নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সবসময়ই কৃষিবান্ধব। বঙ্গবন্ধু কৃষি উন্নয়নের যে জয়যাত্রা শুরু করেছিলেন বর্তমান সরকার তা অনুসরণ করে সে অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রেখেছে। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের সময় ৪০ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি ছিল, সে সময়ে সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে ৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যার পরেও কেউ না খেয়ে মারা যায়নি বরং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জিত হয়েছিল। বাংলাদেশকে আমরা ২০০১ সনে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ রেখে দায়িত্ব হস্তান্তর করলেও আবার ২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময় আবারও ৩০ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। ফলে সরকার গঠনের পর পরই কৃষি উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থাকে আধুনিক এবং সুসংগঠিত করার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ মার্চ, বৃহস্পতিবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত কৃষি খাতে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় এ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে করেন এসব কথা বলেন। কৃষি খাতে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ২৬ জন ব্যক্তি ও ৬ টি প্রতিষ্ঠানসহ ৩২ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২৩ প্রদান করা হয়।
তিনি বলেন, জাতির পিতার রাজনীতির লক্ষ্যই ছিল শোষণ, বঞ্চনা, অবহেলা থেকে মুক্ত করে বাংলার আপামর মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানো। মহান স্বাধীনতা অর্জনের পর পরই জাতির পিতার লক্ষ্য ছিল কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের সমৃদ্ধি আনয়ন। সে লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু স্বল্পমূল্যে কৃষি উপকরণ বিতরণ, কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান তৈরি ও পুনর্গঠন, খাদ্য মজুদের জন্য খাদ্য গুদাম তৈরি, সেচ কাঠামো তৈরিসহ সুদূরপ্রসারি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। কৃষি উৎপাদনে উৎসাহ জোগাতে জাতির পিতা ১৯৭৩ সালে এ পুরস্কার প্রর্বতন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কারও কাছে হাত পেতে নয় বরং আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্ব সভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াব। সরকারের ধারবাহিকতার কারণেই দেশ আজ বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল। জাতির পিতার আকাক্সক্ষাই ছিলো উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আমরা প্রতিষ্ঠা করব এবং সেলক্ষ্যে কৃষি আমাদের মূলশক্তি বলে কৃষিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেই। এ সময় তিনি পদকপ্রাপ্ত সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অভিনন্দন জানিয়ে তাঁদের সফলতা কামনা করেন এবং তাঁদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ এমপি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু জানতেন উন্নয়নের মূল গ্রোতে কৃষিকে সম্পৃক্ত করতে হবে। তাই সদ্য স্বাধীন দেশে তিনি কৃষি উন্নয়নে সুদূরপ্রসারি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। এরই লক্ষ্যে জাতির পিতা ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার’ প্রবর্তন করেন। এটি কৃষিতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি। কৃষিতে জড়িত সবাইকে উৎসাহিত, অনুপ্রাণিত করতে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। কৃষি উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন তিনি বলেন, সবার অংশগ্রহণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলব এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
সভাপতির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর চিন্তা ও দর্শনের মধ্যে চিরকালই তিনি লালন করেছেন বাঙালির আশা-আকাক্সক্ষার কেন্দ্রবিন্দু গ্রামের কৃষক-ক্ষেতমজুর-শ্রমজীবী মানুষকে। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন গ্রাম-ভিত্তিক বাংলার উন্নতি মানে দেশের উন্নতি। তাই স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশ পুনর্গঠনে ১৯৭২-৭৩ সালে ৫০০ কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেটের মধ্যে কৃষি উন্নয়নের জন্য ১০১ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিলেন। উন্নয়নের মূলধারায় কৃষিকে অগ্রাধিকার দেয়ার ফলে ১৯৭৩ সালের মধ্যেই ধ্বংসপ্রাপ্ত কৃষি-অবকাঠামো পুনঃনির্মাণ করা সম্ভব হয়েছিল। কৃষকের ভাগ্যোন্নয়নে বঙ্গবন্ধু কৃষিতে প্রয়োজনীয় অর্থায়নের জন্য কৃষি ব্যাংক স্থাপন করেন। ১৯৭৪ সালে বৃক্ষরোপণ অভিযান শুরু করেছিলেন। কৃষি উৎপাদনে গতিশীলতা আনয়নসহ কৃষককে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে তিনি ১৯৭৩ সালে প্রবর্তন করেছিলেন জাতীয় কৃষি পুরস্কার।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের গৃহীত বিভিন্নমুখী নীতি ও উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে খাদ্যশস্য ও অন্যান্য কৃষিজ পণ্য উৎপাদন ব্যবস্থায় গত কয়েক বছর ধরে অব্যাহতভাবে ঊর্ধ্বমূখী প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। গত ০৯ বছরে খাদ্যশস্যের মোট উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। একইভাবে অন্যান্য দানাদার, ডাল, তেল শস্যসহ পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্যশস্য এবং বিভিন্ন শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদনেও অব্যাহতভাবে ঊর্ধ্বমুখী অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বর্তমান জনবান্ধব সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের ফলে ধান, সবজি, আম, আলু, পেয়ারা ও মাছ উৎপাদনে পৃথিবীতে এসব কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী সর্বোচ্চ ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থান নিশ্চিত হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্য ধরে রাখাসহ আগামী দিনের কৃষিকে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে কৃষি সংশ্লিষ্ট সবাইকে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার আরও উদ্দীপ্ত ও অনুপ্রাণিত করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জনাব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্ স্বাগত বক্তব্যে বলেন, কৃষি উন্নয়নের অব্যাহত ধারবাহিকতায় বাংলাদেশ এখন চাল উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ, শাকসবজি উৎপাদন বৃদ্ধির হারে তৃতীয়, পাট উৎপাদনে দ্বিতীয় ও কাঁচা পাট রপ্তানিতে প্রথম, আলু ও পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, আম উৎপাদনে সপ্তম, মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে পঞ্চম। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষিতে অনুপ্রেরণা জোগাতে ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার প্রবর্তন করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রবর্তিত এ পুরস্কার প্রদানকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্য ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ট্রাস্ট আইন ২০১৬’ প্রণয়ন করা হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে এ পুরস্কার প্রবর্তনের পর থেকে এ পর্যন্ত সর্বমোট ১০৭৩ ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকে কৃষি পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। ১৪২৩ বঙ্গাব্দে ১০টি ক্যাটাগরিতে মোট ৩২জন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। পুরস্কার বিজয়ীরা নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে আরও অনুপ্রাণিত হবেন এবং অন্যরাও উৎসাহিত হবেন বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।