মৃত্যুঞ্জয় রায়:
যারা বেগুন খেতে পছন্দ করেন তাদের কাছে সাদা বেগুন হলো এক লোভনীয় বেগুন। বিশ্বব্যাপী বেগুনপ্রেমীদের কাছে সাদা বেগুনের পরিচয় ‘Apple of love’ নামে। রাঁধুনীরাও সাদা বেগুন পছন্দ করেন। কেননা, এ বেগুন ভাজতে তেল টানে খুব কম, শাঁস গলে মাখনের মত হয়ে যায়, বীজ কম আর স্বাদে মিষ্টি। গৃহস্থদের কাছেও সাদা বেগুন প্রিয়। কেননা, এ বেগুন গাছ বাড়ির আঙ্গিনাতে হয়, ঘরের পৈঠায় দু চারটা গাছ লাগিয়ে রাখলে সারা বছর ধরে দরকার মতো সেসব গাছ থেকে যখন তখন বেগুন তুলে খাওয়া যায়। বাড়িতে মেহমান এলে তাকে বেগুন ভাজা খাওয়াতে আর বাজারে দৌড়াতে হয় না। এ ছাড়া সাদা বেগুনের গাছ বাঁচে কয়েক বছর। একবার এ গাছ লাগালে তা থেকে কমপক্ষে তিন-চার বছর ফল পাওয়া যায়। ধবধবে দুধের মতো সাদা বেগুনের চেহারাটাও আকর্ষণীয়। এ বেগুনে পোকামাকড় ও রোগের আক্রমণও হয় খুব কম, গাছে কোনো জল দিতে হয় না। বাড়িতে দু চারটা গাছ লাগিয়ে যতœ করা হয়, কোনো সার ও কীটনাশক তাতে দেয়া হয় না। তাই এসব বেগুনের স্বাদ হয় অমৃতের সমান আর স্বাস্থ্যও থাকে নিরাপদ। তাছাড়া সাদা বেগুনের পুষ্টিমান অন্য জাতের বেগুনের চেয়ে বেশি। বিশেষ করে সাদা বেগুন উচ্চ মাত্রার পটাসিয়াম সমৃদ্ধ এবং কম ফ্যাট ও প্রোটিনযুক্ত। ভারতীয় আয়ুর্বেদাচার্যদের বিশ্বাস, সাদা বেগুন ডায়াবেটিস প্রশমনে ভালো কাজ করে, এ গাছের শেকড় অ্যাজমা রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
সাদা বেগুনও বেগুনগোত্রের ও একই প্রজাতির গাছ। অর্থাৎ এর উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম বা প্রজাতি হলো Solanum melongena ও পরিবার সোলানেসী। কিন্তু বেগুনের এ প্রজাতিভুক্ত অন্যান্য গাছের মতো এর গাছ বর্ষজীবী না, বহুবর্ষজীবী ও গাছ অনেক বড় হয়। একই প্রজাতিভুক্ত হলেও বেগুন গবেষকরা সাদা বেগুনকে স্বাতন্ত্র্য দেয়ার জন্য চেষ্টা করেছেন। তাঁরা সাদা বেগুনকে দুটি ধরন বা ক্যাটাগরিতে ভাগ করেছেন। এক ধরনের সাদা বেগুনের গাছ শুধু শোভাবর্ধক গাছ হিসেবে চাষ করা হয়, এর ফল সাধারণত খাওয়া হয় না। শোভবর্ধক এই প্রজাতির নাম দেয়া হয়েছে Solanum ovigerum Dun., অন্যদিকে সবজি হিসেবে খাওয়া হয় এরকম শ্বেতসৌন্দর্যের আর এক বেগুনকে Solanum melongena var. esculentum (L.) প্রজাতিভুক্ত করা হয়েছে।
দেখতে সাদা তাই এটি সাদা বেগুন নামেই বেশি পরিচিত। তাছাড়া কেউ বলে ধলিবেগুন, কেউ বলে সাহেব বেগুন, কেউ বলে ডিমবেগুন। বিদেশি সাহেবদের মতো ধবধবে তো, তাই এর এই ডাকনাম। এ জাতের কোনো নামকরণের তথ্য পাওয়া যায়নি। দেশের দক্ষিণাঞ্চল পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি, বরিশাল প্রভৃতি জেলার অনেক জায়গায় এ বেগুনের চাষ এখন ছড়িয়ে পড়েছে। বাণিজ্যিকভাবে কম করা হলেও বসতবাড়িতে এ জাতের বেগুন লাগানো হচ্ছে। সাদা বেগুন উপকূলীয় এসব জেলার একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় জাত। সম্ভাবনাময় এ বেগুনটি নিয়ে আরও গবেষণার সুযোগ আছে।
লেখক: কৃষিবিদ ও উপ প্রকল্প পরিচালক, আইএফএমসি প্রকল্প, ডিএই, খামারবাড়ি, ঢাকা