‘অভিবাসনের ভবিষ্যৎ বদলে দাও, খাদ্য নিরাপত্তা ও গ্রামীণ উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াও’ (Change the future of migration. Invest in food security and rural development) এ প্রতিপাদ্য নিয়ে প্রতি বছরের মতো এবারও কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (এফএও) এর উদ্যোগে বিশ্ব খাদ্য দিবস উদযাপন ও খাদ্য মেলা ২০১৭ এর আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানীর ফার্মগেটে আ. কা. মু. গিয়াস উদ্দীন মিলকী অডিটোরিয়াম চত্বরে ১৬ হতে ১৮ অক্টোবর তিনদিনব্যাপি খাদ্য মেলা শুরু হয়েছে।
এদিন অনুষ্ঠানের শুরুতে সকাল ১০:০০ টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকে আ.কা.মু. গিয়াস উদ্দীন মিলকী অডিটোরিয়াম চত্বর পর্যন্ত এক বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করা হয়। বিকাল ২:৩০ টায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে খাদ্য মেলার উদ্বোধন ও স্টল পরিদর্শন করেন। পরবর্তীতে মন্ত্রী বিকাল ৩:০০ টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ অডিটরিয়ামে প্রতিপাদ্যের ওপর আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্য রাখেন।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের কৃষি সেক্টরে একটি নিঃশব্দ বিপ্লব ঘটে গেছে। এ বিপ্লব শুরু করেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বর্তমানে এ বিপ্লবের নেতা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং এ বিপ্লবের রুপকার সফল কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। মন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের কৃষির সোনালী সম্ভাবনাকে এগিয়ে নিতে হলে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। কৃষিতে গবেষণার বিষয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, কৃষিতে উন্নত গবেষণার ফলে আমরা খাদ্য উৎপাদনে এগিয়ে গেছি এবং বিশ্বে কাছে আমাদের দেশ একটি মডেল হিসেবে পরিণত হয়েছে। মন্ত্রী কৃষি গবেষণায় বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে গুরুত্বারোপ করেন।
সেমিনারের প্রধান বক্তা কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলা করে আমাদের কৃষি দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশের কৃষকের অদম্য মনোবলের কারণে আমরা প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে কৃষিকে সমৃদ্ধ করতে পেরেছি। এ বছর পরপর বন্যার কারণে খাদ্য উৎপাদনে কিছু সমস্যা হয়েছে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার বিভিন্ন ধরণের প্রণোদনা ও পুনর্বাসন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্ এর সভাপতিত্ত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. মকবুল হোসেন এমপি ও এফএও বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত প্রতিনিধি ডেভিড ডব্লিউ ডোলন। এছাড়াও সেমিনারে বক্তব্য রাখেন, কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. আবদুল মান্নান ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. গোলাম মারুফ।
বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০১৭ উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে প্রতিপাদ্যের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আবদুল মান্নান আকন্দ। মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. ওয়ায়েস কবীর। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. ভাগ্য রানী বণিক। কৃষি মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ বিভিন্ন সংস্থার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ, বিজ্ঞানী, গণমাধ্যমকর্মী প্রমুখ সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।
বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০১৭ উপলক্ষে বেতার ও টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার, মাসিক কৃষিকথার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ, জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র, পোস্টার প্রকাশনা ও বিতরণ, মোবাইল ফোনে এসএমএস-এর মাধ্যমে সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহন নিশ্চিত করাসহ ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। খাদ্য মেলায় সরকারি ও বেসরকারি মোট স্টলের সংখ্যা ৫৭টি। মেলা প্রতিদিন প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এ দিবস উপলক্ষে জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
বিশ্ব খাদ্য দিবসের উদ্দেশ্য হল- ক্ষুধা, অপুষ্টি ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলা, কৃষির উন্নতিতে মনোযোগ দেওয়া, কৃষিভিত্তিক উৎপাদনে উৎসাহ দান করা, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সহায়তা গ্রহণে উৎসাহ দান, গ্রামীণ মানুষ, মূলতঃ মহিলা ও কম উন্নত মানুষদের অবদানে উৎসাহ দান, প্রযুক্তির সমৃদ্ধিকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ছড়িয়ে দেওয়া।
উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপি খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) দীর্ঘদিন কাজ করে চলেছে। এফএও ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও ১৯৭৯ সালে এ সংস্থার ২০তম সাধারণ সভায় হাঙ্গেরির বিজ্ঞানী ড. পল রোমানি বিশ্বব্যাপি খাদ্য দিবস পালনের প্রস্তাব করেন। তার প্রস্তাবের পর ১৯৮১ সাল থেকে প্রতি বছর খাদ্য ও কৃষি সংস্থার জন্মদিন ১৬ অক্টোবর বিশ্ব খাদ্য দিবস পালিত হয়ে আসছে।