চবি সংবাদদাতা: বাংলাদেশের সমুদ্রসম্পদের টেকসই ব্যবহার, সমুদ্রবিজ্ঞান চর্চা ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরীর প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করে ১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে দেশের প্রথম সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ক উচ্চ শিক্ষার যাত্রা শুরু হয় ‘মেরিন বায়োলজী’ বিভাগের মাধ্যমে। পরবর্তীতে, ১৯৮৩ সালে বিভাগটির কলেবর বৃদ্ধি পেয়ে এটি ‘ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস’ নামে একটি স্বতন্ত্র শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে রূপান্তরিত হয়। প্রতিষ্ঠার ৫০ বছরে, এই ইনস্টিটিউট আধুনিক সমুদ্রশিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের গঠন ও গতিপ্রকৃতি, মৎস্য ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবস্থাপনা ও চাষ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উপকূলীয় জীবন-মান সম্পর্কিত নতুন জ্ঞান সৃষ্টিতে একটি ‘সেন্ট্রার অব এক্সেলেন্স’ হিসেবে অবদান রেখে চলেছে। এতদসম্পর্কিত জ্ঞান বাংলাদেশের সুনীল অর্থনীতির লক্ষ্য নির্ধারণ ও সক্ষমতা অর্জনে নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, যা নিম্নে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:
১. দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি: সমুদ্রসম্পদের ধরণ, মজুত নিরুপন, আহরণ, সুষ্ঠু ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক বহুমুখী জ্ঞান অর্জন ও তার ব্যবহারিক প্রয়োগের উদ্দেশ্যে যুগপোযোগী পাঠ্যসূচি প্রণয়ন এবং গবেষণার মাধ্যমে এই ইনস্টিটিউট দক্ষ জনবল তৈরীতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে আসছে। অত্র ইনস্টিটিউট ‘মেরিন সায়েন্স’ বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী ও সমুদ্রবিজ্ঞান সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়ে (মেরিন সায়েন্স, মেরিন ফিশারিজ, অ্যাকুয়াকালচার, সামুদ্রিক পরিবেশ ব্যবস্থাপনা, ফিশ নিউট্রিশন অ্যান্ড ফিড টেকনোলজি, সি-ফুড টেকনোলজি ইত্যাদি) স্নাতকোত্তর (এমএস, এমফিল, পিএইচডি) ডিগ্রী প্রদান করে থাকে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এই ইনস্টিটিউট নানা স্তরের সমুদ্রবিষয়ক জ্ঞানচর্চা ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম সহ¯্রাধিক দক্ষ মানবসম্পদ তৈরী করেছে, যারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ইনস্টিটিউট ইত্যাদি), সরকারি মন্ত্রণালয়/অধিদপ্তর (মৎস্য অধিদপ্তর, বন ও পরিবেশ অধিদপ্তর, নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর ইত্যাদি), বাংলাদেশ নৌবাহিনী (হাইড্রোগ্রাফি শাখা) ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (খুলনা বিশ^বিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি) এবং দাতা সংস্থা/এনজিও (এফএও, ইউএনডিপি, ওয়ার্ল্ড ফিশ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ইত্যাদি) সহ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে সমুদ্রবিষয়ক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
২. সমুদ্রবিজ্ঞান গবেষণা: সমুদ্র গবেষণার গোড়াপত্তনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস সমুদ্রবিজ্ঞানে ১৫০০টিরও অধিক মৌলিক গবেষণা সম্পাদনের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রযুক্তিনির্ভর পরিবেশবান্ধব উদ্ভাবনী কার্যক্রমের মাধ্যমে সুনীল অর্থনীতি প্রসারে বহুমুখী গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তৎমধ্যে (ক) বঙ্গোপসাগরের গতিবধি পর্যবেক্ষণ ও ইকোসিস্টেম মডেলিং; (খ) সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় জীববৈচিত্রের পরিবর্তন ও আর্থসামাজিক প্রভাব নিরুপন; (গ) সুনীল অর্থনীতির প্রসারে মেরিকালচার প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও উন্নয়ন; (ঘ) পরিবেশবান্ধব চিংড়ির রোগ ব্যবস্থাপনা এবং মেরিন বায়োটেকনোলজির প্রয়োগ; (ঙ) মেরিন স্পেশাল প্ল্যানিং (এমএসপি) তৈরিতে বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও উপস্থাপন; (চ) সামুদ্রিক পরিবেশের অবস্থা নিরূপণ এবং দূষণ তথা মাইক্রোপ্লাস্টিক উপস্থিতি মূল্যায়ন; (ছ) উপকূলীয় অঞ্চল ও সমুদ্রসম্পদ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য।
মহান মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ক্ষুধামুক্ত দেশ গঠনে সমুদ্রসম্পদ নির্ভর খাদ্য উৎপাদনে এই ইনস্টিটিউটের ভূমিকা অপরিসীম। সামুদ্রিক চিংড়ি, কাঁকড়া, সী-উইড, শামুক ও ঝিনুক চাষের বেশিরভাগ প্রচলিত প্রযুক্তি এই ইনস্টিটিউটের গবেষকদের উদ্ভাবিত, যা বর্তমানে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানী খাতে রূপান্তরিত হয়েছে। বাগদা চিংড়ির বাণিজ্যিক উৎপাদনে আধা নিবিড় ও নিবিড় চাষ, প্রজনন কৌশল, আধুনিক হ্যাচারীর কৌশল ও চিংড়ি প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রযুক্তিসমূহ ইনস্টিটিউটের ছাত্র-শিক্ষকের যৌথ গবেষণার ফসল, যা দেশে সামুদ্রিক মৎস্য উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়া, দেশের প্রথম কাঁকড়া, আর্টিমিয়া, সী-উইড এবং ঝিনুক (ওয়েষ্টার, মাসেল) চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কৃতিত্বও এই ইনস্টিটিউটের। সাম্প্রতিক সময়ে এই ইনস্টিটিউটের শিক্ষক, গবেষক ও গ্র্যাজুয়েটদের উদ্ভাবিত নানা উন্নত প্রযুক্তি সুনীল অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে । যা প্রতিফলিত হয়েছে ২০১৬, ২০২১ ও ২০২২ সালে “জাতীয় মৎস্য পুরস্কার” এবং ২০১৬ ও ২০১৭ সালে “ইউজিসি স্বর্ণপদক” প্রাপ্তির মাধ্যমে। এছাড়াও পরিবেশ বিষয়ক শিক্ষা, গবেষণা ও প্রচারের ক্ষেত্রে অনবদ্য অবদানের জন্য ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস চট্টগ্রাম বিভাগীয় “পরিবেশ সম্মাননা পদক ২০১৪” – এ ভূষিত হয়। বর্তমানে, মেরিকালচার উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতায় একাধিক গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে জীবন-মান উন্নয়নে নতুন মেরিকালচার প্রযুক্তি উদ্ভাবনের লক্ষ্যে দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় এলাকায় সামুদ্রিক মাছ (কোরাল, খরুল বাটা, দাতিনা), সী-উইড, ঝিনুক (ওয়েষ্টার, মাসেল) ও কাঁকড়ার সম্বলিত চাষ তথা আই.এম.টি.এ প্রযুক্তির পরীক্ষামূলক গবেষণা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এই প্রকল্প থেকে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সুনীল অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে।
উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্রসম্পদ নির্ভর অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইনস্টিটিউট সরকার ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতায় উত্তর বঙ্গোপসাগরের প্রাণীজ সম্পদের তালিকা প্রণয়ন ও মজুত নিরূপণসহ নানামুখি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সামুদ্রিক মৎস্য, সী-ইউড ও শামুক-ঝিনুকের তালিকা ও সচিত্র প্রকাশনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের মজুদ নিরূুপনে বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য অধিদপ্তর কর্র্তৃক পরিচালিত জরীপ কার্যক্রমে এই ইনস্টিটিউট অন্যতম সহযোগী প্রতিষ্ঠান। জরীপ জাহাজ ‘মীন সন্ধানী’ এর মাধ্যমে সরেজমিন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন তৈরীতে এই ইনস্টিটিউটের গবেষকদের প্রত্যেক্ষ অংশগ্রহণ ও ভূমিকা জরীপ কার্যক্রমের সফলতা নিশ্চিত করেছে। এই ইনস্টিটিউটের গবেষকদের উদ্ভাবিত বিশ্লেষণী সফট্্ওয়্যার ও স্যাটেলাইট নির্ভর জি.আই.এস ম্যাপিং দক্ষতা জরীপ কার্যক্রমের তথ্য বিশ্লেষণ ও উপস্থাপনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে নরওয়ের সমুদ্র জরিপ জাহাজ ‘আরভি ফ্রেড্ঝফ ন্যানসন’-এর পরিচালিত যৌথ গবেষণা কার্যক্রমেও এই ইনস্টিটিউটের গবেষকগণ সরাসরি অংশগ্রহণ করে বঙ্গোপসাগরে সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ ও পরিবেশের বর্তমান অবস্থা নিরুপনের কার্যক্রম সফলতার সাথে সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে, বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় পরিচালিত সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের উন্নয়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্পে ইনস্টিটিউট জনবল ও কারিগরী সহযোগিতা দিয়ে জাতীয় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।
৩. সমুদ্রসম্পদ ব্যবস্থাপনা: ইনস্টিটিউটের গবেষকদের দীর্ঘ পথ চলায় অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা, দেশের সমুদ্রসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। ইতোমধ্যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ‘সপ্তম পঞ্চবর্ষিক পরিকল্পনা’ প্রণয়নে অত্র ইনস্টিটিউটের গবেষকগণ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মাধ্যমে সরকারের অনুকূলে নদী ও সমুদ্রসম্পদ ব্যবহারের দিক নিদের্শনামূলক নীতিপত্র প্রণয়ন করেছে। সমুদ্রনির্ভর অর্থনীতির সক্ষমতা অর্জনে সরকারের কর্মপন্থা নির্ধারণে বাংলাদেশ সরকার ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃক গৃহীত প্রকল্পে ইনস্টিটিউটের গবেষকগণ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং সুনীল অর্থনীতি বাস্তবায়নে প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের নতুন ক্ষেত্র উন্মোচন ও করনীয় নির্ধারণে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন।
প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্র সীমানা বিরোধ নিরসন পরবর্তী বাংলাদেশের নতুন সংজ্ঞায়িত সমুদ্র প্রদেশের সর্বপ্রথম মানচিত্র এই ইনস্টিটিউটের গবেষকগণ জাতিকে উপহার দেয়, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। পরবর্তীকালে, অর্জিত সমুদ্র সীমার অঞ্চলভিত্তিক নানাবিধ ব্যবহারিক প্রয়োগের প্রাথমিক মেরিন স্পেশাল প্ল্যানিং এর ধারণাপত্র তৈরি করা হয়, যাহা সমুদ্র ও নদী সম্পদ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জাতীয় ‘সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা’ প্রতিবেদনে সংযোজিত হয়েছে। এছাড়াও সম-সাময়িক অনুসন্ধানমূলক নানা গবেষণাধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারকে তথ্য দিয়ে অত্র ইনস্টিটিউট প্রয়োজনীয় নীতিমালা তৈরীতে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে (ক) জাতীয় মাছ ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র আবিস্কার ও ইলিশ ব্যবস্থাপনা; (খ) সমুদ্র ও উপকূলীয় অঞ্চলে অতিরিক্ত মৎস্য আহরণের প্রভাব; (গ) জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের পরিবেশগত বিরূপ প্রভাব ও করনীয়; (ঘ) উপকূলীয় অঞ্চলে মৎস্য, চিংড়ি, সী-উইড, ঝিনুক, লবণ চাষের স্থান নির্বাচন ও সম্প্রসারণের উপায়; (ঙ) সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ও অম্লতা বৃদ্ধির প্রভাব; (চ) সমুদ্রে তেজষক্রিয়তা, শিল্পবর্জ্য, মাইক্রোপ্লাস্টিক ও অন্যান্য সমুদ্র দূষণের মাত্রা নিরূপণ; (ছ) প্রাকৃতিক দুযোর্গ মোকাবেলায় উপকূলীয় অঞ্চলের সক্ষমতা নিরূপণ; (জ) উপকূলীয় অঞ্চলে ভাঙ্গন ও প্রতিরোধের উপায় তথা ইকোইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতির ব্যবহার; (ঝ) প্রাকৃতিক দূযোর্গ মোকাবেলায় উপকূলীয় সবুজ বনায়ন সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ম্যানগ্রোভ বনায়নের স্থান নির্বাচন ও সংরক্ষণ; (ঞ) জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও হ্রাসজনিত কারণ বিশ্লেষণ; এবং (ট) উপকূলীয় জীবন জীবিকা উন্নয়নের ব্যবস্থাপনাপত্র প্রণয়ন। এই গবেষণাধর্মী প্রতিবেদনসমূহ দেশের সমুদ্রসম্পদ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী নীতি প্রণয়নে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা রেখেছে। ইনস্টিটিউটের গবেষকদের সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে সরকারের প্রস্তাবিত মেরিন স্পেশাল প্ল্যানিং ও ডেল্টা প্ল্যানসহ সমুদ্রবিষয়ক যেকোনও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করলে দেশ ও জাতি বিপুলভাবে উপকৃত হবে।
৪. সমুদ্রবিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার: বাংলাদেশের সমুদ্রবিজ্ঞান চর্চার প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান হিসাবে অত্র ইনস্টিটিউট খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, মেরিন ফিশারিজ একাডেমীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যোগ্য ও দক্ষ জনবল সরবরাহের মাধ্যমে সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ক বিভাগ খোলা এবং পাঠ্যসূচি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করে আসছে। এই ইনস্টিটিউট ‘মেরিন সায়েন্স’ বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী ও ওশানোগ্রাফিসহ অন্যান্য সমুদ্র সম্পর্কিত বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী প্রদান করে আসছে এবং ২০১১ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় দেশে সর্বপ্রথম ওশানোগ্রাফি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী চালু করে। তদুপরি, বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট (বোরি) প্রতিষ্ঠাতেও ইনস্টিটিউটের অবদান অনস্বীকার্য। বোরি’র (তৎকালীন জাতীয় সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট) প্রারম্ভিক কার্যক্রম শুরু হয় ইনস্টিটিউটের একজন দেশ বরেণ্য সমুদ্র বিজ্ঞানীর হাত ধরে, যিনি প্রতিষ্ঠানটির প্রথম প্রকল্প পরিচালক ছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ইনস্টিটিটের গ্র্যাজুয়েটরা বোরি’র প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম পরিচালনায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
সমুদ্র শিক্ষা ও গবেষণায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ, ২০১৭ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ইনস্টিটিউটের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ৭২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করে। এই প্রকল্পের আওতায় ইনস্টিটিউটের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সন্বলিত ভৌত স্থাপনা ও আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবরেটরি নির্মাণ সম্প্রতি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এর পাশাপাশি, বাংলাদেশ সরকারের সমুদ্রসম্পদ নির্ভর নানাবিধ কর্মকৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা পালনের লক্ষ্যে ইনস্টিটিউট একটি ‘ব্লু-ইকোনমি রিসার্চ সেন্টার’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এই প্রস্তাবটি বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবেচনাধীন রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে সমুদ্র গবেষণা কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূলীয় এলাকায় স্থায়ী গবেষণাগার স্থাপন ও সমুদ্র গবেষণা জাহাজ সংযোজনসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ ভবিষ্যত পরিকল্পনায় অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে।
দীর্ঘ ৫০ বছরের অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নিয়ে ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস বাংলাদেশের সমুদ্রবিজ্ঞান চর্চা ও গবেষণার বাতিঘর হিসেবে সঠিক তথ্য-উপাত্ত এবং নির্দেশনা প্রদান করে জাতিকে সমৃদ্ধ করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। অতএব, প্রায় ১,১৮,০০০ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃর্ণ সমুদ্রসীমার সম্পদ এবং তার যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনসহ সামগ্রিক আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য কর্মপন্থা ও নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে অত্র ইনস্টিটিউটের গবেষকদের সক্রিয় সম্পৃক্ততা দেশ ও জাতির কল্যাণ নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।