শনিবার , নভেম্বর ২৩ ২০২৪

ডিম-মুরগির যৌক্তিক দাম এবং উৎপাদক-ভোক্তা ভাবনা ও কিছু প্রশ্ন

কৃষিবিদ অঞ্জন মজুমদার : একটা বিষয় পরিস্কার হওয়া দরকার এই মূল্য কোন ভাবেই MRP নয়,এটা প্রান্তিক উৎপাদন খরচের ভিত্তিতে যৌক্তিক মূল্য(সকল স্তরে) নির্ধারণ করা হয়েছে।

যৌক্তিক কেন?
ভোক্তাই শেষ কথা, মুদ্রাস্ফীতির এই সময়ে ভোক্তার স্বস্তি দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

এই যৌক্তিক দাম কিভাবে ঠিক করা হলো?
একজন প্রান্তিক পোল্ট্রি খামারির একটা ডিম উৎপাদনে খরচ কত, তার উপর প্রতি ডিমে ৫০ পয়সা লাভ ধরা হয়েছে এবং প্রতি দুই মাস পর পর এই যৌক্তিক দাম পূন:মূল্যায়ন করা হবে।

ডিমের সাপ্লাই চেইনের হাত বদলে প্রত্যেক স্টেকহোল্ডারের পরিবহন খরচ, ডিম ভাঙা এবং তাঁর লাভ ধরা হয়েছে এবং যৌক্তিকভাবে প্রত্যেককে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে।

ফাইনালি ভোক্তা পর্যায়ে ১১.৮৭-১২.০০ টাকা খুচরা বিক্রয় মুল্য(যৌক্তিক) ধরা হয়েছে।

আমরা যে যার কর্ণার থেকে স্বীয়স্বার্থের বাইরে কথা বলি না, সরকার (প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর) ও স্টেকহোল্ডাররা মিলেই ৮ মাস সময় নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করেই এই যৌক্তিক দামের সিলিং বা স্তর উপস্থাপন করেছে।

এই উদ্যোগে সকলের সাপোর্ট দরকার যা হবে নির্মোহ জায়গা থেকে।

একজন খামারি প্রশ্ন তুলতেই পারেন যখন আমরা ৮-৯ টাকায় ডিম বিক্রি করি তখন আমাদের ক্ষতি কে পুষিয়ে দিবে? যৌক্তিক ও বাস্তব প্রশ্ন।

সরকার যখন ডিম ও মুরগির দামের যৌক্তিক স্তর ঠিক করে দিয়েছে, তখন খামারির সুক্ষরার পথও বাতলে দিবে এবং দিতে খুব দ্রুত অবশ্যই যৌক্তিক উদ্যোগ নিবে, তার জন্য জেলায় জেলায় খামারিদের সংগঠন থাকতে হবে, সরকারের উপর প্রেসার সৃষ্টি করতে হবে যৌক্তিক দাবির পক্ষে এবং নিজেদের সুরক্ষার জন্য।

এখন দরকার খাদ্য ও বাচ্চা উৎপাদনকারীদের জন্য যৌক্তিক দামের স্তর ঠিক করে দেওয়া,যা হবে উৎপাদন খরচ ও যৌক্তিক লাভ ধরে, যা খুব দ্রত সময়ে প্রজ্ঞাপন আকারে আসতেছে (আগামী সপ্তাহে স্টেকহোল্ডারদের সাথে মিটিং আছে)

এই মুহুর্তে সরকার আন্তরিক আমদানি করা পোল্ট্রি খাদ্য( র মেটেরিয়াল) উপাদানের উপর সকল ট্যাক্স ভ্যাট যদি এখনো বলবৎ থাকে,সেটা জিরো করে দেওয়ার জন্য, খাদ্য বাচ্চার স্থানীয়ভাবে যদি উৎপাদন ও বিক্রি পর্যায়ে কোন ভ্যাট থাকে তা নিয়েও সরকার সক্রিয় বিবেচনা করছে।

সরকার খাদ্য বাচ্চা ডিম মুরগী বিক্রেতা সবাইকে প্রানী সম্পদ অধিদপ্তর এর নিবন্ধন এর আওতায় নিয়ে আসতে যাচ্ছে( ইতিমধ্যে সিধান্ত চুড়ান্ত পর্যায়ে আছে), যা সরকারের স্থিতিশীল পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ গড়ে তোলার আন্তরিকতার বর্হিপ্রকাশ। সব কিছুর মূলে বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং  মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা মহোদয়গনের আন্তরিক উদ্যোগ;  দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে ডিম মুরগির উৎপাদন খরচ কমিয়ে ডিম মুরগির দামে সারা বছর একটি স্থিতিশীল বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং উৎপাদন ও বিপনন স্তরে যুক্ত সকলের যৌক্তিক  লাভ  প্রাপ্তি নিশ্চিত করা।

পোল্ট্রিতে চাহিদা ও যোগানের ঘাটতির সুযোগে নানা স্তরে অতিমুনাফা করার সুযোগ সন্ধানী স্টেকহোল্ডার এর অভাব নাই, তবে সরকার এবার কঠোর হচ্ছে-  পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ/শিল্পের সকল স্তরে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর ও ভোক্তা অধিদপ্তরের সমন্বয়ে নজরদারি তে নিয়ে আসার।

স্টেকহোল্ডারদের কাজ হবে নিজেদের স্টেকের(গোষ্ঠীর) স্বার্থে সরকারের সাথে বার্গেনিং করা, সরকারের পোল্ট্রি শিল্পের নীতি কৌশলকে বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা, উৎপাদন খরচ কমিয়ে উৎপাদন বাড়ানোর দক্ষতা অর্জন করা, পরিশেষে ভোক্তার জন্য প্রতিযোগিতা মূলক দামে গুনগত মানের ডিম ও মুরগী উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া এবং নিজেদের লাভের নিশ্চয়তা সৃষ্টি করা।

বর্তমানে ডিমের দামের উস্ফলন মানে এই সেক্টরে কর্পোরেট বিনিয়োগকারীদের ডেকে নিয়ে আসা, ইতিমধ্যে আমাদের বিশ্লেষণে দেখেছি প্রান্তিক উৎপাদনকারী থেকে হাইটেক পোল্ট্রি হাউজে প্রতি ডিমে ৪০-৫০ পয়সা উৎপাদন খরচ কম পড়ে।

প্রতি ১০০ টি প্রান্তিক পোল্ট্রি খামার বন্ধ হওয়া মানে একটি নতুন কর্পোরেট কোম্পানির এই খাতে আগমনের সুযোগ করে দেওয়া৷ অথচ পোল্ট্রি শিল্পই একমাত্র শিল্প যা গ্রামীণ অর্থনীতিতে অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি ও বেশি মানুষের অংশগ্রহণ/সংযুক্তিতে লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানের একমাত্র শিল্প খাত, অন্য প্রচলিত শিল্প খাতের এই সুযোগ নাই।

পরিশেষ, একটি উৎপাদনকারী ও ভোক্তা বান্ধব পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ /শিল্প গড়ে তোলার বিকল্প নাই।

লেখক: ই সি মেম্বার, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন (বিপিআইএ); আহবায়ক, ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড এন্ড সাপ্লাই চেইন উইং; সমন্বয়ক, পিপিবি।

This post has already been read 1262 times!

Check Also

ডিম ও মুরগির বাজার স্থিতিশীলতায় দরকার  “জাতীয় পোল্ট্রি বোর্ড” গঠন

কৃষিবিদ অঞ্জন মজুমদার : পোল্ট্রি শিল্পের সাথে আন্ত:মন্ত্রনালয়, আন্ত:অধিদপ্তর  এবং উৎপাদন ও বিপননে ডজনের উপরে …