ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা):
কম্পোস্ট সার ও মাছের খাদ্য উৎপাদন হবে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি)র মানববর্জ্য শোধনাগারে। মানববর্জ্য শোধনাগারের মল সংগ্রহে রয়েছে ৬টি ভ্যাকুটাগ। এ ভ্যাকুটাগ নগরীর পিট ল্যাট্রিন ও সেপটিক ট্যাংকের মানববর্জ্য সংগ্রহ করে তা রাজবাধে স্থাপিত মানববর্জ্য শোধনাগারে এনে মল থেকে উৎপাদন করবে কম্পোস্ট সার ও মাছের খাদ্য।
জানা যায়, খুলনা মহানগরীর স্যানিটেশন আধুনিকায়নে ২০১৫ সনে সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) রাজবাঁধে দরিদ্রবান্ধব ও ব্যবসাভিত্তিক একটি মানববর্জ্য শোধনাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এসএনভি নেদারল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন। প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যায়ে এ প্রকল্পে রয়েছে মানববর্জ্য পরিশোধনের জন্য ৬টি ইউনিট, পানি শোধনাগার, ড্রাইং বেড-৬ ইউনিট, অফিস বিল্ডিং, শোধনকৃত মানববর্জ্য ও উপকরণ বা তুলে ফেলা গাছ বা আগাছা রাখার স্থান ও ভ্যাকুটাগ পরিষ্কারের স্থান ইত্যাদি। দু’টি প্রযুক্তি কন্সট্রাকটেড ওয়েটল্যান্ড ও ড্রায়িং বেড এর সমন্বয়ে শোধনাগারটি নির্মাণ ও পরিচালনায় কারিগরি সহায়তা প্রদান করে থাইল্যান্ডের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৬ সনে শোধনাগারটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এরপর চলতি বছরের মার্চ মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে শোধনাগারটি চালু করা হয়। ফলে নগরীর ১৫ লাখ মানুষের উন্নততর পরিবেশে বসবাসের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
তবে কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পটি পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন হলে শুধু যে নিরাপদভাবে মানববর্জ্য সংগ্রহ করা হবে তা নয়, পুঞ্জিভূত বর্জ্য পরিশোধনের মাধ্যমে ব্যবসাভিত্তিক কম্পোস্ট সার ও মাছের খাদ্য উৎপাদন করা যাবে। যার মাধ্যমে কর্পোরেশনের মোটা অঙ্কের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।
বাস্তবায়নকারী সংস্থা এসএনভি সূত্রে জানা গেছে, খুলনা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে অবস্থিত দেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর। যা ভৈরব এবং রূপসা নদীর তীরে অবস্থিত। শহরটি গড় সমুদ্রতল থেকে ৪ মিটার উপরে এবং আয়তনে ৪৫.৬৫ বর্গকিলোমিটার। এ শহরে জনসংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ এবং এর ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৩২ হাজার ৮৫৯ জন। এ নগরীর প্রতি ওয়ার্ডে মোট ৬৬ হাজার ২৫৭টি পরিবার বসবাস করে। খুলনা সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত এ শহরে প্রতি বছর পিট ল্যাট্রিন ও সেপটিক ট্যাংকে ৭২১ হাজার লিটার মানববর্জ্য উৎপাদিত হয়। এ মানববর্জ্য ম্যানুয়ালী অপসারণ করা হয়।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের কঞ্জারভেন্সি বিভাগের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক ও নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. আব্দুল আজিজ বলেন, নগরীর উন্নত স্যানিটেশনের মধ্যে রয়েছে ল্যাট্রিন ও সেপটিক ট্যাংক। এ সকল ল্যাট্রিন ও সেপটিক ট্যাংক থেকে মানববর্জ্যরে একটি বড় অংশ কোন রকম ব্যবস্থাপনা ছাড়াই অপরিশোধিত উপায়ে জলপথ, নিচু জমিতে ফেলা হয়। যা পরিবেশকে দূষিত করে এবং একই সাথে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগ মানুষকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলে। তাই নিরাপদ মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখন থেকে বাড়ি ও অফিসের ল্যাট্রিনের সকল মল কর্পোরেশনের অত্যাধুনিক ৬টি ভ্যাকুটাগ এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট ওই শোধনাগারে ফেলা হবে। যার ফলে নগরবাসীর উন্নতর পরিবেশে বসবাসের সুযোগ তৈরি করবে। পরিশোধনের মাধ্যমে ব্যবসাভিত্তিক কম্পোস্ট সার ও মাছের খাদ্য উৎপাদন করা যাবে।