নিজস্ব সংবাদদাতা: দেশীয় প্রজাতির সাথে বিভিন্ন মৌমাছির ক্রস করে কি ধরণের প্রজাতি আসতে পারে তা নিয়ে গবেষণার আহবান জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, এম.পি। তিনি বলেন, দেশী প্রজাতির সাথে বিদেশ থেকে আনা মৌমাছির ক্রস করে নতুন জাত উদ্ভাবন করা যেতে পারে। এসব মৌমাছির মধু আহরণ ও ফসলে কি রকম পরাগায়ন ঘটাতে পারে তা নিয়ে কাজ করা দরকার।
রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে রাজধানীর ফার্মগেটের আ. কা. মু. গিয়াস উদ্দীন মিল্কী অডিটরিয়াম চত্বরে দুদিনব্যাপি জাতীয় মৌ মেলা ২০১৮ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশীয় মৌমাছি নিয়েও গবেষণা হওয়া উচিৎ। এরা যুগ যুগ ধরে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও আমাদের আবহাওয়ায় টিকে আছে। তিনি বলেন, সকল শ্রেণী পেশা ও বয়সের মানুষই মধু খায়। মধু খেয়ে মানুষ নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করে। গ্রামে নতুন কোন শিশুর জন্ম হলে আগে প্রথমেই মুখে মধু দেওয়া হতো। মৌ চাষের মাধ্যমে ফলন শতকরা ২০ ভাগ বাড়ানো সম্ভব। শুষ্ক মৌসুমে আমরা বিভিন্ন ধরনের ফুল পাই। মৌ চাষের এবং মধু আহরণের উপযুক্ত সময়।
পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাওয়ার কথা পুনরায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পানির স্তর নিচে নেমে নামছে। বোরো উৎপাদনে পানির খরচও বেশি হয়। এক কেজি ধান উৎপাদন করতে ৩ হাজার ২শ লিটার পানি খরচ হয়। আমাদের আউশ ও আমনের দিকে জোর দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, দানাদার খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মাঝেমধ্যে আমাদের দানাদার খাদ্য আমদানি করতে হচ্ছে। আর এ তালিকায় সবচেয়ে বেশি পরিমাণে রয়েছে গম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্ বলেন, মৌচাষে আগ্রহীদের নাম নিবন্ধন করে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। কাঁচা মধুকে প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানির আহবান জানান।
মেলা উপলক্ষ্যে উদ্দীন মিল্কী অডিটরিয়ামে বাংলাদেশে মৌ চাষ সম্প্রসারণ, সমস্যা ও সম্ভাবনা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ব বিভাগের প্রফেসর সাখাওয়াৎ হোসেন। মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নেন বিসিকের মৌ চাষ উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক খোন্দকার আমিনুজ্জামান ও এগ্রো প্রসেসিং এসােসিয়েশনের সভাপতি এ এম ফখরুল ইসলাম মুন্সী। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ মহসীনের সভাপতিত্বে সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন ডিএই’র হর্টিকালচার উইংয়ের পরিচালক কৃষিবিদ মিজানুর রহমান।
‘ফসলের মাঠে মৌ পালন, অর্থ পুষ্টি বাড়বে ফলন’ প্রতিপাদ্যে মেলার আয়োজন করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। মেলা উপলক্ষ্যে সকালে এক র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় সরকারি-বেসরকারি ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের ৬০টি স্টল রয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ করা সরিষা, ধনিয়া, তিল, কালিজিরা, লিচু এসব ফসলে মৌ-চাষ, মধু আহরন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন মেলায় আসা দর্শনার্থীরা। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।