দেবশ্রী সরকার প্রিয়া: কক্সবাজার বা সমুদ্রসৈকত কিংবা বর্ডারের আশেপাশের পর্যটন কেন্দ্রে বেড়াতে গেলে আমাদের বেশিরভাগেরই প্রিজারভেটিব ও বার্মিজ খাবারের প্রতি আগ্রহ থাকে। শুধু নিজের খাওয়ার জন্যই নয় বরং পরিবারের ছোট-বড় প্রিয় সদস্যদের খুশি করতে ব্যাগ ভরে নিয়েও আসি। অন্য কিছু না হোক চকোলেট/আচার যেন আনতেই হবে! কিন্তু এসব আচারের নামে আমরা কি খাচ্ছি আদৌ কি জানি?
আমাদের দৈনন্দিনকার আলোচনায় ফরমালিন, কীটনাশক কত কিছুই তো আসে কিন্তু বিদেশ থেকে আমদানিকৃত প্রিজারভেটিব জাতীয় খাদ্যদ্রব্য যেমন, বার্মিজ আচারের নামে কাড়িকাড়ি টাকা খরচ করে যে সব বালি, পাথর খাচ্ছি সেগুলো যেন কোন খবরই নয়! আমদানিকৃত এসব খাদ্যগুলো সারা দেশের ছোট-বড় কনফেকশনারি দোকানগুলোতে প্রায়ই সরবরাহ করা হচ্ছে। বিশেষ করে পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় এসব আচার। দেখা যাচ্ছে সাধারণ মানুষ নির্দিধায় বার্মিজ আচারগুলো কিনছে, নিজে খাওয়ার জন্য পাশাপাশি পরিবার-পরিজনদের উপহার দেয়ার জন্য।
সম্প্রতি এ প্রতিবেদক এ জাতীয় বেশ কিছু আচার উপহার পায়। মজা করে খাওয়ার উদ্দেশ্যে প্যাকেট খুলে মুখে দিয়ে চিবোতেই কটকট শব্দ হওয়াতে সন্দেহ হয়। মুখ থেকে বের করে দেখা যায় আচারের সাথে পাথর চিবাচ্ছিল এতক্ষণ! আবার অনেকে এসব খাওয়ার সময় ইট, বালি, পাথর, চুল এমনকি কীটপতঙ্গ পাওয়ার অভিযোগও করেছেন। অথচ কতটা ভরসা করেইনা আমরা এসব আচার কিনছি, খাচ্ছি আবার উপহারও দিচ্ছি। অনেকে আবার পরিবারের ছোটদের আবদার মেটাতে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু তারা অজান্তে এসব অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। তবুও এসব তথ্য আমরা হেলাখেলায় দেখছি।
অনেক সময় অনেকে প্রমাণ পেয়ে দোকানগুলোতে অভিযোগ করছে। এতে করে কিছুদিন হয়তো দোকানে এগুলো রাখছে না। কিন্তু কিছুদিন পর তারা আবার পুরোদমে এসব অস্বাস্থ্যকর বার্মিজ আচার বিক্রি করে যাচ্ছে। তবে কি ক্রমান্বয়ে এসব চলতেই থাকবে? এর জন্য কি কোনো পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন নেই!
দোকান থেকে এসব পাথর-বালি যুক্ত খাবারগুলো পেটের ভেতর চলে গেলে কি কেবল মল আকারেই বেরিয়ে যায়? না, বরং সেগুলোতে মিশে থাকা রাসায়নিক যৌগ খাদ্যে স্লোপয়জন হিসেবে কাজ করে চলেছে। যা খেয়ে প্রতিনিয়ত দেশের অনেক লোক বিভিন্ন আন্ত্রিক পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। এর ফলেও দেখা যাচ্ছে দিন দিন নাম না জানা নতুন নতুন দূরারোগ্যের সৃষ্টি হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে শুধু আমদানি নয়, বরং ব্যবসার নামে এদেশেও কক্সবাজারসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে গড়ে উঠেছে অস্বাস্থ্যকর ও ভেজালযুক্ত আচারের কারখানা। এসব কারখানার মালিকদের বিরুদ্ধে কোনো প্রশাসনিক শক্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। মাঝে মাঝে কিছু অভিযানে ধরা পড়লেও জরিমানা দিয়ে পাড় পেয়ে যাচ্ছে। অভিযান শেষে আবারও তারা এমন ব্যবসায় লিপ্ত হচ্ছে। ফলে অসৎ ব্যবসার মাধ্যমেই কয়েক বছরেই মধ্যেই কোটি কোটি টাকার মালিক হচ্ছে। ওদিকে জনসাধারণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।