নিজস্ব সংবাদদাতা : বাংলার প্রকৃতি, জলবায়ু ও পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদকে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন-চ্যানেল আই প্রকৃতি সংরক্ষণ পদক-২০১৭ প্রদান করা হয়েছে। রাজধানীর তেজগাঁওয়ের চ্যানেল আইয়ের চেতনা চত্বরে ১৬ ডিসেম্বর রাতে এক জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ পদক তুলে দেয়া হয়।
ড. আহমদ একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কর্মপরিকল্পনাকারী ও পরিবেশবিদ হিসেবে সুপরিচিত। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদ প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ২০০৯ সালে পল্লীকর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। একই সালে তিনি বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ দলের সমন্বয়ক ছিলেন। দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ওপেন ওয়ার্কিং গ্রুপে। দক্ষিণ এশিয়ার আন্তঃদেশীয় নদী ও পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা নিয়েও রয়েছে তাঁর বিশেষ গবেষণা কার্যক্রম।
ড. খলীকুজ্জমানের হাতে পদক তুলে দেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসতিয়াক আহমদ। এ সময় সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ রইছউল আলম মন্ডল, বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক সফিউল আলম চৌধুরী, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেড ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। অনুষ্ঠানে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের পক্ষ থেকে ড. আহমদের হাতে এক লাখ টাকার সন্মাননা চেক তুলে দেন ইমপ্রেস গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ মজুমদার। জাপান-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান ডা. সরদার এ নাঈম তাঁর হাতে আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানের সনদপত্র তুলে দেন। অনুষ্ঠানে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন এবং ড. আহমদের জীবন ও কর্ম নিয়ে দুইটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। পরে মুকিত মজুমদার বাবুর লেখা ‘স্বপ্নের প্রকৃতি’ গ্রন্থ ও ‘প্রকৃতি ও জীবন’ -এর গত এক বছরের প্রচারিত অনুষ্ঠানমালার ডিভিডির মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা।
ইসতিয়াক আহমদ বলেন ‘বর্তমান সরকার সবুজ বাঁচাতে দেশজুড়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছে। এই আন্দোলনে বাংলার মানুষ সামিল হয়েছেন। এখন মানুষের মনে প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষা বিশেষ তাগিদ সৃষ্টি হয়েছে।’ পদক প্রাপ্তির অনুভূতি প্রকাশ করে ড. আহমদ বলেন ‘যে যার অবস্থান থেকে প্রকৃতি সংরক্ষণ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এ পদক আমাকে অনুপ্রেরণা জোগাবে’। স্বাগত বক্তব্যে মুকিত মজুমদার বলেন ‘নিজের ঘর থেকে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। তবে প্রকৃতি ও পরিবেশ নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা যাবে।’ ফরিদুর রেজা সাগর বলেন ‘প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন আট বছর আগে যে পরিকল্পনা নিয়ে তারা যাত্রা শুরু করেছিল। তা অব্যাহত রয়েছে। আরো নতুন নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে যা পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় বিশেষ অবদান রাখবে।’
অনুষ্ঠানের শুরু হয় চ্যানেল আইয়ের বাংলা গানের শিল্পী খায়রুলের কণ্ঠ ও সুরে, তুষার কান্তি সরকারের লেখা ‘মানুষের হৃদয়ে ছড়িয়ে গেছে প্রকৃতি ও জীবনের গান’ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে একঝাঁক নৃত্যশিল্পী। এর পর দেশের গান পরিবেশন করেন রথীন্দ্রনাথ রায় ও শাহীন সামাদ। অনুষ্ঠানে সদ্যপ্রয়াত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক ও প্রকৃতিবিদ দ্বিজেন শর্মার স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং ৮ বছর পূর্তি উপলক্ষে মঞ্চে কেক কাটা হয়।
২০০৯ সালে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন প্রকৃতি সংরক্ষণের অভিপ্রায় নিয়ে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০১০ সালের ১ আগস্ট চ্যানেল আইয়ে শুরু হয় নতুন মাত্রার গবেষণা, তথ্যবহুল, সচেতনতা ও শিক্ষামূলক ধারাবাহিক প্রামাণ্য অনুষ্ঠান ‘প্রকৃতি ও জীবন’। এরই মধ্যেই অনুষ্ঠানটি দেশ-বিদেশে দর্শকনন্দিত হয়েছে। এ ছাড়াও সচেতনতা বাড়াতে প্রকৃতি সংরক্ষণে বিভিন্ন কর্মকা- পরিচালিত হচ্ছে ফাউন্ডেশন থেকে। পাশাপাশি একজন পরিবেশপ্রেমীকে প্রতিবছর দেয়া হচ্ছে প্রকৃতি সংরক্ষণ পদক। এর আগে প্রথমবারে মতো প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন-চ্যানেল আই ‘প্রকৃতি সংরক্ষণ পদক-২০১১’ তুলে দেয়া হয় নিসর্গী দ্বিজেন শর্মার হাতে। এরপর ২০১২ সালে এ পদক পান বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. রেজা খান। ২০১৩ সালে এ পদক পান পাখিপ্রেমিক ইনাম আল হক। পানিসম্পদ গবেষণা ও ব্যবস্থাপনায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৪ সালে এ পদক পান ড. আইনুন নিশাত। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ২০১৫ সালে এ পদক পান দেশের প্রথম মহিলা বন্যপ্রাণিবিদ অধ্যাপক ড. নূর জাহান সরকার। গত বছর এ পদক পেয়েছেন ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ।
বাংলার প্রকৃতি পরিবেশ রক্ষায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ড. কাজী খলীকুজ্জমানের হাতে পদক তুলে দেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসতিয়াক আহমদ