শুক্রবার , মার্চ ১৪ ২০২৫

দেশে আশঙ্কাজনক হারে কমে যাচ্ছে সামুদ্রিক কচ্ছপ!

মো. খোরশেদ আলম জুয়েল: বাংলাদেশের সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী সামুদ্রিক কচ্ছপের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। গবেষকদের মতে, কচ্ছপের সংখ্যা হ্রাস পেলে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে এবং জেলিফিশের আধিক্য দেখা দিতে পারে, যা সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য এবং মাছের উৎপাদনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশ্বজুড়ে সামুদ্রিক কচ্ছপ সংরক্ষণের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত, কার্যকর নীতি প্রয়োগ এবং সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে ওয়ার্ল্ড ফিশ।

গত চার দশকে বাংলাদেশের কক্সবাজার-টেকনাফ সমুদ্রসৈকত, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, সোনাদিয়া দ্বীপ এবং কুতুবদিয়া দ্বীপে কচ্ছপের বাসা বাঁধার হার ৮০% হ্রাস পেয়েছে, যা রীতিমতো ভয়াবহ। প্রতিবছর, বিশেষ করে নভেম্বর থেকে মার্চ মাসে, শত শত কচ্ছপ মৃত অবস্থায় উপকূলে ভেসে আসে। ২০২৪ সালে জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন যে ২০০-রও বেশি ডিম বহনকারী অলিভ রিডলে কচ্ছপ মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে।

সামুদ্রিক কচ্ছপ তাদের পুরো জীবনচক্র জুড়ে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। জেলেদের জালের সঙ্গে কচ্ছপ আটকে গেলে অনেকে ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের পাখনা বা গলা কেটে দেয়। আবার, অনেক জেলে আটকে পড়া কচ্ছপদের জালে রেখেই ছেড়ে দেয়, যা তাদের মৃত্যু ঘটায়। গভীর সমুদ্রে লং-লাইন ফিশিং চলাকালে, কচ্ছপের মুখে আটকে থাকা হুক অপসারণ না করে রশি কেটে দেয়া হয়, যা মারাত্মক আঘাতের কারণ হয়। ২০২০ সালে, ইউএসএআইডি-এর ইকোফিশ-II প্রকল্পের এক গবেষণায় দেখা যায়, কক্সবাজার উপকূলে মৃত কচ্ছপগুলোর মধ্যে ৭০%-এর বেশি কচ্ছপের পাখনা কাটা ছিল বা পাখনার সংযোগস্থলে ক্ষত তৈরি হয়েছিল। এ ধরনের আঘাতের কারণে তারা চলাচল করতে অক্ষম হয়ে মারা যায়।

বাংলাদেশে সম্প্রদায়ভিত্তিক কচ্ছপ সংরক্ষণ প্রচেষ্টা
ইকোফিশ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের উপকূলে সামুদ্রিক কচ্ছপ সংরক্ষণের জন্য স্থানীয় জেলেদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ১০টি ল্যান্ডিং সেন্টার-ভিত্তিক কো-ম্যানেজমেন্ট কমিটি, ৪২৯টি ফিশারিজ কনজারভেশন গ্রুপ, ১৫০৮টি মাছ ধরার নৌকার স্কিপার, ৩২৭টি আর্টিজানাল ফিশিং বোট মালিক, ৫০ জন সিটিজেন সায়েন্টিস্ট এবং ১৪০ জন ব্লু গার্ডকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারা বিপন্ন সামুদ্রিক প্রাণীদের উদ্ধার ও নিরাপদে সমুদ্রে ফিরিয়ে দেওয়ার কাজ করছেন।

প্রকল্পের আওতায়, প্রশিক্ষিত জেলেরা জালে আটকে পড়া কচ্ছপদের উদ্ধার, নিরাপদে পরিচালনা এবং সমুদ্রে ফিরিয়ে দেওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে শত শত কচ্ছপ সফলভাবে মুক্ত করা হয়েছে। ২০২৪ সালে, স্থানীয় বাসিন্দা ও স্বেচ্ছাসেবকদের সহযোগিতায় কুতুবদিয়া উপজেলায় একটি ইন-সিটু সামুদ্রিক কচ্ছপ হ্যাচারি স্থাপন করা হয়, যার মাধ্যমে ১৪৯টি কচ্ছপের ছানা নিরাপদে সমুদ্রে ছাড়া হয়েছে।

এই প্রচেষ্টা শুধু কচ্ছপ সংরক্ষণেই নয়, বরং স্থানীয় জেলেদের সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে উদ্বুদ্ধ করছে। এর ফলে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও টেকসই সামুদ্রিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে একটি ইতিবাচক সংযোগ সৃষ্টি হয়েছে -রিপোর্টটিতে দাবী করেছে ওয়ার্ল্ড ফিশ।

This post has already been read 1934 times!

Check Also

মহিষ গবেষণা ও উন্নয়ন প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য অর্জন

সাভার সংবাদদাতা: মহিষ সংক্রান্ত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে দেশীয় মহিষের জাত সংরক্ষণ ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিকল্পে …