবদ্ধ এবং কর্মকর্তা কর্মচারিগণ বাইরে দাড়িয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ করছেন।
এলানকো এমপ্লোয়ীস ইউনিয়ন, ঢাকা-বাংলাদেশে উক্ত প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করেন। কর্মকর্তাদের দাবী, বারবার আলোচনায় বসার আহ্বান জানানো হলেও কোম্পানীটির ভারতীয় ম্যানেজমেন্ট এ ব্যাপারে তাদের পাত্তাই দিচ্ছেন না।
এ ব্যাপারে এলানকো বাংলাদেশ লি. এর সেন্ট্রাল সেলস ম্যানেজার মোহাম্মদ শাহজাহান এগ্রিনিউজ২৪.কম কে বলেন, এলানকো এতদিন যাবত বাংলাদেশে গৌরবের সাথে মাথা উঁচু করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল । কিন্তু গত ১৮ই জুলাই হঠাৎ করে বাংলাদেশের তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেয়। এত করে আমরা ১১৯ জন কর্মকর্তা চাকুরিচ্যুত হই। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো বাংলাদেশ থেকে চলে যাচ্ছে তারই ধারাবাহিকতা এলানকোও চলে যাচ্ছে। সে যেতেই পারে কিন্তু আমাদের যে বেনিফিট দেওয়ার কথা সেই বেনিফিট তারা দিয়ে যাচ্ছে না। এলানকোপর গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড আছে সেই স্টান্ডার্ডে আমরা বেনিফিট দাবি জানাচ্ছি। এমনকি তারা যেই প্রক্রিয়াতে কোম্পানিটি টার্মিনেশন করেছে সেটাও প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা চাচ্ছি তারা আমাদের সাথে বসে একটা উইন উইন সিচুয়েশনে সম্মানের সাথে যাক। এলানকোর গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করে আমাদের পাওনাগুলো বুঝিয়ে দিক। আমরা এ ব্যাপারে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।
তিনি বলেন, কোম্পানিটি হঠাৎ বন্ধ ঘোষণায় শুধুমাত্র আমরা ১১৯ কর্মকর্তাই বিপদের পড়িনি, সেই সাথে বিপদে পড়েছে ১১৯টি পরিবার। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে চাকুরি পাওয়াটাও কঠিন। আমরা চাই এলানকো আমাদের সাথে আলোচনায় বসুক, একটি সুষ্ঠু সমাধান দিক। কিন্তু তারা আমাদের সেই অনুরোধ রাখছেন না। আমরা তাদের কাছে শুধু ন্যায় বিচার চাই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এলানকো বাংলাদেশ লিমিটেড এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মো. আল আমিন বলেন এ প্রতিবেদককে বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে বিভিন্ন দেশের মতো এলানকো বাংলাদেশে তাদের লিগ্যাল এনটিটি বন্ধ ঘোষণা করেছে। কর্মকর্তাদের গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী দেনা-পাওনার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এলানকো প্রত্যেকটা দেশের স্থানীয় আইন অনুযায়ী যেসব নিয়ম কানুন আছে সেগুলোকে মেনে চলে। বাংলাদেশের নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে (কর্মকর্তা) যতটা পাওয়ার কথা, তারচেয়ে বরং বেশি দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এলানকোর যদি নিয়ম-কানুন পড়েন এক্ষেত্রে তারা শতভাগ নিয়ম কানুন মেনে চলেছে। কিন্তু মানবিক দিক যদি চিন্তা করা হয়, তাহলে তারা আরো কিছু করতে পারতো।
উল্লেখ্য, ১৯৬৮ সনে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) সিভাগে কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৭৩ সনে বাংলাদেশ সরকারের সাথে যৌথভাবে ব্যবসা শুরু করে। এরপর কোম্পানিটি কিনে নেয় নোভারটিস। অতপর নোভারটিসকে কিনে নেয় এলানকো এবং তারা ব্যবসা করে আসছিলেন।
কর্মকর্তাদের দাবী বাংলাদেশ প্রাণিস্বাস্থ্য সেবা খাতে এলানকো-ই একমাত্র বহুজাতিক কোম্পানি যাদের লিগ্যাল এনটিটি ছিল।