সোমবার , মার্চ ৩ ২০২৫

আজ প্রোটিন দিবস ২০২৫: সবার জন্য প্রোটিনের অধিকার নিশ্চিত করতে হব

এগ্রিনিউজ২৪.কম: আজ ‘প্রোটিন দিবস’। প্রোটিন বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টি এবং সবার জন্য প্রোটিনের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও দিবসটি ‘প্রোটিন দিবস’ উদযাপিত হচ্ছে।

‘বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল’ (বিপিআইসিসি) এবং ইউ.এস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল (ইউএসএসইসি) যৌথভাবে দিবসটি উদযাপন করবে। এবারের প্রতিপাদ্য “ফুয়েলিং সাউথ এশিয়া: দ্য রাইট প্রোটিন, দ্য রাইট ওয়ে”।

দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে বুধবার রাজধানীর বসুন্ধরায় বিপিআইসিসি’র কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় সংগঠনটির সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার জনসংখ্যা ২.০৪ বিলিয়ন যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ। এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল ও ঘনবসতিপূর্ণ ভৌগলিক অঞ্চল।

তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহ খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে- দক্ষিণ এশিয়ায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় প্রোটিনের স্বল্পতা রয়েছে। এ ঘাটতির কারণে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রোটিনের গুরুত্ব ও এর উৎস সম্পর্কে সচেতনতার অভাব রয়েছে, যার কারণে মানুষ পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ করছে না। তিনি বলেন- কোষের গঠন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, হাড় ও পেশী গঠনে প্রোটিন অপরিহার্য। অপর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার জন্য ক্ষতিকর। দারিদ্র্য, প্রোটিন খাদ্যের অপ্রতুলতা ও মূল্যবৃদ্ধিও কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রোটিনের ঘাটতি বাড়তে পারে। খাদ্যের ধরণ, রীতি, সাংস্কৃতিক বিশ্বাস, কুসংস্কার ইত্যাদি- এ অঞ্চলের মানুষের প্রোটিন গ্রহণকে প্রভাবিত করছে। প্রোটিন ঘাটতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা এবং টেকসই খাদ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

ইউ.এস. সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল (ইউ.এস.এস.ই.সি) -এর করপোরেট অ্যাফেয়ার্সের আঞ্চলিক প্রধান, দিবা ইয়ানুলিস অনলাইনে পাঠানো এক বার্তায় বলেন, আমরা চাই দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ যেন প্রোটিন বিষয়ক সংলাপ, ইভেন্ট ও কার্যক্রমের সাথে অধিকমাত্রায় যুক্ত হন। কেবলমাত্র তাহলেই প্রোটিন গ্রহণের সুফল, এবং ঘাটতির ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে তাঁদের মাঝে সচেতনতা তৈরি হবে; তাঁরা সঠিক ও যথার্থ প্রোটিন গ্রহণে অনুপ্রাণিত হবেন। তিনি বলেন, সকলের জন্য পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং সেজন্য সকলে মিলে কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ শওকত আলী বলেন, প্রোটিনের ঘাটতি মোকাবেলা করা এবং জনস্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য দক্ষিণ এশিয়ায় প্রোটিন সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য ইতিবাচক প্রচার-প্রচারণা বাড়াতে হবে এবং সুষম খাদ্য গ্রহণে মানুষকে উৎসাহিত করতে হবে।

বারডেম হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ মহুয়া বলেন, প্রোটিন আমাদের অধিকার। ইট যেমন একটির পর একটি সাজিয়ে বিল্ডিং তৈরি হয়, তেমনি মানবদেহের বিল্ডিং ব্লক হচ্ছে প্রোটিন। আমাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ প্রোটিনের উপর নির্ভরশীল। ভেগান ও  ভেজিটেরিয়ানদের ক্ষেত্রে প্রোটিন ঘাটতির ঝুঁকি অনেক বেশি। মহুয়া বলেন, প্রোটিনের অভাবে গর্ভধারণজনিত সমস্যা, এনিমিয়া, আলঝেইমার রোগসহ নানাবিধ অসুস্থতা  দেখা দিতে পারে। তিনি বলেন- ডিম, দুধ, মাছ ও মাংস হচ্ছে প্রাণিজ প্রোটিন এবং এগুলো হচ্ছে প্রথম শ্রেণীর প্রোটিন। অন্যদিকে সয়াবিন, তফু, ডাল, বীজ ইত্যাদি উদ্ভিজ্জ প্রোটিনগুলোও পুষ্টি চাহিদা পূরণে বেশ কার্যকর। মহুয়া বলেন- আমাদের প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়া উচিত। ডিমের একটি উপাদান হচ্ছে কোলিন, যা আমাদের মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য প্রয়োজন। এতে আরও রয়েছে ওমেগা৩ ফ্যাটি এসিড। তিনি বলেন- সয়া প্রোটিন দামে অনেক সস্তা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সয়া প্রোটিন জনপ্রিয় হলেও আমাদের দেশে এর ব্যবহার কম। সয়া’তে প্রাকৃতিক ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই নারীদের সয়া জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।

বিগত ৫ বছর যাবৎ দক্ষিণ এশিয়ায় ‘প্রোটিন দিবস’ উদযাপিত হচ্ছে; যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে- প্রোটিনের উপকারিতা বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা, প্রোটিন ও পুষ্টিকর খাবার সবার জন্য সহজলভ্য করা, প্রোটিন গ্রহণের পরিমান বৃদ্ধি করা এবং অপুষ্টি দূরীকরণে ভূমিকা রাখা। বর্তমানে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও নেপালে প্রতি বছর ২৭ ফেব্রুয়ারি দিবসটি পালিত হচ্ছে। ইউ.এস. সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল (ইউএসএসইসি) এ ধারণার প্রবক্তা।

This post has already been read 66 times!

Check Also

তামাকজনিত রোগে মৃত্যু সাধরণ নয় বরং তা হত্যাকাণ্ড- মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক: তামাকজনিত রোগে মৃত্যু সাধারণ নয় বরং তা হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ …