ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): দেশে ধানের দাম বৃদ্ধিতে খুলনা জেলার ডুমুরিয়ার বেশীর ভাগ কৃষক এবার বোরো চাষে ঝুঁকছে। চলতি ইরি বোরো মৌসুমে উপজেলায় ২১ হাজার ১ শত ৬০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলে তারও অধিক জমিতে চাষাবাদ হবে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।
খুলনা ডুমুরিয়া কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ৪২টি ব্লকে চলতি মৌসুমে ২১ হাজার ১ শত ৬০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের আওতায় আনা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় এবছর আরও ১ হাজার হেক্টর বেশী জমিতে বোরো আবাদ হচ্ছে। এরমধ্যে উচ্চ ফলনশীল দেশীয় ব্রিধান-২৮, ৫৮ ও ৬৭ জাতের ১৫ হাজার ৬ শত ৩ হেক্টর জমি এবং হাইব্রিড এসএল-৮এইচ, সিনজেনটার-১২০১,১২০৩, তেজ গোল্ড, হিরা, আফতাব, আগমনি, এসিআই,ছক্কা ও ব্র্যাকের শক্তি-২ জাতের ধান চাষ হচ্ছে ৫ হাজার ৫ শত ৫৭ হেক্টর জমিতে। আর বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৩ শত ৬০ হেক্টর জমি।
চলতি মৌসুমে ধানের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় কৃষকরা পতিত জমিতেও চাষাবাদ করছে। গত বছর প্রতি মন বোরো ধানের বাজার দর ছিল ৭ শত থেকে ১ হাজার টাকা। এ বছর সেই ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২ শত টাকা। এ বছর দেশীয় জাতের ধান বীজের চাহিদা কম থাকায়, বিশেষ করে ২৮ জাতের ধানে ব্লাষ্ট রোগ আক্রান্ত’র ভয়ে এবং উচ্চ ফলনের আশায় হাইব্রিড ধান চাষে ঝুঁকছে অধিকাংশ কৃষকরা। এ সুযোগে বাজারে বীজ ডিলাররা কৃষকের কাছে অধিক মুল্যে হাইব্রিড জাতের বীজ বিক্রি করছে এমন অভিযোগ একাধিক ব্যক্তির।
ইতোমধ্যে অনেক ব্লকে চাষীরা ধান রোপন শুরু করেছে, আবার অনেকেই এখন নতুন বীজতলায় বীজ বোপনও করছে। শোভনা ইউনিয়নের পারমাদারতলা গ্রামের কৃষক নন্দলাল মন্ডল বলেন,গত ১৫ দিন পূর্বে আমি এক একর জমিতে বোরো ধান রোপন করেছি, গাছগুলি খুবই ভাল ভাবে দাঁড়িয়েছে এবং এখনও কোন বালাইয়ের আক্রমন হয়নি।
অপরদিকে মাগুলখালী ইউনিয়নের খোরেরাবাদ গ্রামের কৃষক পুলিন মন্ডল বলেন, এ বছর নতুন প্রায় তিন একর জমিতে ইরি বোরো চাষ করার লক্ষে বীজতলায় বীজ ফেলেছি চারাও ভাল হয়েছে। আর কয়েক দিনের মধ্যে ধান রোপন শুরু করবো। এর আগে আমি ওই জমিতে শুধুমাত্র মাছ চাষ করতাম এ বছর নতুন ধান চাষ করছি। গুটুদিয়া ব্লকের কৃষক শংকর মহলদার জানান, ধানের বাজার মুল্য বেশী হওয়ায় এবছর তিনি ৫ বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের ধানচাষ করেছি।
এ প্রসঙ্গে ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মো. নজরুল ইসলাম জানান, চলতি বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় বীজ,সার ও সেচের কোন সংকট নেই। সরকার কৃষকের দোড়গোড়ায় সার পৌছাঁনোর জন্য প্রতিটি ইউনিয়নের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে একজন করে খুচরা ডিলার নিয়োগ দিয়েছে।
তিনি বলেন, ব্রিধান-২৮ জাতের ধানের বয়সকাল বেশী হওয়াতে রোগবালাই বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দুই বছর ধরে এ জাতের ধানে ফলনের মুহুর্তে অনেক কৃষকের ক্ষেতে ব্লাষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে ফসল নষ্ট হয়েছে। ফলে কৃষকরা হাইব্রিড ধান চাষে ঝুঁকছে। তাছাড়া আমরা সার্বক্ষনিক মাঠে গিয়ে লোগো পদ্ধতিতে জমি রোপন ও পার্সিং পদ্ধতিতে পোকা দমনে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।