বৃহস্পতিবার , ফেব্রুয়ারি ২০ ২০২৫

বাকৃবিতে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ

বাকৃবি সংবাদদাতা: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ১ম বারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন এগ্রিকালচারাল মেশিনারি অ্যান্ড বায়োরিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং (আইসিএএমবিই-২০২৫)’।

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে স্মার্ট এগ্রিকালচার ও ফার্ম মেকানাইজেশন বিষয়ক কারিগরি সেশন, বিজনেস সেশন, পোস্টার প্রেজেন্টেশন এবং সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়। দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ সোসাইটি অব এগ্রিকালচারাল মেশিনারি অ্যান্ড বায়োরিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং (বিএসএএমবিই) এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগ।

বৃহস্পতিবার সকালে স্মার্ট কৃষি-২, স্মার্ট কৃষি-৩ ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণ শীর্ষক টেকনিক্যাল সেশনের মাধ্যমে ২য় দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। সেশনে গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি, স্বয়ংক্রিয় চাষাবাদ, ফসল সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নিয়ে তাঁদের গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

এরপর বিজনেস সেশন ও পোস্টার উপস্থাপনা সেশন অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে তরুণ গবেষকরা তাঁদের উদ্ভাবনী ধারণা ও গবেষণালব্ধ ফলাফল উপস্থাপন করেন। পোস্টার সেশনে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা এবং বিকল্প জ্বালানি নিয়ে গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়।

পরবর্তীতে বিকেলে সম্মেলনের সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়। এসময় পোস্টার উপস্থাপনায় সেরা ছয়জন ও মৌখিক উপস্থাপনায় সেরা ছয়জনকে সম্মাননা দেওয়া হয়। বিজয়ীরা স্মার্ট এগ্রিকালচার, ফার্ম মেকানাইজেশন এবং বিকল্প জ্বালানি বিষয়ক উদ্ভাবনী গবেষণার জন্য পুরস্কৃত হন।বিএসএএমবিই-এর আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. মঞ্জুরুল আলমের সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম। তিনি তাঁর বক্তব্যে স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়ন ও তার প্রয়োগে গবেষণার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘কৃষি জাতির মেরুদণ্ড। কৃষির এখন বড় প্রতিকূলতা হলো জলবায়ু পরিবর্তন, শ্রমিক সংকট ও অত্যাধুনিক জ্ঞানের অভাব। এসকল সমস্যার সমাধান অত্যন্ত জরুরি, যা চতুর্থ কৃষি বিপ্লবের অংশ। এরই ধারাবাহিকতায় আয়োজিত এই সম্মেলনে চারা রোপন থেকে শুরু করে ফসল উত্তোলন সকল পর্যায়ে ক্ষতি কমানোর বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। শুধু মাঠ পর্যায়ে থাকলে চলবে না। নীতি-নির্ধারক, গবেষক, ব্যবসায়ী ও কৃষকদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। এতে করে সকল পর্যায়ের জ্ঞান একে অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ তৈরী হবে। ফলস্বরূপ কৃষি হবে অধিক টেকসই, লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব।’

এসময় সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবির ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়ক ও কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. জয়নাল আবেদীন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো. খালেকুজ্জামান এবং বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ। আরও উপস্থিত ছিলেন আইসিএএমবিই-২০২৫ সম্মেলন আয়োজক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আওয়াল, সদস্য সচিব অধ্যাপক মোহাম্মদ আশিক-ই-রব্বানী, কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ড. টুম্পা রাণী সরকারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ।

অধ্যাপক ড. মো. মঞ্জুরুল আলম বলেন, এই সম্মেলনের বিশেষ অর্জন হলো বাংলাদেশ সোসাইটি অব এগ্রিকালচারাল মেশিনারি অ্যান্ড বায়োরিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং (বিএসএএমবিই)-এর যাত্রা শুরু এবং কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ১ম আন্তর্জাতিক সম্মেলন। কৃষি প্রকৌশলী ও জীবাশ্মসম্পদ বিষয়ক গবেষণার সাথে জড়িতদের জন্য এটি একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। সম্মেলনের মাধ্যমে যেসকল গবেষণার উপস্থাপনা আমরা দেখেছি সেখান কৃষির সকল ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার লক্ষণীয়। ন্যানো প্রযুক্তি থেকে শুরু করে আইওটি সকল ক্ষেত্রেই কৃষির বিস্তারের সুযোগ আমরা দেখেছি, যা কৃষির প্রযুক্তিগত উন্নয়নের একটি রূপরেখা তুলে ধরেছে। তবে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পাশাপাশি আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহারের দিকেও নজর দিতে হবে। শুধু বর্তমানের কথা না ভেবে আমাদের ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হবে। দেশের মাটি, বায়ু, জলের উপযোগী যন্ত্র আমাদের প্রয়োজন। বাস্তুতন্ত্রে ব্যাঘাত হবে এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না।’

দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনে দেশি-বিদেশি গবেষক, বিজ্ঞানী, কৃষি প্রকৌশলী ও কৃষকবৃন্দ সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। পাশাপাশি দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় কৃষি প্রযুক্তি মেলা। মেলায় এসিআই মোটরস, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)-সহ ৮টি কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান তাদের উদ্ভাবিত সর্বশেষ কৃষি প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি প্রদর্শন করেন।

This post has already been read 164 times!

Check Also

বাউরেসের অধীনে সাড়ে ৪ হাজার গবেষণা প্রকল্প সম্পন্ন

বাকৃবি প্রতিনিধি : বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের (বাউরেস) তত্ত্বাবধানে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ৪ হাজার ৫ …