ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা):
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সহায়তায় রাজবাঁধের একটি প্লাণ্টে প্রতি মাসে গৃহস্থালির ৩শ’ মেট্রিক টন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রায় ৩০ মেট্রিক টন রাসটিক কপোস্ট জৈব সার উৎপাদিত হচ্ছে, যা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি জমির জৈব গুণাগুণ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন- শুধুই যে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে ঠিক তা নয়, এ ধরনের কার্যক্রমে খুলনা আবর্জনামুক্ত পরিচ্ছন্ন নগরীতে পরিণত হচ্ছে এবং প্লাণ্টের উপার্জিত অর্থে দু’টি কারিগরি স্কুল পরিচালিত হচ্ছে। সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে শত শত কিশোর-কিশোরী আত্মনির্ভরশীল হচ্ছে।
প্লাণ্ট সূত্রে জানা গেছে, কেসিসি এলাকায় প্রতিদিন প্রায় ১২ থেকে ১৪ হাজার মেট্রিক টন গৃহস্থালির বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এসব বর্জ্য ভ্যান গাড়ির মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি থেকে সংগ্রহ করে নগরীর সেকেন্ডারী ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) গুলোতে এনে রাখা হয়। এরপর এসটিএস থেকে ওইসব বর্জ্য গাড়ীতে করে নিয়ে যাওয়া হয় রাসটিক কম্পোস্ট জৈব প্লাণ্টে। প্লাণ্টে সংগৃহীত বর্জ্য থেকে পচনশীল-অপচনশীল বাছাই করে দু’টি ভাগে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে অপচনশীল বর্জ্য থেকে হার্ট গার্বেজ স্থানীয়ভাবে বিক্রি করা হয় এবং বাকি বর্জ্য কর্পোরেশনের ড্যাম্পিং পয়েন্ট রাখা হয়। আর পচনশীল বর্জ্য রাখা হয় সার উৎপাদন প্লাণ্টে। সেখানে ওই বর্জ্য জৈব সারের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
উৎপাদন প্লাণ্টে গড়ে সাড়ে ৪ টন কাঁচামাল এর সাথে প্রতিদিন ১০ ভাগ গোবর, এক ভাগ করাতকলের গুড়ার সংমিশ্রণ ৫ মেট্রিক টন বানিয়ে বেড (পাইল) করা হয়। এরপর ৬৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ৮ থেকে ১০ দিন পর ওই বেড ভেঙ্গে দেয়া হয়। ওই ৮ থেকে ১০ দিনে বেড থেকে অন্তত ৩ কেজি পানি বের হয় যা ট্যাংকীতে সংরক্ষণ করা হয়। এর দুই দিন পর বেড তৈরি করে ওই ধারণকৃত পানি ব্যবহার করা হয়। ১৪ দিন পর ৪০ থেকে ৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ফের বেড ভেঙ্গে দেয়া হয়। ১ দিন রেখে ফের বেড তৈরি করা হয়। তার ১০ দিন পর ফের ১৫ থেকে ২০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় বেড ভেঙ্গে দেয়া হয়। এর ১ দিন পর ফের বেড তৈরী করা হয়। এরপর ১০দিন পর কম্পোস্ট জৈব সারে পরিণত হয়। এভাবে ৪২ থেকে ৪৩ দিনে পচনশীল বর্জ্য পরিপূর্ণ কম্পোস্ট সারে রূপান্তরিত হয়।
জানা গেছে, এ প্লাণ্টে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ মেট্রিক টন আবর্জনা রি-সাইক্লিং করে ১২শ’ কেজি, মাসে ৩শ’ মেট্রিক টন থেকে ৩০ মেট্রিক টন এবং বছরে ৪ হাজার মেট্রিক টন আবর্জনা রি-সাইক্লিং করে ৩শ’ ৬০ মেট্রিক টন কম্পোস্ট সার উৎপাদন করা হয়। যা বাণিজ্যিকভাবে এক কেজি ২১ টাকা, ২০ কেজি ২৬০ টাকা এবং ৪০ কেজি ৪৮০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
রাসটিক কম্পোস্ট জৈব প্লান্টের নির্বাহী পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা মোড়ল নুর মোহাম্মদ জানান, প্লাণ্টে উৎপাদিত এ কম্পোস্ট সার কৃষি কাজে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি জমির জৈব গুণাগুণের মাত্রা মাত্র দেড় ভাগ। কিন্তু এ জৈব সার ব্যবহারে অন্তত ৫ থেকে ৭ ভাগে বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। ফলে কৃষকরা ধান, পান ও নার্সারী ও চিংড়ি ঘের প্রস্তুত করতে ব্যাপকভাবে এ সার ব্যবহার করছে।
তিনি আরো বলেন, এর ফলে শুধুই যে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে ঠিক তা নয়। এ ধরনের কার্যক্রমে খুলনা আবর্জনামুক্ত পরিচ্ছন্ন নগরীতে পরিণত হচ্ছে এবং প্লাণ্টের উপার্জিত অর্থে ১৭ ও ১৮ নং ওয়ার্ডে দু’টি কারিগরি স্কুল ও বর্জ্য শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কারিগরি স্কুল থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আত্মনির্ভরশীল হচ্ছে শত শত কিশোর-কিশোরী।
তিনি বলেন, পর্যাপ্ত ফান্ড না থাকায় চাহিদামতো উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে দাতা সংস্থার সহযোগিতা পেলে বছরে এ প্লাণ্টে অন্তত ১৫ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য রি-সাইক্লিং করা সম্ভব।