মঙ্গলবার , অক্টোবর ১৫ ২০২৪

অর্থনীতির চলমান ধীরগতি দেশে মন্দা ডেকে আনতে পারে

 রাজধানী সংবাদদাতা: বর্তমানে রাজস্ব নীতির (ফিস্কাল পলিসি) মাধ্যমে যেই পদক্ষেপই গ্রহণ করা হোক না কেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে কোন উল্লেখযোগ্য ফলাফল পাওয়া যাবেনা। কারণ রাতারাতি এই পরিবর্তন সম্ভব নয়।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর লালমাটিয়ায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল রিসার্চ (বিআইএসআর) ট্রাস্ট অফিসে আয়োজিত “বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা এবং এগিয়ে যাওয়ার উপায়” শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এই মন্তব্য করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ড. মনজুর হোসেন।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে অর্থনীতি যে ধীর গতিতে চলছে তাতে মন্দা হতে পারে। সরকারি খরচ কমলেও, মূলত সরকারি, বেসরকারি বিনিয়োগ অনেকাংশেই কমে গেছে।

“জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আলাদা কোন গবেষণা সেল (শাখা) নেই। তারাই পলিসি তৈরি করে, আবার তারাই বাস্তবায়ন করে। সে কারণেই সুফল নেই,” মনজুর যোগ করেন।

আর বাংলাদেশের ট্যাক্স-জিডিপি’র অনুপাত দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম। তাই বর্তমানে আমাদের যে ট্যাক্স পলিসি (নীতি) আছে তা বেশিদিন টেকসই হবে না।

বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নগদ অর্থের ব্যবস্থা করে দিয়ে ভঙ্গুর ব্যাংকগুলোকে লিকুইডিটি সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করছে। তারপরও ব্যাংকগুলোকে সুস্থ করা কষ্ট হয়ে যাবে। বিগত সরকারের আমলে অর্থনৈতিক নীতিই ছিল না। সে কারণেই আশেপাশের দেশগুলো যেখানে মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে এনেছে আমরা সেখানে পারছি না। একমাত্র মুদ্রানীতি দিয়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে না। মুদ্রানীতিতে অতি উচ্চ হার বসালেও শিল্প, বাণিজ্য সব ক্ষেত্র ধসে পড়বে বলে মন্তব্য করেন, ড. মনজুর হোসেন।

রিজার্ভ ২৫-৩০ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে থাকলেই চলে। একসময় ৪৮ বিলিয়ন পর্যন্ত উঠেছিল কারণ করোনা পরবর্তী সময়ে তখন আমদানী করা যায়নি। তখন রপ্তানির অবস্থাও ভাল ছিল। এছাড়াও বর্তমানে তিনি গুণগত মানসম্পন্ন বিনিয়োগে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন।

বিআইএসআর ট্রাস্টের রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট মুনেম আহমেদ চৌধুরির এক প্রশ্নের জবাবে, ড. মনজুর আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংককে সায়ত্ত্বশাসন দিলেও এই ধরণের ক্ষমতার দায়িত্বপালন জরুরী। সেক্ষেত্রে সায়ত্ত্বশাসনের আওতায় নিরপেক্ষভাবে গভর্নরকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তদবির করা চলবে না।

বিআইডিএস এর গবেষণা পরিচালক আরও বলেন, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোও দায়িত্বশীল নয়। প্রয়োজনে যথাযথ তথ্য পাওয়া যায় না।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইএসআর ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ড. খুরশিদ আলম। তিনি বলেন, কোন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য, বা কোন বিষয়ের সঠিক অবস্থা সম্পর্কে জানার জন্য আমাদের প্রয়োজন তথ্য (ডাটা)। বিগত সরকারের অনেক তথ্য উপাত্তকে অনেকেই এখন ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন। তাহলে এখনো কেন মানুষ সরকারি তথ্যের ওপর ভরসা করবে? এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জাবাবদিহিতা অত্যন্ত জরুরী।

ড. খুরশিদ আরও বলেন, যমুনা সেতু, পদ্মা সেতু ও কর্ণফুলী টানেল, এই সবগুলো মেগা প্রজেক্টের ক্ষেত্রেই সাধারণ একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়। আর তা হল দুর্বল পরিকল্পনা। অথচ কর্ণফুলী টানেলে ব্যয় না করে কর্ণফুলী সেতুতে ব্যয় করলে উপকার হত কিনা, প্রশ্ন করেন সমাজবিজ্ঞানী ড. খুরশিদ আলম।

বিআইএসআর ট্রাস্টের সিনিয়র রিসার্চার (জেষ্ঠ্য গবেষক) ড. মো: মুরাদ আহমেদ বলেন, পুঁজি বাজারকে সক্ষম করে গড়ে তুলতে পারলে বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস ফিরে আসবে। মানুষ তখন বিনিয়োগ করবে এতে করে লাভ্যাংশ ও বিনিয়োগে বৈচিত্র্য আসবে। দেশের অর্থনীতিতে এমন কিছু কার্যসম্পাদনের সংযুক্তি (ইনস্ট্রুমেন্ট ইনপুট) ঘটাতে পারলে মুদ্রাস্ফীতি কমে আসবে ও অর্থনীতি সুদৃঢ় অবস্থানের দিকে ধাবিত হবে।

দি হাঙ্গার প্রজেক্টের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো একেএম রিয়াজ উদ্দিন বলেন, মাদকগ্রহণকারীর মাদক বন্ধ করে দিলে তার মধ্যে যেমন কিছু অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দেয়, ঠিক তেমনি অর্থনৈতির অনিয়মগুলো একসাথে পরিবর্তন করতে গেলে অস্বাভাবিকতা দেখা দিবে। তাই ধৈর্য্য ধরে টেকসই সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

আলোচনার ভিত্তিতে মতামত জানানোর সময় বিশিষ্ট শিল্পপতি স্বপন কুমার দাস বলেন, আগের চুক্তি অনুযায়ী একটি ঋণ চুক্তিতে কোটি টাকার ওপর ক্ষতি। এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা বিরাট বিপদের সম্মুখীন হচ্ছেন। আমরা দেখছি কাজে নয়, কথায় চলছে সব। দ্রুত এই পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণ ঘটাতে না পারলে, বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারাবে। অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়বে।

অল বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট গ্রুপের প্রধান ড. মোহাম্মদ ইয়াকুব, আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে গবেষণার গুরুত্বের বিষয়ে মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ও উন্নয়ন সংস্থার কর্মী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও বিআইএসআর ট্রাস্টের গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন।

বিআইএসআর ট্রাস্ট একটি বেসরকারি অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সংস্থা এবং দেশের একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক। সামাজিক ন্যায়বিচার, উন্নয়ন, এবং মানবাধিকারসহ বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ের ওপর গবেষণা, প্রচার ও সহায়তায় আমাদের ফোকাস। বিআইএসআর ট্রাস্ট সামাজিক পরিবর্তন এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনের মান উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করে। আমাদের কাজ গবেষণা পরিচালনা, শিক্ষামূলক সহায়তা প্রদান, এবং নীতি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অ্যাডভোকেসি করা।

This post has already been read 126 times!

Check Also

জমকালো আয়োজনে প্রথমবারের মতো ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ঢাকা চায়না ডে ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৪৯তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার …