বাকৃবি সংবাদদাতা: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) উদ্ভাবিত নতুন জাতের হাঁস ‘বাউ-ডাক’ হাঁস পালনে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। মাত্র ১০ থেকে ১২ সপ্তাহ বয়সে হাঁসটি ২ থেকে ২.৫ কেজি ওজনের হয় এবং বছরে ২২০ থেকে ২৩০টি ডিম দেয়। দ্রুত বৃদ্ধির ক্ষমতা, কম মৃত্যুহার ও বাজারে ভালো দামের কারণে এটি দেশের প্রান্তিক খামারিদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
বাউ-ডাক হাঁসের জাতটি উদ্ভাবন করেছেন বাকৃবির পশু প্রজনন ও কৌলিবিজ্ঞান বিভাগের গবেষকরা। গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. সামছুল আলম ভূঁঞা জানান, দেশি ও বিদেশি হাঁসের সংকরায়নের মাধ্যমে ‘বাউ-ডাক’ তৈরি করা হয়েছে। এটি দেশের আবহাওয়ায় লালনপালনের জন্য উপযুক্ত এবং রোগবালাই তেমন হয় না। এটি ডুয়েল টাইপ মাংস ও ডিম উৎপাদনে উপযোগী জাত। ফলে এটি পালন করে খামারিরা দ্বিগুণ লাভবান হচ্ছেন। হাঁসের মাংসের জন্য এটি একটি সম্ভাবনাময় সংকরজাত যা প্রাণিজ প্রোটিনের চাহিদা লাঘবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার প্রান্তিক খামারিদের মধ্যে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে নতুন জাতের বাউ হাঁস। কম সময়ে দ্রুত বৃদ্ধি, মৃত্যুহার কম এবং মাংস ও ডিম উৎপাদনে অধিক লাভজনক হওয়ায় অনেকেই এই হাঁসের খামার গড়ার দিকে ঝুঁকছেন। বিশেষ করে উল্লাপাড়ার চয়ড়া গ্রামে ইতোমধ্যে ২০টিরও বেশি বাউ হাঁসের খামার গড়ে উঠেছে।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার চয়রা গ্রামের খামারি ঝর্ণা খাতুন বলেন, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ও মানবমুক্তি সংস্থার সহযোগিতায় প্রথম পর্যায়ে ৫০টি বাউ হাঁসের বাচ্চা নিয়েছিলাম। এ হাঁস পালন করে দুই মাসে গড় ওজন দুই কেজির বেশি হওয়ায় বিক্রি করে আমি লাভবান হয়েছি। তাই দ্বিতীয় পর্যায়ে আমি আরও ১০০ টি বাউ হাঁসের বাচ্চা নিয়ে পালন করব।
বাউ হাঁস খামারী শিরিফুল মিয়া জানান, মৃত্যুহার কম হওয়ায় বাউ হাঁস পালন করে লাভবান হয়েছি।অধিক মাংসের সাথে অধিক ডিম দেয়ায় দেশী হাঁসের চেয়ে বেশি লাভজনক।
আরেকজন খামারী রাজু মিয়া জানান, দেশী হাঁসের চেয়ে বাউ হাঁসের রোগ বালাই কম।কম সময়ে বেশি বৃদ্ধি হওয়ায় বাউ হাঁস পালন করে লাভবান হয়েছি
বাঙ্গালা গ্রামের আরেক খামারি শাহিনুর খাতুন জানান, মানব মুক্তি সংস্থার সহযোগিতায় তিনি ১০০টি হাঁস পালন করছেন এবং এখন পর্যন্ত একটি হাঁসও মারা যায়নি। তুলনাম‚লক কম খাবার খেয়ে দ্রুত বেড়ে ওঠা ও সুস্বাদু মাংসের কারণে বাজারে এর চাহিদা অনেক বেশি।
এমএমএসের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো মারুফ হাসান বলেন, বাকৃবি উদ্ভাবিত নতুন জাতের হাঁস ‘বাউ-ডাক’। যেটি ১০-১২ সপ্তাহ বয়সে ২-২.৫ কেজি ওজন ও বছরে ২২০-২৩০ টি ডিম দেয়। খামারের বায়োসিকিউরিটি, নিয়মিত টিকা প্রদানসহ কীভাবে হাঁসটি পালন করে লাভবান হওয়া যায়- সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।কম সময়ে বেশি বৃদ্ধি ও মৃত্যুহার কম হওয়ায় হাঁসটি দিন দিন প্রান্তিক খামারীদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। যেটি অর্থায়ন করছেন পিকেএসএফ ও বাস্তবায়নে মানব মুক্তি সংস্থা।
উল্লাপাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শেখ এম. এ. মতিন জানান, বাউ হাঁস বাংলাদেশের আবহাওয়ার জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এটি অল্পদিনে বেশি ওজন অর্জন করে এবং বেশি ডিম দেয়। এছাড়া, রোগবালাইও তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় খামারিরা সহজেই লাভবান হচ্ছেন।