লালমনিরহাট সংবাদদাতা: নানা কারনে শ্রমজীবি মানুষ এখন শহর মুখী।ফলে কৃষি কাজে শ্রমিক সংকট তীব্র হচ্ছে। কৃষিশ্রমিকের এই সংকট নিরসনে কৃষিকাজে যান্ত্রিকীকরণ এর ব্যবহার জনপ্রিয় করতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।
এরই ধারাবাহিকতায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের সাকোয়া ব্লকের সাকোয়া গ্রামের ৯৫ জন কৃষকের ৫০ একর জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে উফশী(উচ্চ ফলন শীল) ব্রিধান ৯২ জাতের বোর ধান চাষ করাচ্ছে কৃষি বিভাগ।
এই পদ্ধতিতে বীজ তলা থেকে ধানের চাড়া রোপন ও ফসল কর্তন সবকিছুই হবে কৃষি যন্ত্রের মাধ্যমে।এতে কমবে কৃষকের উৎপাদন খরচ বাড়বে ফসল উৎপাদন।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) আনুষ্ঠানিক ভাবে এই কর্মসূচির আওতায় ধান রোপন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ডা.মোঃ সাইখুল আরিফিন, অতিরিক্ত উপরিচালক (উদ্যান)গোলাম মোস্তফা মোঃ জোবাইদুর রহমান, সদর উপজেলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আদমেদ,অতিরিক্ত কৃষি অফিসার এ কে এম ফরিদুল হক,কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ ইলিয়াস হোসেন নয়ন ও স্থানীয় কৃষক কৃষাণীগণ প্রমুখ।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোর মৌসুমে ৫০ একর জমিতে সমলয়ে চাষাবাদের জন্য ৬০০ কেজি ব্রিধান ৯২ জাতের বীজতলা তৈরি করা হয়েছে প্লাস্টিকের ট্রেতে। এছাড়াও কৃষকদের মাঝে জমির পরিমাণ অনুযায়ী রাসায়নিক সার ইউরিয়া,ডিএপি ও এমওপি সারও বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সমলয়ে চাষের জন্য পানি দিয়ে জমি চাষ করে রেখেছে কৃষকরা।এসব জমিতে রোপন করার জন্য ৪ হাজার ৫০০টি প্লাস্টিক ট্রেতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এসব চাড়ার বয়স গড়ে ২০ থেকে ২৫ দিন। চাড়াগুলো রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার যন্ত্র দিয়ে জমিতে সারিবদ্ধ ভাবে রোপন করা হচ্ছে। এতে প্রতিটি গোছায় একই পরিমাণ চাড়া এবং দূরত্বে রোপন হচ্ছে।
সেখানে কথা হয় কৃষক প্রভাত চন্দ্রের সাথে (৪৫) সাথে, তিনি বলেন,কৃষি অপিস থেকি এবার মেশিন দিয়া ধান নাগে দেওচে আশা করি ভালোই হইবে। খরচ কম হলে হামরা আগামীবার নিজে করিম।একই ধরনের অভিমত ব্যাক্ত করেন আজিজ ইসলাম(২৫) নামের আরেক জন কৃষক।প্রভাত নামের আরেক কৃষক বলেন,মেশিন দিয়া ধান নাগান টিভিত দেখছি।এলা হামার জমিত ধান নাগে দেওচে কৃষি অফিস থেকি।
কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, একটি রাইস ট্রান্সপ্ল্যান্টার ঘণ্টায় এক একর জমিতে চারা লাগাতে পারে। প্রতিটি চারা একই দূরত্ব এবং সম গভীরতায় লাগানো যায়। একই সময় রোপণ করায় ধান পাকেও একসাথে।পরে মেশিন দিয়ে একই সঙ্গে সব ধান কাটা ও মাড়াই করা যায়। কৃষি শ্রমিক দিয়ে বিঘা প্রতি ধান উৎপাদন খরচ প্রায় ১৬ হাজার টাকা।অথচ একই কাজ যন্ত্রের মাধ্যমে খরচ হয় ৯ হাজার টাকার মত।এতে কৃষকরা আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে কমছে ফসলের উৎপাদন ব্যায়।
কুলাঘাট ইউনিয়নের সাকোয়া ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আল আমিন সরকার বলেন, সমলয় পদ্ধতিতে বীজতলা সরাসরি মাটিতে না করে পলিথিন অথবা প্লাস্টিকের ফ্লেপিবল ট্রেতে চারা তৈরি করা হয়। এজন্য ধান রোপনের তারিখ নির্ধারণ করে রোপণের সেই অনুযায়ী বীজ বপন করতে হয়। প্রতি ট্রেতে ৩ :২ অনুপাতে মাটি ও গোবরের মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়। এরপর বীজ ছিটিয়ে পুনরায় অর্ধেক মাটি ও গোবর মিশ্রণ দিয়ে সমতল জায়গায় রেখে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হয়।দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে অঙ্কুর বের হয়।নতুন হওয়াতে কৃষকদের কাছে এই পদ্ধতি কিছুটা জটিল বলে মনে হয় তবে কৃষকদের শেখানো হয়েছে আগামীতে তারা নিজেরাই করতে পারবে।
অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা এ কে এম ফরিদুল হক ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ ইলিয়াস হোসেন নয়নের সাথে কথা হলে তারা জানান,ট্রেতে বীজতলা করে রাইসট্রান্সপ্লান্টার মেশিন রোপন করা প্রাথমিক ভাবে কঠিন মনে হলেও কেউ যদি একবার করে তাহলে পরবর্তীতে তার জন্য সহজ হবে।উপজেলার কোন কৃষক যদি নিজ ইচ্ছায় এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে চায় তাহলে কৃষি অফিস থেকে কারগরি সহায়তা দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তারা।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমেদ বলেন, কৃষিকে আধুনিক, লাভজনক এবং টেকসই করতে যান্ত্রিকীকরণ সহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার।এর একটি হচ্ছে সমবায়ভিত্তিক চাষাবাদ পদ্ধতি। যেখানে একটি মাঠের কৃষকরা সবাই মিলে ধান উৎপাদনের জন্য একই জাত নির্বাচন করবে।এবং বীজতলা থেকে শুরু করে রোপন এবং কর্তন একই সময়ে করবে।
একসঙ্গে রোপণ করায় সব ধান পাকবেও একই সময়ে। তখন ধান কাটার মেশিন কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে একই সঙ্গে সব ধান কাটা ও মাড়াই করা যাবে। এসব কারণে সমলয় পদ্ধতিতে যন্ত্রের ব্যবহার সহজতর এবং উৎপাদন বৃদ্ধি হবে।ফলে ধান চাষে সময়, শ্রম ও খরচ কম লাগবে এতে কৃষকরা অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধ হবে বলেও জানান তিনি।