নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের অন্যতম বড় কৃষিভিত্তিক খাত পোলট্রি শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের জন্য সরকার প্রথমবারের মতো একটি সংগঠিত ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর খসড়া সুপারিশ করেছে। গত ১০ এপ্রিল শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ন্যূনতম মজুরি বোর্ড এই খসড়া প্রকাশ করে, যা বর্তমানে দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে।
পোলট্রি শিল্প বহু বছর ধরে দেশের ডিম ও মুরগির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি লক্ষাধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে আসছে। তবে দীর্ঘদিন ধরে এই খাতের শ্রমিকরা একটি নির্ধারিত মজুরি কাঠামোর আওতায় ছিলেন না, ফলে তাদের আয়ের নিশ্চয়তা ছিল না। এমন বাস্তবতায় সরকারপ্রণীত এই খসড়া শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের পথে বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী, পোলট্রি খাতের বিভিন্ন পদের শ্রমিকদের জন্য গ্রেড অনুযায়ী বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে। সবচেয়ে উচ্চ গ্রেডের হ্যাচারি অপারেটর ও সুপারভাইজারদের মোট মাসিক মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০,০৫০ টাকা। এই বেতনের মধ্যে রয়েছে ১৮,৭০০ টাকা মূল বেতন, ৯,৩৫০ টাকা বাড়িভাড়া ভাতা, ১,৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং ৫০০ টাকা যাতায়াত ভাতা।
অন্যদিকে, সাধারণ শ্রমিক যেমন ক্লিনার, ফিড সংগ্রাহক ও সহকারী কর্মীদের মাসিক মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬,২৫০ টাকা। এছাড়া, নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশিক্ষণকালীন শ্রমিকদের জন্য প্রাথমিকভাবে ১১,৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ছয় মাস পর মূল্যায়নের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট পদের পূর্ণাঙ্গ মজুরিতে উন্নীত হবে।
এই কাঠামোতে শ্রমিকদের জন্য বার্ষিক মজুরি বৃদ্ধির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। এক বছর পূর্ণ হলে তাদের মূল বেতনের উপর ৫ শতাংশ হারে বেতন বৃদ্ধি পাবে, যা ধারাবাহিকভাবে প্রতি বছর প্রযোজ্য হবে।
বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, খসড়া সুপারিশের ওপর কারও আপত্তি, মতামত বা সুপারিশ থাকলে সেটি গেজেট প্রকাশিত তারিখের ১৪ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে বোর্ড বরাবর জমা দিতে হবে। এরপর সব মতামত বিবেচনা করে চূড়ান্ত সুপারিশ তৈরি করে সরকারের কাছে পেশ করা হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখা এই শিল্পে শ্রমিকদের উপযুক্ত মজুরি নির্ধারণের ফলে তারা শুধু অর্থনৈতিক নিরাপত্তা পাবেন না, বরং কাজের প্রতি উৎসাহ এবং উৎপাদনশীলতাও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি এই উদ্যোগ পোলট্রি শিল্পের টেকসইতা ও প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।