নিজস্ব প্রতিবেদক: বছরখানেক আগেও যে ২০১ জন কৃষিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচারপ্রক্রিয়া স্থগিতের দাবির প্রতিবাদ জানিয়ে স্বাক্ষরসহ বিবৃতি দিয়েছিলেন, সেইসব কৃষিবিদদের কেউ কেউ আবার এখন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রশাসনের সাথে কাজ করার জন্য দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কোন শিক্ষক ভিসি হওয়ার জন্য লবিং পর্যন্ত শুরু করেছেন।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধীতা করে যে সকাল কৃষিবিদ কিছুদিন আগেও নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে ‘শেখ হাসিনার সঙ্গেই আছি’ লিখেছিলেন, তাদের মধ্যেই কেউ কেউ এখন ছাত্র আন্দোলন ও ড. ইউনুস সরকারের প্রশংসা করে ফেসবুক ওয়াল ভাসিয়ে দিচ্ছেন। এতে করে আন্দোলনকারী ও সাধারণ কৃষিবিদদের মধ্যে হতাশা ও চাপা ক্ষোভ বাড়ছে।
এমনকি ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে বিবৃতি দানকারী ৫টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর এখনো বহাল তবিয়্যতে আছেন। তারা হলেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কৃষিবিদ প্রফেসর ড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়া, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. মো. জামাল উদ্দিন ভূঞা, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কষিবিদ প্রফেসর ড. মো. আবুল কাশেম চৌধুরী, কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও কেআইবি’র যুগ্ম মহাসচিব কষিবিদ প্রফেসর ড. একে এম জাকির হোসেন এবং হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কষিবিদ প্রফেসর ড. মো. আবদুল বাসেত।
স্বাক্ষরসহ বিবৃতি প্রদানকারী কৃষিবিদদের তালিকা দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, কিছুদিন আগেই লেজুরবৃত্তি রাজনীতির কারণে প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনূস এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে কোন কোন শিক্ষক আবার সুশীল সেজে তাঁর সুবিধা নিতে তৎপর বলে সামাজিক মাধ্যমে গুঞ্জন উঠেছে। তারা এখন রঙ বদলে, নিজেকে ড. ইউনুসের সমর্থক হিসেবে পরিচয় দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। বিষয়টি খুবই নিন্দনীয় এবং শহীদদের সাথে প্রতারণার শামিল।
উল্লেখ্য গত বছর (৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩) ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচারপ্রক্রিয়া স্থগিতের দাবির প্রতিবাদ জানিয়ে স্বাক্ষরসহ বিবৃতি দিয়েছিলেন দেশের ২০১ জন বিশিষ্ট কৃষিবিদ। সেইসময় গণমাধ্যমে ওই বিবৃতি পাঠান কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের (কেআইবি) দপ্তর সম্পাদক এম এম মিজানুর রহমান।
বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, গত ২৮ আগস্ট কয়েকজন নোবেল বিজয়ী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের সদস্য বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রদত্ত এক খোলা চিঠিতে বাংলাদেশের শ্রম আইনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান মামলা স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন যা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এটি সার্বভৌম একটি দেশের স্বাধীন বিচারব্যবস্থার ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপ। দেশের বিবেকবান নাগরিক হিসেবে আমরা বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়ার ওপর এ ধরনের অযাচিত হস্তক্ষেপের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।
সেখানে আরো বলা হয়, আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই যে, বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন। অতএব আমরা মনে করি, এ ধরনের চিঠি প্রদানের মাধ্যমে বিবৃতিদাতাগণ অনৈতিক, বেআইনি ও অসাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীন বিচারব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপ করেছেন।
এ ধরনের বিবৃতি বা খোলা চিঠি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং বাংলাদেশের আইনে শ্রমিকদের প্রদত্ত অধিকার সংক্রান্ত বিধানাবলির সম্পূর্ণ পরিপন্থি। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, এ ধরনের বিবৃতি ও চিঠি প্রদান করে বিবৃতিদাতা সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ ও নোবেল বিজয়ীগণ প্রকৃতপক্ষে ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পরিপন্থি কাজকেই উৎসাহিত করতে চেয়েছেন।
বিবৃতিদাতারা বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে সবারই আইনি সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচারকার্য বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুসারে ও স্বাধীনভাবে সম্পন্ন হচ্ছে বিধায় তার বিচারিক হেনস্তার অভিযোগ কল্পনাপ্রসূত, অমূলক ও অনাকাঙ্ক্ষিত।
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে ছিলেন, কেআইবির সাবেক মহাসচিব ড. মির্জা এ জলিল, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এম এনামুল হক, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. নূর মোহাম্মদ তালুকদার, সাবেক সভাপতি ও কার্যনির্বাহী সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও কেআইবির কার্যনির্বাহী সদস্য কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ এ কে এম সাইদুল হক চৌধুরী, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও কেআইবির কার্যনির্বাহী সদস্য ড. কামাল উদ্দিন আহম্মদসহ ২০১ জন।