বাকৃবি (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা: ফিডের জন্য অনেক ইনগ্রেডিয়েন্টস আমদানি করতে হয়। ফিড যদি নিরাপদ না হয় তাতে যদি এন্টিবায়োটিক থাকে আমাদের শরীরও নিরাপদ থাকবেনা। নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ এখন সময়ের দাবি এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
আজ শনিবার (২৬অক্টোবর) সকালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সৈয়দ নজরুল ইসলাম কনফারেন্স হলে বিশ্ব ডিম এবং বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০২৪ উদযাপন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সোসাইটি ফর সেফ ফুড কর্তৃক আয়োজিত “খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জাতীয় প্রযুক্তিগত সেমিনারে” উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এসব কথা বলেন। সেমিনারে প্রধান অতিথি সেফ ফুড ডাইজেস্টের মোড়ক উন্মোচন করেন এবং উপদেষ্টাকে বাংলাদেশ সোসাইটি ফর সেফ ফুড কতৃক ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
উপদেষ্টা বলেন, দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়েনি, বেড়েছে ধান ও চালের। খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নটি এখন অনেকভাবেই আলোচিত হচ্ছে। ষাটের কিংবা সত্তুর এর দশকে এক সময় বলা হতো সবুজ বিপ্লবের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করা যাবে। পরবর্তীতে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্হা-শুধু খাদ্য উৎপাদন নয় খাদ্য নিরাপত্তার কথা বলে আসছে। তিনি ধানে ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহারের ফলে স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতির কথা বলেছেন।
মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও কৃষিতে হার্বিসাইড বন্ধের আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন হার্বিসাইড ব্যবহারের ফলে গরু-ছাগল মারা যাচ্ছে আর এটা বন্ধ না করলে কোন অবস্হাতেই আমরা সুস্হ ও নিরাপদ থাকতে পারবোনা। তিনি বলেন, খাদ্য উৎপাদনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় ও মাত্রাতিরিক্ত বালাইনাশক, এন্টিবায়োটিকস, হরমোন, রাসায়নিক দ্রব্য ইত্যাদি ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, খাদ্য নিরাপদতা ছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা সম্ভব নয়। খাদ্য নিরাপদতা সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। খাদ্য অনিরাপদতায় মাটি, পানি, জলবায়ু, পরিবেশের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে যা চাইলেই রাতারাতি উন্নতি সম্ভব নয়। খাদ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ, পরিবহন, বিপনন, সংগ্রহ, রন্ধন, ভক্ষণ ও পারসোনাল হাইজিন ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রত্যেকটি মানুষকে সচেতন থাকতে হবে। খাদ্য নিরাপদতার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তরে বিদ্যমান আইন, ও বিধি-বিধান গুলোকে স্টেকহোল্ডাদের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে আপডেট ও বাস্তবায়ন করা। একই ভাবে AMR ও AMU ইস্যুতে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেও অনেক বড় দায়িত্ব পালন করতে হবে। এই প্রসঙ্গে ওয়ান হেল্থ এপ্রোচ খুবই প্রাসঙ্গিক বলে মনে করেন বক্তারা ।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মো: খালেদ হোসেনের সভাপতিত্বে চিফ প্যাট্রন হিসেবে বক্তব্য রেখেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ কে ফজলুল হক ভূঞাঁ, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রেখেছেন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড.কাজী রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কতৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো: জাকারিয়া, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক, আইইডিসিআর এর পরিচালক প্রফেসর ডা.তাহমিনা শীরিন, গেস্ট অব অনার হিসেবে বক্তব্য রেখেছেন বিপিআইসিসি এর প্রেসিডেন্ট শামসুল আরেফিন এছাড়া অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন প্রফেসর ড.মো: মাহমুদুল হাসান শিকদার প্রমুখ।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সোসাইটির জেনারেল সেক্রেটারি ডা. মোহাম্মদ সরোয়ার জাহান। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সেমিনার বাস্তবায়ন কমিটির কনভেনার প্রফেসর ড. মো. বাহানুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন সোসাইটির প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. মো. খালেদ হোসেন। পুরো সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন সেমিনার বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব প্রফেসর ড. কেএইচএম নাজমুল হোসাইন নাজির।
উল্লেখ্য সেমিনারে ৪টি সেশন ছিলো। সকাল ৮:০০ থেকে শুরু করে বিকেল ৫:৩০ পর্যন্ত চলে। দুটো টেকনিক্যাল সেসনে মোট ৪ টা পেপার উপস্থাপিত হয়। ছিলো পোস্টার সেসন ও কুইজ প্রতিযোগিতা। ক্লোজিং সেসনের প্রধান অতিথি ছিলেন প্রফেসর ড. মো. শামসুল আলম। এছাড়াও সেমিনারে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, জেলা প্রশাসক ময়মনসিংহ, বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি, পেশাজীবি, স্টেকহোল্ডার, গবেষক ও শিক্ষক মন্ডলী, এমএস ও পিএইচডি তে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ সহ প্রায় তিন শতাধিক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও আজ বিকালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ময়মনসিংহের বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন। উপদেষ্টা বিলুপ্তপ্রায় মাছকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণে লাইভ জিন ব্যাংকের মাধ্যমে বিজ্ঞানীদের আরও গবেষণা কাজ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। এর আগে উপদেষ্টা বিএফআরআই-এ বৃক্ষরোপণ করেন। বিএফআরআই এর মহাপরিচালক ড.অনুরাধা ভদ্র, ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম, ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মো. আজিজুল ইসলামসহ বিএফআরআই এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।