Friday , March 28 2025

ফিড শিল্পের উন্নয়নে প্রকৌশলীদের অবদান

প্রকৌশলী দিদারুল আলম : মাছ, মুরগি ও পশু পালন খাতে উচ্চমান সম্পন্ন প্রাণী খাদ্য সরবরাহ করে বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফিড শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই শিল্পের বিকাশের সাথে সাথে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, দক্ষতা উন্নয়ন ও গুণগতমান বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রকৌশলীরা অপরিহার্য অংশ হিসেবে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। স্বয়ংক্রিয় ফিড মিল ডিজাইন করা থেকে শুরু করে টেকসই উৎপাদন কৌশল বাস্তবায়ন পর্যন্ত প্রকৌশলীরা এই শিল্পের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে যাচ্ছেন।

ফিড শিল্পে প্রকৌশলীদের কর্ম-পরিধিঃ ফিড শিল্পে প্রকৌশলীরা উপসহকারী প্রকৌশলী থেকে শুরু করে নির্বাহী পরিচালক পর্যন্ত পদমর্যাদায় বিভিন্ন দায়িত্বে কর্মরত আছেন। এখনো পর্যন্ত ফিড শিল্পের কয়েকজন প্রকৌশলী কর্ণধার এই শিল্পের বিকাশে অগ্রজ ভূমিকা রেখেছেন।

সামগ্রিকভাবে কর্ম ক্ষেত্রে প্রকৌশলীরা এই শিল্পে নিম্নের ক্ষেত্র সমূহে সরাসরি জড়িত থেকে কাজ করছেনঃ

প্রকৌশলী দিদারুল আলম

ফিডমিল ডিজাইন এবং অটোমেশন: বলা হয়ে থাকে, সঠিক পরিকল্পনায় একটি কাজের অর্ধেকটা সম্পূর্ণ হয়ে যায়। তাই একটি ফিড মিল তৈরির শুরুতেই দক্ষ প্রকৌশলীগন সঠিক লে-আউট এবং যন্ত্রপাতি নির্বাচন পরিকল্পনা করে থাকেন যা পরবর্তীতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সঠিক অটোমেশন নির্বাচনের মাধ্যমে ফিড উৎপাদন প্রক্রিয়াকে সাশ্রয়ী ও ঝামেলা মুক্ত করা যায়।

প্রসেস অপটিমাইজেশন: প্রসেস অপটিমাইজেশনের মাধ্যমে প্রকৌশলী গন ফিডের বাহ্যিক গুণাবলীর উন্নয়ন, ফিড উপাদান সমূহের প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে কাজ করে থাকেন।

মান নিয়ন্ত্রণ জৈব নিরাপত্তা : ফিডের মাননিয়ন্ত্রণ এর প্রাথমিক ধাপে প্রকৌশলীগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে পাশাপাশি ফিডমিলের জৈব নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় কাঠামোগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন।

উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিচালনা: ফিডের উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিচালনায় প্রকৌশলীগণ সরাসরি অংশগ্রহণ করেন এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি পরিচালনসহ প্রয়োজনীয় জনবল পরিচালনার মাধ্যমে সঠিক মানের ফিড উৎপাদন করে থাকেন।

যন্ত্রপাতি সরঞ্জাম রক্ষণাবেক্ষণ: কারখানায় স্থাপিত যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম সমূহ যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ যার মাধ্যমে যন্ত্রপাতি সমূহ দীর্ঘ সময় বিরতিহীন ভাবে চলার সক্ষমতা অর্জন করে। যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণে প্রকৌশলী গন সরাসরি অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে কারখানা সচল রাখতে সাহায্য করেন।

ভান্ডার, মজুদ মাল এবং বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন: কারখানার অভ্যন্তরে ভান্ডার, মজুদ মাল এবং পণ্য বিতরণ ব্যবস্থার শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রকৌশলীগণ প্রয়োজনীয় লে-আউট প্রদান করে থাকেন।

কারখানা ব্যবস্থাপনা: কারখানার অভ্যন্তরে ফিড উৎপাদন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত সকল কাজেই প্রকৌশলীদের অংশগ্রহণ এখন অপরিহার্য বিষয়। তাই কারখানার উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাঁচামাল গ্রহণ থেকে শুরু করে ফিড বিতরণ অবধি সকল প্রক্রিয়া পরিচালনায় প্রকৌশলীগণ কারখানা ব্যবস্থাপনার গুরু দায়িত্বে নিয়োজিত।

ফিড উৎপাদনে অন্যান্য পেশাজীবীদের সাথে প্রকৌশলীদের সম্পর্ক :  ফিড উৎপাদনের নানা ধাপে প্রকৌশলীগণকে অন্যান্য পেশাজীবী যেমন কৃষিবিদ, পুষ্টিবিদ, পশু চিকিৎসাবিদ, রসায়নবিদ, সরবরাহ শৃংখল বিশেষজ্ঞ এবং বিপণন বিশেষজ্ঞদের সহিত অংশগ্রহণমূলক কাজে সরাসরি জড়িত থাকতে হয়। ফিড বিজনেসের সফলতা আসে যখন প্রকৌশলীগন সকল পেশাজীবীদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছান। পুষ্টিবিদ, সরবরাহ শৃংখল বিশেষজ্ঞ এবং প্রকৌশলীগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি প্রতিষ্ঠান তার সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করতে পারে। সেই সাথে পুষ্টিবিদ, বিপণন বিশেষজ্ঞ এবং প্রকৌশলীগনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সর্বোচ্চ গুণগতমানের সাশ্রয়ী ফিড খামারিকে দেওয়া সম্ভব।

বাংলাদেশের ফিড শিল্পে IR4.0 এর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রকৌশলীদের করণীয়ঃ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ডিজিটালাইজেশন, অটোমেশন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির প্রয়োগের সহিত নিজেদের খাপ খাওয়ানো। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে অনেক ফিড উৎপাদন প্রতিষ্ঠান তাদের কারখানা সমূহ চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলার জন্য উপযোগী করে তৈরি করছেন এবং আমাদের প্রকৌশলী গন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন কিন্তু এই প্রস্তুতি যথার্থ নয়। এর জন্য প্রয়োজন উন্নত প্রশিক্ষণ। পাশাপাশি কারখানা সমূহে ডিজিটালাইজেশন, অটোমেশন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির বিস্তর ব্যবহার শুরু করা, যা আমাদের প্রকৌশলীদের কাজের মাধ্যমে শেখার জায়গা তৈরি করে দিবে।

ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (FIEAB) এই সেক্টরে কাজ করা প্রকৌশলীদের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন যেখানে বাংলাদেশী প্রকৌশলীদের দক্ষতার মান উন্নয়ন এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবেলায় যোগ্য প্রকৌশলী হিসেবে গড়ে তোলার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। সেই সাথে ফিড ইন্ডাস্ট্রিতে কর্মরত প্রকৌশলী, টেকনিশিয়ান এবং অপারেটরদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য দক্ষতার মান ভিত্তিক যোগ্যতার মাপকাঠি নিরূপণে কাজ করে যাচ্ছে।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ।

This post has already been read 933 times!

Check Also

ওয়াপসা (WPSA) এবং বিশ্বব্যাপী পোল্ট্রি শিল্পের উন্নয়নে শতবর্ষের অবদান!

মো. খোরশেদ আলম জুয়েল : বিশ্বব্যাপী পোল্ট্রি বিজ্ঞান ও গবেষণার উন্নয়নে এক শতাব্দীরও বেশি সময় …