বুধবার , ডিসেম্বর ২৫ ২০২৪

ডিমের বাজার কেন অস্থিতিশীল?

কৃষিবিদ অঞ্জন মজুমদার: সাম্প্রতিক কালে দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে অতি বৃষ্টি ও তার প্রভাবে স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড়ি ঢল ও বন্যার ১২ জেলার প্রায় ১০ হাজার পোল্ট্রি খামারির মুরগী ভেসে গেছে, অবকাঠামো পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।

কই আজও পর্যন্ত তো শুনি নাই -এই খামারিদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ নিয়ে তাঁদের দ্রুত উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ফেরত আনার জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অথচ, দেশের ডিমের প্রায় ৩০% মুরগির ৪০% সরবরাহকারী উক্ত জেলাগুলো।

দেশে প্রতিদিন আমিদানির ডিম ঢুকছে, আমদানির ডিমের ঝাল বুঝতে বেশি দিন লাগবে না, প্রান্তিক খামারি হারিয়ে গেলে কর্পোরেট ডিমের দাম কিন্তু অনেকের সাধ্যের মধ্যে থাকবে না। প্রান্তিক খামারিদের পাশে দাঁড়ান, ডিমের দাম এমনিতেই কমে যাবে।

খামারিদের লাগবে স্বল্প সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ, লাগবে চলতি ঋণের সুদ মওকুফ, লাগবে রানিং লোনের কিস্তি দুই বছরের জন্য ব্লক একাউন্টে নেওয়া।

অতি লোভ কখনোই ভালো নয়, ডিম আমদানি চালু করতে উৎসাহিত করতে সরকারের যৌক্তিক দামের উপরে যার যার মতো ডিম বিক্রি প্রবণতা প্রধান কারণ বলে মনে করছি । যৌক্তিক দামে সকল স্টেকহোল্ডারদের খরচের পরে বিভিন্ন ধাপের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। এরপরও ডিম এখন প্রতিদিন আমদানি হয়ে আসছে, নতুন করে আমদানির অনুমতিও দেয়া হচ্ছে। ফলে, ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদে প্রান্তিক (লেয়ার) খামারিদের অবস্থা আরো খারাপ হবে।

ডিম আমদানি সামনে যে প্রশ্নগুলো আসবে
দেশে আমদানির ডিম আসা শুরু হয়েছে, ভোক্তা খুশি হবে এটাই স্বাভাবিক। তারা আশা করেন, কম দামে ডিম পাবে এবং ডিমের দাম ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আসবে। কিন্তু এরপরেও কিছু প্রশ্ন থেকে যায়-

  • দেশের লাখ লাখ খামারি এবং তার সাথে যুক্ত প্রায় ৬০ লাখ মানুষের কর্মচ্যুতি হলে আমাদের এই মানুষগুলোর কর্মসংস্থানের বিকল্প কি হবে?
  • দেশি খামার বিলুপ্ত হলে, আমাদানির ডিম কি কম দামে ভবিষ্যতেও কি পাওয়া যাবে?
  • স্থল বন্দরে ডিম বাহিত রোগের টেস্ট করার সুযোগ না থাকার কারণে দেশি ফার্মগুলো আমদানি ডিমের মাধ্যমে বার্ড ফ্লু সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যাবে, যা দেশের পোল্ট্রি ফার্মিং এ নতুন করে বিপর্যয় নিয়ে আসবে, অনেক খামারি পূঁজি হারিয়ে দেউলিয়া হবে।
  • দেশে পোল্ট্রি ফিডে মিট এন্ড বোন মিল ব্যবহার নিষিদ্ধ (বোভাইন এমবিএম ছাড়া) বিদেশ থেকে আনা ডিমের মুরগির খাদ্যে এমবিএম ব্যবহার করা হয়েছিল কিনা, করলে কোন ধরনের এম বি এম ব্যবহার হয়েছিল তা জানার সুযোগ নাই, যা আমাদের পোল্ট্রি নীতিমালার পরিপন্থি।
  • বাংলাদেশে পোল্ট্রি খাদ্যে গ্রোথ প্রমোটর হিসাবে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার ও আমদানি নিষিদ্ধ। আমাদানি করা ডিমের মুরগী পালনে খাদ্যে গ্রোথ প্রমোটর হিসাবে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়েছিল কিনা ভোক্তার জানার সুযোগ নাই। যদি ব্যবহার করা হয় তা জনস্বাস্থ্যের জন্য অনেক ঝুঁকি সৃষ্টি করবে ( এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট) কারণে ডিমের মাধ্যমে এন্টিবায়োটিক এর অবশিষ্টাংশ মানব দেহে চলে আসতে পারে।
  • পরিবর্তনের সরকার ও জনবাসনা হলো দেশীয় পোল্ট্রি উৎপাদন ব্যবস্থায় উৎপাদন খরচ কমিয়ে দেশে ডিম উৎপাদন বাড়ানো ও আমদানি নির্ভরতা কমানো,নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি।

নীতিনির্ধারণী মহল ও আপামর সাধারণ বিষয়গুলোর প্রতি সুবিবেচনাপ্রসূত বক্তব্য, মতামত ও নীতি কৌশল গ্রহন করার বিনীত অনুরোধ।

খামারিদের উদ্দেশ্যে বলছি, জেলায় জেলায় খামারিরা একতাবদ্ধ হউন, নিজেদের দাবি যথাযথ কর্তৃপক্ষ কে জানান, দাবি আদায়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিন।

পাদটীকা: যে দেশে তেলের দাম থেকে ঘি সস্তা সেদেশ অত ভাল দেশ নয় ( প্রাচীন প্রবাদ)

লেখক:

  • পোল্ট্রি সাপ্লাই চেইন স্পেশালিষ্ট;
  • ই সি মেম্বার, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন (বি পি আই এ)
  • সমন্বয়ক, পিপিবি।

This post has already been read 2893 times!

Check Also

জেলা প্রশাসন কঠোর হলে সারাদেশেই এক দরে ডিম বিক্রি সম্ভব

এগ্রিনিউজ২৪.কম: জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উদ্যোগ ও করপোরেট খামারিদের সহযোগিতায় রাজধানীতে ডিমের মূল্য অনেকটাই …