কুষ্টিয়া সংবাদদাতা: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, আমরা খুব সহজেই বলছি মাছ, মাংস, দুধের উৎপাদন বেড়েছে। কিন্তু যেটা বড় কথা এগুলো নিরাপদ কিনা? মৎস্যজীবী ও খামারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন তাৎক্ষণিক লাভের আশায় যেকোন কিছু দিয়ে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করবেন না। দেশীয় মাছ, মুরগী, গবাদি পশু রক্ষায় আপনাদের কাজ করতে হবে।
উপদেষ্টা আজ (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খামারীদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, কৃষির চেয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদখাতে খামারীদের বিদ্যুৎ বিল বেশি দেয়া হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য ইতোমধ্যে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রণালয় ভর্তূকি প্রদান করলে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় – মৎস্য ও প্রাণিসম্পদখাতে কৃষির মত হ্রাসকৃত মূল্যে বিদ্যুৎ বিল দেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
খামারীরা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদখাতে স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের প্রস্তাব করলে উপদেষ্টা বলেন, খামারীদের কথা বিবেচনা করে ইতোমধ্যে সরকারকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠিত হলে খামারীরা কৃষির মত স্বল্প সুদে ঋণ পাবেন।
উপদেষ্টা বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রাণিজ আমিষ জনগণের নিকট সরবরাহ করতে করে যাচ্ছে। তবে, জনবল সংকটের কারণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের অফিসগুলো ঠিকমত জনসেবা দিতে পারছে না। দ্রুতই এ সংকট লাঘব করে কাঙ্ক্ষিত সেবা জনগণের নিকট পৌঁছানো হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কালিগঙ্গা-বাদলবাসা নদীর ইজারা প্রদানকে কেন্দ্র করে রিটের ফলে জনগণকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে ; এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যতটুকু করা সম্ভব ততটুকু সহযোগিতা করা হবে।
ফরিদা আখতার বলেন, কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্হানে তামাক চাষের ফলে বহু মানুষের ক্ষতি হচ্ছে। স্বাস্থ্যে,পরিবেশ এমনকি মানুষের খাদ্যের ক্ষতি হচ্ছে। তামাকজাত পণ্যের উৎপাদন ও চাষ নিয়ন্ত্রণে নীতিমালা প্রণয়নে কাজ করছে সরকার।
উপদেষ্টা আরো বলেন, সম্প্রতি ভূমি মন্ত্রণালয় ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাথে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাথে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের মিটিং হয়েছে। ‘জাল যার জলা তার’ এ নীতির ভিত্তিতে যেন ইজারা দেওয়া হয় সে বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। ইজারা কোনভাবেই অমৎস্যজীবীদের দেওয়া না হয় সে বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে জেলা প্রশাসনের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন, মৎস্য এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আয়োজনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আবদুল ওয়াদুদের সভাপতিত্বে পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আব্দুল বারী, জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. আল মামুন হোসেন মন্ডল, জেলার সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া জেলার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খামারীরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
এর পর উপদেষ্টা কুষ্টিয়াতে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এর আঞ্চলিক কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেন। এসময় ব্রি’র আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান দেওয়ানসহ জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।