নিজস্ব প্রতিবেদক : “আমি আশরাফুল ইসলাম। আমার বাবা একজন রিকশাচালক। পড়াশোনা করানোর মতো ক্ষমতাতো দুরে থাক সংসার চালানোই তার জন্য কস্টকর। আমি ছিলাম একজন ঝড়ে পড়া ছাত্র। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে ঢাকায় চলে আসি। ঢাকায় এসে দু’তিন বছর এখানে সেখানে কিছু কাজ করতে থাকি। তারপর ভাবতে থাকলাম আমি যদি অস্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনাটা করতে পারি তবে হয়তো লেবার সরদার হতে পারবো। অস্টম শ্রেণী পাস করলাম এবং তারপর আবার ঢাকায় চলে আসলাম। ঢাকায় এসে একটি গার্মেন্টেসে কনস্ট্রাকশন শ্রমিক হিসেবে এবং অতপর লেবার সর্দার হিসেবে কাজ করলাম। এরপর ভাবলাম এসএসসি টা পাশ করতে পারলে হয়তো আরো একটু বড় দায়িত্বপূর্ণ কাজ করতে পারবো। স্বপ্নটা এবার আরো এক ধাপ উপরে নিলাম। এসএসসি পাশ করলাম। এসএসসি পাশ করার পর চিন্তা হলো এইচএসসি পাশ করলে আরো ভালো কিছু করতে পারবো। বিভিন্ন জায়গায় কাজ ও টিউশনি করে এবার করলাম এইচএসসি পাশ। এরপর স্বপ্নটাকে আরেকটু বড় করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কথা চিন্তা করলাম। এখন আমি হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ ডিপার্টমেন্টের ছাত্র। আমার বাবা এখনো রিকশা চালনা মুন্সিগঞ্জে। বাবা বয়সের ভাড়ে রিকশা চালাতে কস্ট হয়। তবুও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি এবং আমি প্রতিজ্ঞা করেছি জীবনে অসৎ হবোনা।”
কারো বাবা বিছানায় শয্যাশায়ী, কারো দিনে একবার খেয়ে না খেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া এ রকম বহু শিক্ষার্থীর সংগ্রাম ও হৃদয়স্পর্শী গল্প শোনা গেল মেধাবী কিন্তু আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল ছাত্র-ছাত্রীদের মুখে শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর এসিআই সেন্টারে আয়োজিত ‘হোপস্ বার্ষিক সাধারণ সভা ও বৃত্তি প্রদান’ অনুষ্ঠানে। হোপস (HOPES-Helping Organization for Promising and Energetic Students) মূলত অরাজনৈতিক এবং অলাভজনক একটি সংগঠন যার কাজ হলো সমাজের আর্থিক সুবিধাবঞ্চিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারী কলেজে পড়া ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি প্রদান।
অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তৃতায় হোপস এর নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এবং প্যারাগন গ্রুপের পরিচালক ইয়াসমিন রহমান বলেন, আমরা প্রতি বছরই মেধাবী শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করি এবং তাদেরকে স্কলারশিপ দেয়ার ব্যবস্থা করে থাকি। বিগত প্রায় ২২ বছর থেকে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেধাবী শিক্ষার্থী যারা অর্থনৈতিক কারণে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখতে সক্ষম না, তাদেরকে সহযোগীতা করার জন্য হোপস এ ধরনের আয়োজন করে আসছে। আমরা এ ধারা অব্যহত রাখার পাশাপাশি ভবিষ্যতে আরো বেশি শিক্ষার্থীদের এ বৃত্তির আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছি।
হোপস এর সভাপতি এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. এম. আফজাল হোসেন বলেন, হোপস স্কলারদেরকে ভবিষ্যতে সংগঠনের কান্ডারির দায়িত্ব পালন করতে হবে। এখন থেকেই তোমাদের সেভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। কর্মজীবনে যেয়ে বর্তমানের কস্টটাকে মনে রেখে সৎ থাকার চেষ্টা করবে।
এসিআই লিমিটেড এর চেয়ারম্যান আনিস উদ দৌলা বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য হোপস্’র উদ্যোগটি অনন্য। এতে করে অন্যান্য মানুষ এবং শিক্ষার্থীরা উৎসাহিত হবেন। সমাজের অন্যান্য বিত্তবানরা এমন মহৎ কাজে যুক্ত হলে সবার জন্য সুফল বয়ে আনবে।
এসিআই লিমিটেড এর প্রধান নির্বাহী এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সংগঠনের সদস্য ড. এফএইচ আনসারী বলেন, হোপস এর বৃত্তি পাওয়া রীতিমতো গর্বের বিষয়। কারণ এখানে প্রকৃত মেধাবীদের বৃত্তি দেয়া হয়। এ সময় হোপস -এ বিশেষ অবদান রাখার জন্য ড. আনসারীর হাতে বিশেষ সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়।
বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান সারাদেশ থেকে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং সরকারি কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থীসহ অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং প্যারাগন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মসিউর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক ড. এম জাকির হোসেন, কোষাধ্যক্ষ ড. রওশন আরা বেগম, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রফেসর ড. মো. গোলাম রাব্বানী, প্রফেসর ড.নুূর মোহাম্মদ তালুকদার, আরমা গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক, সোনিয়া লিমিটেড -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনায়েত উদ্দিন মো. কায়সার খান, বারি’র সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ড. সোহেলা আখতার, মিসেস এ. মতিন চৌধুরী, মিসেস আনিসউদ্দৌলা, ড. শামীম মতিন চৌধুরী, মি. এ্যান্ড মিসেস ব্রি. জে. মশিহুদ্দৌলা, মিস. রুবাবা দ্দৌলা ছাড়াও সংগঠনের অন্যান্য সদস্যগণ এবং সাবেক স্কলার।
উল্লেখ্য, হোপস এ বছর মোট ১৩১ জন মেধাবী ছাত্রছাত্রীকে বৃত্তি প্রদান করে।