নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতিদিন জনসংখ্যা বাড়লেও কমছে আবাদি জমি। ২০৫০ সাল নাগাদ ডিম, দুধ, মাংসের চাহিদা বর্তমানের প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি হবে। প্রায় ২২ কোটি মানুষের এ বিশাল চাহিদা পূরণ করতে হলে স্বল্প জমি ব্যবহার করে অধিক খাদ্য ও পুষ্টি উৎপাদন করতে হবে এবং সেজন্য পোল্ট্রি বিষয়ক আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তির সম্মিলন ঘটাতে হবে। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আগামী ১৮-১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে রাজধানীর রেডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে “১৩তম আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি সেমিনার” এবং ২০-২২ ফেব্রুয়ারি পূর্বাচলের বাংলাদেশ চাইনা ফ্রেন্ডশীপ এক্সিবিশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে “১৩তম আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শো”। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে গণমাধ্যমের জেষ্ঠ্য সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় এ ঘোষণা দেন “ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স এসোসিয়েশন- বাংলাদেশ শাখা” (ওয়াপসা-বিবি) -এর সভাপতি মসিউর রহমান।
জনাব মসিউর বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশে প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি ডিম, সপ্তাহে ২ কোটি একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চা এবং বছরে প্রায় ৭৫-৮০ লাখ মেট্রিক টন ফিড উৎপাদিত হচ্ছে- যা মাত্র তিন দশক আগেও ছিল কল্পনাতীত। সরকার ২০৪১ সাল নাগাদ বছরে মাথাপিছু ডিমের প্রাপ্যতা ২০৮টি, দুধের দৈনিক প্রাপ্যতা ৩০০ মি.লি এবং মাংসের দৈনিক প্রাপ্যতা ১৬০ গ্রামে উন্নীত করতে চায়। অর্থাৎ বর্তমানের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ উৎপাদন বাড়াতে হবে। পোল্ট্রি বিজ্ঞান সম্পর্কে আধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তি ছাড়া এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। আমাদের এবারের আয়োজনের লক্ষ্যই হচ্ছে সে সক্ষমতা অর্জনে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের খামারিদের সাহায্য করা। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশে আধুনিক পোল্ট্রি শিল্পের যাত্রা শুরু হয়েছিল ওয়াপসা-বিবি আয়োজিত “আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শো”র হাত ধরে। ১৩তম আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শো ও সেমিনারকে সফল করতে গণমাধ্যম কর্মীদের সহায়তা চান জনাব মসিউর।
ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. বিপ্লব কুমার প্রামাণিক বলেন- যে কোন কিছু খেলেই হবে না; খাদ্যকে অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ হতে হবে। যেহেতু আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ মধ্যম আয়ের; সে কারণে ডিম কিংবা মুরগির মাংস কিভাবে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা যায় সে লক্ষ্যে অবিরাম কাজ করছে ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখা।
পোল্ট্রি শিল্পের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরতে “সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অব পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রি ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক নিবন্ধ উপস্থাপন করেন ‘বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল” (বিপিআইসিসি) এর সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য মতে, বিগত ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পোল্ট্রি শিল্পের লক্ষণীয় অগ্রগতি হয়নি বরং মাঝে উৎপাদন কমেছিল। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সবচেয়ে সস্তার প্রাণিজ আমিষ তৈরি করছে। যুক্তরাষ্ট্রে এক বছরে ডিমের দাম ১৫০ শতাংশ বেড়েছে। আজকের দিনে ভারতেও ডিমের দাম ১০ টাকার ওপরে। বিশ^ব্যাপী ফুড ইনফ্লেশন বেড়েছে। সে কারণে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পে চরম অস্থিরতা বিরাজ করেছে। ডিম, মুরগি, বাচ্চার দাম বারবার ওঠানামা করেছে। এ খাতকে টেকসই করতে হলে মার্কেট স্ট্যাবিলিটি আনতে হবে। উৎপাদন বাড়াতে হবে কিন্তু একই সাথে পরিবেশ রক্ষায়ও নজর দিতে হবে।
গণমাধ্যমের জেষ্ঠ্য সাংবাদিকরা বলেন, পোল্ট্রি শিল্পের সংকট নিয়ে গণমাধ্যমের সাথে তথ্য আদান-প্রদান জরুরি ছিল। তথ্য ঘাটতির কারণে পুরো পরিস্থিতি সম্পর্কে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। তাঁরা বলেন, সাশ্রয়ী মূল্যের ডিম ও ব্রয়লার মুরগি নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য সরকার ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের একসাথে বসে দ্রুত করণীয় নির্ধারণ করা প্রয়োজন। তবে এর পাশাপাশি ইন-ডেপথ রিপোর্টের ঘাটতিকেও প্রকৃত ঘটনা সামনে না আসার জন্য দায়ী বলে মনে করেন কেউ কেউ। তাঁরা বলেন, গণমাধ্যমের সাথে আস্তার সম্পর্ক তৈরি করতে হবে এবং তথ্যের দ্বিমুখী প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।
মতবিনিময় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন, ১৩তম আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শো ও সেমিনার মিডিয়া সাব-কমিটির সদস্য সচিব ডা. বিশ্বজিৎ রায়।