শনিবার , নভেম্বর ২৩ ২০২৪

চীনারা কী খায়, নাকি কী খায় না?

chineese foodsআবু নোমান ফারুক আহমেদ : অনেকেই জানতে চায় চীনের মানুষজন কি কি খায়! আমি বলি তারা কি খায়না সেটা বরং বের করা কঠিন! বাংলাদেশের চাইনিজ খাবার কত মজা। ভাবলাম চীন যাচ্ছি, ইচ্ছেমতো চাইনিজ খাবো! এখানে এসেতো হতবাক। বাঙ্গালী চাইনিজ এর সাথে চায়না চাইনিজ খাবারের কোন মিল নেই। কারা যে আমাদের ঐ খাবারের নাম চাইনিজ রেখেছিল, আল্লাহ মালুম! আগেই বলে রাখি, আমার এই লেখাটি পড়তে হলে আপনাকে কিন্তু শক্ত হার্টের অধিকারী হতে হবে। নাহলে সামনে এগুনোর দরকার নেই।

চীনারা সর্বভুক প্রাণী। বৃহষ্পতিবার (২৯ জুন ) আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো ওয়েস্ট মাউন্টেইন এর এক রেস্টুরেন্টে। সেখানে ছিল জীবন্ত ব্যাঙ, কাঁকড়া, শামুক, ঝিঁনুক, পোকামাকড়, সেন্টিপেড, স্কুইড, স্করপিয়ন, সাপের মতো ইল ফিশ, তেলাপিয়া মাছ আরো কত কি! আপনি যেটা অর্ডার করবেন তাই রান্না করে দিবে তারা। এর আগে একদিন এক রেস্টুরেন্ট এ নিয়ে গেল পোকামাকড় খাওয়ানোর জন্য, যার নাম ইন্সেক্ট হোম। আরেকদিন শোনাবো সেই কাহিনী।

যাইহোক, এখানে ছোট বড় বাচ্চা এমনকি পোকামাকড়ের ডিমও পাওয়া যায়। আপনার পছন্দসই অর্ডারমতোই তারা এগুলো পরিবেশন করবে। খেতে যেয়ে একদিন টেবিলে দেখি, মুরগীর রক্ত দিয়ে পুডিং বানিয়ে পরিবেশন করেছে; শুনে অবাক হবেন এখানে এটি খুবই মুল্যবান খাবার । মুরগীর সিদ্ধ পা, ঝুটি, ঠোটসহ মাথা, নাড়িভূড়ি এগুলো এদের প্রিয় খাবার। আমরা যেগুলো ফেলে দেই, সেগুলো এরা মজা করে খায়। পর্ক, হাম, রিব অর্থাৎ শুকরের মাথা থেকে পা পর্যন্ত সবই এদের খাদ্য তালিকায় কমন। কুকুরের মাংসও খায়।

বাঁশ এদের খুব প্রিয়। তবে এরা কাউকে বাঁশ দেয়না, বরং নিজেরা বাঁশ খায়, অন্যদের খাওয়ায়। কয়েকদিন ব্যাম্বো শুট খেতে খেতে প্রান ওষ্ঠাগত। নিজেকে পান্ডা বা তৃনভোজী প্রাণি মনে হয়েছে তখন। আর ওদের রান্নাতো মাশাল্লাহ, লবণ মরিচ ছাড়া শুধু সিদ্ধ। আজব এক জাত, মিষ্টি আলু আর কচু/ ইয়ামের জুস খায়। ভাতের মাড় লবণ ছাড়া মজা করে খায়, একে তারা বলে ফরিজ। ডালিমের ফুলও যে একটা খাবার, এটা চীনে না আসলে জানা হতোনা।

চীনারা হাস মুরগী টার্কি খায়। হাঁস বা রাজহাঁসের মাংস চামড়াসহ খেতে খুব পছন্দ করে। একদিন দেখি নয়া খাবার, নাম গুজ লিভার ফ্রাই। তবে এরা বিফ, মাটনও খায়। গরুর স্টমাক বেশি প্রিয়। হ্যলোজেন এগ নামক মুরগির ডিম বিশেষভাবে সিদ্ধ করে খায়, যার ভিতরটা কালো। মাছের মধ্যে তেলাপিয়া আর চিংড়ি খুব কমন। তবে মাছের কোন কিছু ফেলে এরা অর্থ, পুষ্টি, সময় কিছুই অপচয় করতে চায়না। এরা ভুট্টা, মিস্টি আলু সিদ্ধ করে খায়। নানা ধরনের স্ট্রীমড ফুড খায়। বিভিন্ন ধরনের নুডুলস এদের অত্যাবশ্যকীয় খাবার। রাইস নুডুলস বেশি জনপ্রিয় এখানে। কাঠি দিয়ে ভাত খায়;  সাদা ভাত, বিভিন্ন ডাল দিয়ে ভাত, স্টিকি ভাত। চাল আর গম যে একসাথে সিদ্ধ করে খাওয়া যায়, তা এখানে এসে শিখলাম। সব ধরনের ঘাস লতা পাতা সিদ্ধ করে খায়। তবে তামাক পাতার কোন রেসিপি এখানে পাইনি!

এদের রেসিপির শেষ নাই। চীনারা গাছের মূল, কাণ্ড, পাতা, ছাল, বাকল, ফুল, ফল সবই খায়; শুধু কোনরকমে একটু সিদ্ধ হলেই হলো। এরা ছোটমাছ শুকিয়ে সিদ্ধ করে খায়। স্টার্টার হিসেবে গম বা চাল সিদ্ধ, সবজি বা শাক পাতা সিদ্ধ খায়, একে এরা স্যুপ বলে।

চাইনিজরা খাবারের সাথে বিভিন্ন ধরনের পিকেল খায়। খাবারে যেসব মশল্লা দেয় তার দু একটি মুখে গেলে আমার পুরো খাবারই মাটি হয়ে যায়। রসুন আর আদাকে লবণ পানিতে কয়েকদিন ডুবিয়ে রেখে হাল্কা সিদ্ধ করে পরিবেশন করেছে এবং এটাও একটা রেসিপি। অধিকাংশ সবজি অর্ধসিদ্ধ থাকে। মটরশুঁটি বা বিন সিদ্ধ করে পেস্ট বানিয়ে খায়। এরা নানা ধরনের হার্ব কাচা খায়। একদিন কচুরিপানার মতো গাছের কাচা ডগা বরফের উপর রেখে দিয়ে খেতে দিয়েছে। পদ্ম বা লোটাসের মূল মজা করে খায় চাইনিজরা। এরা শিঙারার মতো এক ধরনের খাবার খায়, একে বলে বাউজি। বিভিন্ন ধরনের মাশরুম এদের খুব জনপ্রিয় খাবার, বেশি পছন্দ রাবারের মতো এক ধরনের মাশরুম। তবে এদের বকফুল, এসপারাগাছ ভাজি ও পাকা আম দিয়ে চিকেন রান্না মজা লেগেছে।

এরা গরম পানিতে বিভিন্ন ধরনের শুকনো পাতা ডুবিয়ে খায়, একে এরা চা বলে! এরা খাবার আগে সেই চা খায়। খাবার সময় শুধু ঐ চা খায়, কোন পানি খায় না। এরা জাপানীদের মতো দুইটা স্টিক দিয়ে পানি ছাড়া সব ধরনের খাবার খায়। ফলের মধ্যে তরমুজ, ড্রাগন ফ্রুট, পেঁপে, মেলন, গাজর, শশা এখানে কমন। এরা মিস্টি জাতীয় খাবার খুবই কম খায়। তৈলাক্ত খাবার খায়না। খাবারে লবণ বা মসলা খায় না। মিষ্টি বা ঝাল খাবার খায়না। খায়না ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি বা কোল্ড ড্রিনক্স ।

চীনারা যতই খাক না কেন, মোটা হয়না। তাদের মেটাবলিজম মনে হয় আমাদের থেকে ভিন্ন! যেকোন রেস্টুরেন্ট এ একটা স্যুপের বাটি, একটা খাবার বাটি, একটা গ্লাস আর দুইটা স্টিক পলিথিন দিয়ে মোড়ানো থাকে। ওগুলোর আকার অনেক ছোট। এতো ছোট বাটিতে আমরা বিকেলের নাস্তাও খাই না। তারা সকাল ছয় টায় ব্রেকফাস্ট করে, দুপুর ১২ টায় লাঞ্চ আর বিকাল ছয়টায় ডিনার করে। মাঝরাতে এদের খিদে লাগে কিনা, বা লাগলে ঘরে বসে কি খায় তা জানা নেই। আসলে চীনাদের খাদ্য তালিকা অনেক বড়, তাই পৃথিবীর কোন দেশে তাদের কোন সমস্যা হয়না। ঘাস লতা পাতা খেয়ে অনায়াসে তারা জীবন পার করে দিতে পারে। এসব খেয়ে তারা কোন অসুখ বিসুখ ছাড়াই শত বছর বাচতে পারে।

This post has already been read 14298 times!

Check Also

বইমেলায় আসছে দেশসেরা ভ্রমণ লেখকদের বই ‘ট্রাভেলার’

এগ্রিনিউজ২৪.কম: দেশে যেন ভ্রমণের জোয়ার শুরু হয়েছে। তরুণদের পাশাপাশি সববয়সী মানুষ দেশের এ স্থান থেকে …