চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: বন্দরনগরী চট্টগ্রাম মহানগরী একদিকে বর্ষাকালে পুরো শহর পানিতে থলিয়ে যায় আবার শুকণা মৌসুমে পানির জন্য হাহাকার পড়ে যায়। উপকূলীয় অঞ্চলে পানির স্তর দ্রুত নীচে নেমে যাওয়ায় ও সমুদ্রপীষ্টের উচ্চতা বাড়ায় লবনাক্ততা বাড়ছে প্রতিনিয়তই। সেকারনে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে কৃষি কাজ, বাসা বাড়ীর কাজও পুরোপুরি পর্যুদস্ত। আর এগুলোর পেছনে পার্বত্য চট্টগ্রামের বন বিনষ্ঠ, জলাধার, নদী ও খাল দখল অন্যতম কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরীতে ওয়াসার সরবরাহকৃত পানির মূল উৎস এই দুই নদীর এ অবস্থা চলমান থাকলে আগামীতে লবনাক্ত পানিও ওয়াসা সরবরাহ করতে পারবে না। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের বন, কর্ণফুলী ও হালদা নদী বাঁচানো যেরকম প্রয়োজন, তেমনি জরুরি ভাবে লবনাক্ত পানিকে বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়ায় লবণাক্ত পানি থেকে লবণ সরিয়ে ফেলার উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে আসতে হবে। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) বিশ্ব পানি দিবস উদযাপন উপলক্ষে অ্যাসোসিয়েশন অব ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলফমেন্ট (এএলআরডি) এর সহযোগিতায় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা আএসডিই বাংলাদেশ, ও ক্যাব চট্টগ্রাম কর্তৃক আয়োজিত আলোচনা সভায় বিভিন্ন বক্তাগন উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আইএসডিই বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি ও এনভায়রনমেন্ট সাইন্স ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খালেদ মিজবাহউজ্জামান। ধারণা পত্র উপস্থাপন করেন আইএসডিই এর প্রকল্প কর্মকর্তা রাইসুল ইসলাম।
মুল প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, প্রায় ৫০০ বছর আগে গোড়াপত্তন ঘটে চট্টগ্রাম শহরের। কিন্তু পরিকল্পিত নগরায়নের অভাবে আজো একটি পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত নগরী হতে পারেনি এটি। উল্টো সরকারের সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থাগুলোর যথাযথ পদক্ষেপ না থাকায় সমস্যাগুলো দিনে দিনে বাড়ছে। চট্টগ্রামের প্রাণখ্যাত কর্ণফুলী ও হালদা নদী দূষণ, দখল, ভরাটের শিকার। নগরীতে প্রতিদিন প্রায় ৩০ কোটি লিটার পয়ঃবর্জ্য নিঃসৃত হচ্ছে। যা ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন ৫১ কোটি লিটারে উন্নীত হবে। নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা না হলে নগরীর একমাত্র সুপেয় পানির উৎস এ দুটো নদী ভয়াবহ দূষণের শিকার হবে। এতে চট্টগ্রামের পরিবেশ দূষণসহ নগরীর সুপেয় পানি সরবরাহে সংকট সৃষ্টি হবে। অথচ এ দুটি নদীই ওয়াসার সুপেয় পানির প্রধান উৎস। প্রতিদিন এ দুইটি নদী থেকে ওয়াসা ৪৩ থেকে ৪৫ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করছে। আগামীতে আরো ১০ থেকে ১২ কোটি লিটার পানি উত্তোলন হবে। এছাড়া নগরীতে দৈনিক প্রায় দুই হাজার মেট্রিক টন কঠিন বর্জ্য হয়। এসব বর্জ্যরে একটি অংশও নদীতে গিয়ে পড়ছে। নগরীর তরল ও কঠিন বর্জ্য ছাড়াও নদীর দুই ধারের শিল্পকারখানার দূষিত কেমিক্যালও হালদা ও কর্ণফুলী গিয়ে পড়ে। এ কারণে ক্রমাগত দূষণের শিকার হচ্ছে এ দুইটি নদী। উচ্ছেদ হচ্ছে না কর্ণফুলীর অবৈধ স্থাপনা। উল্টো দখল হচ্ছে নদী তীরবর্তী এলাকা।
আলোচনা অংশনেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এম নাসিরুল হক, বিশিষ্ঠ নারী নেত্রী ও এডাব চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, বোয়ালখালী উপজেলা বাংলাদেশ ইউপি চেয়ারম্যান সমিতির সাবেক সভাপতি নুর মোহাম্মদ, বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফ্রুটস এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন এর কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ সেলিম জাহাঙ্গীর, জেলা সামাজিক উদ্যোক্তা পরিষদের যুগ্ন সম্পাদক মোহাম্ম জানে আলম, সুবজের যাত্রা নির্বাহী পরিচালক সায়রা বেগম, চিটাগাং ড্রিংকিং ওয়াটার ম্যানুফেকচার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফয়সল আবদুল্লাহ আদনান, দৈনিক পূর্বদেশ এর স্টাপ রিপোর্টার এম এ হোসেন, ক্যাব চকবাজার থানা কমিটির সভাপতি আবদুল আলীম, অধিকার চট্টগ্রামের সমন্বয়ক ওসমান জাহাঙ্গীর, ক্যাব পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড সভাপতি এবিএম হুমায়ুন কবির, সিএসডিএফ’র প্রকল্প সমন্বয়কারী শাম্পা কে নাহার, যুব ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আবু হানিফ নোমান, যুব ক্যাব সদস্য সিদারতুল মুনতাহা, আমজাদুল হক আয়াজ, এমদাদুল ইসলাম, আবুল কাসেম, মোহাম্মদ ওমর ফারুখ, হারিসা খানম সুখী প্রমুখ।