গৌতম কুমার রায় : মশা শুধু আমাদের দেশেই নয়, এই সমস্যা এখন অনেক উন্নত দেশেও বিরাজমান। মশা নিবারনের জন্য গ্রামে তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করলেও শহরাঞ্চলে অনেক রকম মশানাশক কেমিক্যালস ব্যবহার করছে। বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশন, পৌর সভাগুলো প্রতিনিয়ত মশামুক্ত নাগরিক সুবিধা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। স্থানীয়ভাবে এই নাগরিক সুবিধা দিতে গিয়ে ব্যয় করা হচ্ছে অনেক অর্থ। অথচ এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের কোনো স্থায়ী সমাধান আসছে না। বিষাক্ত ডিডিটি পাউডার ও অন্য কোনো ওষুধ ছাড়াও ফগ মেশিনের ব্যবহারে মশা যাচ্ছে না। এখন মশা থেকে পরিত্রাণের জন্য ধূপ ধোঁয়ার প্রবণতা বেড়েছে। গ্রামে বাড়ি বাড়ি মশার কয়েলের ব্যবহার সহ ধূপ ধোঁয়া দেয়ার প্রচলন ছিল আগে থেকে। শহরে এখন ধূপ দেয়ার জন্য পেশাদার ব্যবসা চালু হয়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় ঘরে ঘরে ধূপ ধোঁয়া জ্বালিয়ে মশাকে তাড়িয়ে নিতে চালু হয়েছে বাণিজ্যিকতা। তবুও মশা যাচ্ছে না। মশার হাত থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না।
দিন দিন মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় মশার কয়েল ব্যবহার বেড়েছে। এই কয়েল শিশুদের স্বাস্থ্যগত হুমকির কারণ। এর সাথে পাল্লা দিয়ে প্রচলন বেড়েছে মশারির। একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে মশার উপদ্রব হতে সাময়িক সময়ের জন্য নিজেকে মুক্ত রাখতে মশারি ব্যবহার বেড়েছে অনেক। মাথাপিছু এর ব্যবহারের পরিমাণ ০.১৪ মিটার। মশারি ব্যবহারে শহরের তুলনায় গ্রামে বেশি। মাথাপিছু ব্যবহারে গ্রামে ০.১৮ মিটার এবং শহরে ০.১১ মিটার। এছাড়া মশার সমস্যার ক্রমপুঞ্জিভূত কারণে মশারি উৎপাদন এখন শিল্পে রূপ নিয়েছে। যা দেশের চাহিদা মেটানোর পরে রপ্তানি করা হচ্ছে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশে মশা উৎপাদনক্ষেত্র সহজে ধ্বংস করার পদ্ধতি না থাকায় মশার সমস্যা তাদের স্থায়ী সমস্যা হিসেবে রূপ নিয়েছে। অথচ আমাদের দেশে প্রাকৃতিক উপায়ে মশা ধ্বংস করার সহজ পদ্ধতি রয়েছে। প্রথমত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে আমরা মশার প্রজনন ক্ষেত্রগুলোকে নষ্ট করে দিতে পারি। এছাড়া ডোবা, জলাশয়ে প্রাকৃতিক মৎস্য উৎপাদন করে আমরা মশার প্রজনন ক্ষেত্র নষ্ট করে দিতে পারি। মশা নিবারণে প্রাকৃতিক মৎস্য চাষের ব্যবহার অত্যন্ত ফলপ্রসূ। প্রত্যেকটি বাড়ির আশপাশ এবং সৃষ্ট পচা জলাশয়ে অথবা শহরের ড্রেন বা পয়ঃনিষ্কাশন খালের পানিতে প্রাণিজ খাদ্য গ্রহণকারী মাছ বিশেষ করে মাগুর, ফলি, সাকার, জিওল, চাঁদা বা চান্দা, খলিশা, তেলাপিয়া এবং তে-চোখা মাছ চাষ করে অথবা সংরক্ষণ করলে মশা নিবারণ সম্ভব। কেননা এ জাতীয় মাছ পানির উপরে ভাসমান মশার ডিম, মূটকীট এবং শূটকীট খেতে দারুণ পছন্দ করে।
মাছের প্রতি ২৪ ঘণ্টায় শূককীট ও মূককীট খাওয়ার হিসেব:
সাধারণত বর্ষা মৌসুমে এই মাছগুলো জলাশয়ে ছেড়ে দিতে হবে। যদি জলাশয়ে আগে থেকে এ প্রজাতির মাছগুলো থেকে থাকে তবে তা সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। এদেরকে বেঁচে থাকার পরিবেশ নষ্ট করে দিতে হবে। প্রাকৃতিক উপায়ে মাছ চাষের মাধ্যমে মশা নিধন করলে বিষাক্ত পাউডারের ব্যবহার বা ঘরে কয়েলের বিষাক্ততা থেকে রক্ষা পাওয়া যেমন সম্ভব, তেমনি মশারির ব্যবহার কমে যাওয়ায় একজন ভোক্তা আর্থিক সাশ্রয় পাবে, আবার অতিরিক্ত মশারি রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা ঘরে তোলাও সম্ভব হবে।
এছাড়া আমাদের দ্রুত পরিবর্তিত প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করাও সম্ভব হবে। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে মশা শুধু মানুষের জন্য অস্বস্তিকর নয়। আমাদের গৃহপালিত পশুরাও মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ। সে জন্য খুবই অল্প পয়সা ব্যায় করেই মশার হাত থেকে রক্ষা পেতে, প্রাকৃতিক উপায়ে মাছ চাষের এই পদ্ধতি গ্রহণ করলে আমাদের স্বস্তি ও লাভের পাশাপাশি প্রাকৃতিক মৎস্য উৎপাদন ও সংরক্ষণে সহায়ক অবদান রাখতে পারবে।
লেখক: গবেষক, উদ্ভাবক ও পরিবেশ ব্যক্তিত্ব
বেশ লাগছে। দিনে দিনে মান বাড়ছে।
ধন্যবাদ।