
চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ISDE Bangladesh, CLEAN এবং BWGED-এর উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) চট্টগ্রামে ২০১৬ সালের বাঁশখালীর এসএস পাওয়ার প্লান্টে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে নিহত আন্দোলনকারীদের স্মরণে একটি প্রচারাভিযান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে হত্যাকান্ডে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা, প্রাণহানি বন্ধ, শ্রমিকের অধিকার সুরক্ষাসহ জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরের জোরালো দাবি জানানো হয়। এই গনজমায়েতে “জীবাশ্ম জ্বালানি আমাদের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি” স্লোগানটি ব্যবহার করে আন্দোলনকারীরা কয়লা ও এলএনজি প্রকল্পের মারাত্মক পরিবেশগত প্রভাব তুলে ধরেন।
২০১৬ সালে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে কয়লাভিত্তিক এসএস পাওয়ার প্লান্ট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা করতে গিয়ে প্রাণ-প্রকৃতি সুরক্ষা, কৃষিজমি ও কবরস্থান রক্ষার দাবিতে যেসব মানুষ জীবন দিয়েছেন, তাঁদের আত্মত্যাগের স্মরণে প্রতিজ্ঞা- “উন্নয়নের নামে আর যেন সাধারণ জনগণের প্রাণ না ঝরে।”
বিশিষ্ট নারী নেত্রী ও এডাব কেন্দ্রিয় কমিটির সাবেক সদস্য জেসমিন সুলতানা পারু উল্লেখ করেন যে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ কেবল পরিবেশগতভাবেই ধ্বংসাত্মক নয়, এটি অর্থনৈতিকভাবেও টেকসই নয়। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, এবং কয়লা, এলএনজি ও অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা এই সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধের দাবীতে যারা প্রাণ দিয়েছিলেন তাদের দাবী পূরণের জন্য বর্তমান সরকারের কাছে আহ্ববান জানানো হয়।
চট্টগ্রাম ফোরাম অন ইকোলজি এন্ড ডেভেলপমেন্টের সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি ও এনভায়রনমেন্ট সাইন্স ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডঃ খালেদ মিজবাহউজ্জামান বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিকর এবং পরিবেশের জন্য ভয়াবহ। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশের রয়েছে বিশাল সৌর ও বায়ু শক্তির সম্ভাবনা, যা দীর্ঘমেয়াদে আরও পরিচ্ছন্ন ও সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারে।
ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আইএসডিই বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এস এম নাজের হোসাইন বলেন,
“বাঁশখালীর শিক্ষা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা পরিহার করে আমাদের নবায়নযোগ্য শক্তির পথে এগিয়ে যেতে হবে। ২০১৬ সালে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা করতে গিয়ে কৃষিজমি ও কবরস্থান রক্ষার দাবিতে যেসব মানুষ জীবন দিয়েছেন, তাঁদের আত্মত্যাগের স্মরণে আজকের কর্মসূচি ছিল এক প্রতিজ্ঞা—“উন্নয়নের নামে আর যেন সাধারণ জনগণের প্রাণ না ঝরে।” মানববন্ধনের শেষে অংশগ্রহণকারীরা একটি টেকসই শক্তি ভবিষ্যতের জন্য তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
আলোচনা ও প্রচারাভিযানে অন্যান্যদের মধ্যে আলোচনা অংশনেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এম নাসিরুল হক, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, বোয়ালখালী উপজেলা বাংলাদেশ ইউপি চেয়ারম্যান সমিতির সাবেক সভাপতি নুর মোহাম্মদ, বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফ্রুটস এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন এর কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সেলিম জাহাঙ্গীর, জেলা সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদের যুগ্ন সম্পাদক মোহাম্মদ জানে আলম, সুবজের যাত্রা নির্বাহী পরিচালক সায়রা বেগম, চিটাগাং ড্রিংকিং ওয়াটার ম্যানুফেকচার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফয়সল আবদুল্লাহ আদনান, দৈনিক পূর্বদেশ এর স্টাপ রিপোর্টার এম এ হোসেন, ক্যাব চকবাজার থানা কমিটির সভাপতি আবদুল আলীম, অধিকার চট্টগ্রামের সমন্বয়ক ওসমান জাহাঙ্গীর, ক্যাব পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড সভাপতি এবিএম হুমায়ুন কবির, সিএসডিএফ’র প্রকল্প সমন্বয়কারী শাম্পা কে নাহার, আইএসডিই বাংলাদেশের কর্মসুচি সমন্বয়কারী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, যুব ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আবু হানিফ নোমান, যুব ক্যাব সদস্য সিদারতুল মুনতাহা, আমজাদুল হক আয়াজ, এমদাদুল ইসলাম, আবুল কাসেম, মোহাম্মদ ওমর ফারুখ, হারিসা খানম সুখী প্রমুখ।