বৃহস্পতিবার , সেপ্টেম্বর ১৯ ২০২৪

চট্টগ্রামে নিত্যপণ্যের বাজারে কমিশন এজেন্টস প্রথা বন্ধের দাবিতে আড়তদার কল্যান সমিতির সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: ক্রয়-বিক্রয় ব্যবসা বানিজ্যের অন্যতম প্রধান কার্যক্রম হলেও নানা স্তরে নানা ধরনের চাঁদাবাজি, খরচের পাল্লাভারী করে নিত্যপন্যের বাজারে মুল্যবৃদ্ধির নানা খাত-উপখাত সৃষ্ঠি করে একটি মহল সাধারন মানুষের জীবন যাত্রাকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। নিত্যপণ্যের বাজারে কমিশন এজন্টেস প্রথার মতো যুগ যুগ ধরে চলমান চাঁদাবাজির মতো ঘটনার কারনে কোন প্রকার বিনিয়োগ ছাড়াই একটি পক্ষ শুধুমাত্র তাদের আড়তে পণ্য রেখে বিক্রি করতে গিয়ে কেজি প্রতি ৬.২৫ টাকা মুনাফা আদায় করছেন, যার পুরো দায় নিতে হচ্ছে দেশের ভোক্তাদেরকে। যার কারনে বগুড়ায় ২০ টাকার বেগুন ঢাকার বাজারে ১০০ টাকায় কিনতে বাধ্য হতে হচ্ছে। ক্যাবসহ ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরও কমিশন এজেন্টস প্রথা, ডিও/স্লিপ প্রথার মতো অবৈধ চর্চার কারণে দেশের ব্যবসা বানিজ্যে একটি চক্র বিপুল অংক হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে দাবি করছেন। আর এই চক্রটি একটা সময় আমদানিকৃত পেয়াঁজ নিয়ে সক্রিয় হলেও তাদের পদাংক অনুসরন করে বর্তমানে আলু, মসলা, সবজিসহ নিত্যপণ্যের অনেকগুলি জায়গায় কোন প্রকার বিনিয়োগ ছাড়াই বিপুল অংক হাতিয়ে নিচ্ছেন। এই কমিশন এজন্টেস ও স্লিপ প্রথা চলমান থাকলে ব্যবসা বানিজ্যে কারসাজি বন্ধ, মধ্যস্বত্তভোগীদের অপতৎপরতা বন্ধ করা যাবে না বলে মত প্রকাশ করে অবিলম্বে দেশ সংস্কারের অংশহিসাবে কমিশন এজেন্টস ও ডিও/স্লিপ প্রথার মতো বিষয়গুলো বন্ধ করে মধ্যস্বত্তভোগীদের অপতৎপরতা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম এর নেতৃবৃন্দ। মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) নগরীর ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বৃহৎ পাইকারী বাজার রেয়াজউদ্দীন আড়তদার কল্যান সমিতির কার্যালয়ে কমিশন এজেন্টস প্রথা বন্ধে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় উপরোক্ত দাবি জানানো হয়।

রেয়াজ উদ্দীন বাজার আড়তদার কল্যান সমিতির সাধারন সম্পাদক ফারুক শিবলীর সঞ্চালনায় ও সমিতির সভাপতি আলহাজ¦ রশিদ আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজউল্যাহ, মুখ্য আলোচক ছিলেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন। আলোচনায় অংশনেন সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন মাহরাফ, ভোক্তা অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার সহকারী পরিচালক নাসরীন আক্তান, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস, যুগ্ন সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম জাহাঙ্গীর, ক্যাব সদরঘাটের সভাপতি শাহীন চৌধুরী, ক্যাব চান্দগাও থানা সভাপতি মোহাম্মদ জানে আলম, ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম মহনগরের সভাপতি আবু হানিফ নোমান, ক্যাব যুব গ্রুপের রাসেল উদ্দীন, রেস্তোরা মালিক সমিতি সভাপতি ইলিয়াছ ভুইয়া, রেয়াজ উদ্দীন বাজার আড়তদার কল্যান সমিতির উপদেষ্টা মোহাম্মদ তারেক, সহ-সভাপতি আলহাজ্ব  কামাল উদ্দীন, আবু তৈয়ব, ক্যাব পাচলাইশের সভাপতি সায়মা হক, আবদুল আওয়াল, ক্যাব সদরঘাটের মোস্তফা কামাল, সদরঘাট থানা হিন্দু বৌদ্ধ, খৃষ্ঠান ঐক্য পরিষদের সভাপতি সুবল দাস প্রমুখ।

মতবিনিময় সভায় আতদার কল্যান সমিতির নেতৃবৃন্দ বৃটিশ আমল থেকে চলমান এজেন্টস প্রথা বহাল রাখার নানা যুক্তি দেখালেও এই যুক্তির পক্ষে জোরালো কোন প্রমান ও আইনগত ভিত্তি দেখাতে পারেন নি। তারা বেপারী ও কৃষকের কাছ থেকে ক্রয়কৃত পণ্যের রশিদ সংরক্ষনের প্রতিশ্রæতি দেন। একই সাথে কৃষিপণ্যের জন্য অগ্রিম দাদন দিয়ে থাকেন বলে দাবি করেন। তবে মূল্য নির্ধারণে তাদের কোন হাত নেই বলে জানিয়ে বলেন চাহিদা ও যোগানে ভিত্তিতে বাজারে দাম নির্ধারিত হয়। কিন্তু ক্যাব ও ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে বাজারে পর্যবেক্ষনের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায় আড়তদাররা এক একটা সময় এক এক ধরনের ভূমিকা পালন করেন। দাম বাড়লেই তারা পণ্যের মালিক হয়ে যান, আবার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন বাজারে অভিযান চালালে তারা শুধুমাত্র গুদাম ভাড়ার অংশ পান বলে দাবি করেন। আর সব দোষ চাপান বেপারী ও কৃষকের ঘাড়ে। তাই আড়তদার ও কমিশন এজন্টেস এই দ্বৈত ভূমিকার কারনে বাজার অস্থির হয়ে উঠে। বাজারে পণ্যের চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা সরবরাহ কমিয়ে দেন। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে অবিলম্বে ব্যবসা বানিজ্যে সংস্কার করে মধ্যস্বত্তভোগীদের অপতৎপরতা বন্ধ করে অবিলম্বে কমিশন এজন্টেস ও স্লিপ প্রথার মতো ব্যবসার বন্ধ করতে হবে। কোন প্রকার ক্রয়-বিক্রয় রশিদ ছাড়া কোন পণ্য বিক্রি করা যাবে না। একই সাথে কৃষকদের মাঝে দাদন বা অগ্রিম টাকা দিয়ে পণ্য কেনা বন্ধ করতে হবে। কৃষকদের মাঝে ক্ষুদ্র ঋনদানকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণের পর্যাপ্ত যোগান নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই এধরনে ফটকা ও জোয়াড়ির মতো কার্যক্রম বন্ধ করে ব্যবসা বানিজ্যে শৃংখলা ফেরানো সম্ভব হবে।

সভায় আরও বলা হয় ছাত্র জনতার গণঅভ্যত্থান পরবর্তী সময়ে সবগুলি পণ্যের দাম কম ছিলো। ঐ সময়টিতে স্থানীয় চাঁদাবাজি না থাকাকে বড় কারণ দেখাণো হলেও কয়েকদিন যেতে না যেতেই আবার চাল, আলু, কাঁচা মরিচ, পেয়াঁজসহ শাক-সবজিসহ সবগুলো নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। তাই ছাত্র-জনতার এই গণঅভ্যত্থানকে সফল করতে বড় করপোরেট হাউসগুলোর একতরফা আধিপত্য বিস্তার বন্ধসহ বিগত সরকারের আমলে তারা কি পরিমান অর্থ লুপাট করেছেন তার অনুসন্ধান ও তাদের অবৈধ রাস্ট্র মেরামতে বিনিয়োগ করার দাবি জানান।

This post has already been read 441 times!