কৃষিবিদ ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম: প্রতিবছর ৮মার্চ বিশ্ব নারী দিবস। নারী আমার জননী ভগিনি কন্যা জায়া। এরা আমার জীবনে মরণে আদর স্নেহ সোহাগ মায়া মমতা ভালোবাসার সহজাতসঙ্গী। এদের প্রেরণা অনুপ্রেরণা সহযোগিতা সহমর্মিতা দান অবদান উৎসর্গ ছায়ার মতোযুক্ত থেকে আমাদের যাপিত জীবনে। কল্যাণ এবং মঙ্গল সফলতা সমৃদ্ধি বয়ে আনে প্রতি মুহূর্তে। কণ্টকমুক্ত ফুলেল আয়েশি করে তোলে আমাদের চলমান সময়কে। সেজন্য এরাই আমাদের বিশুদ্ধতম অতিআপনজন। এরা জীবনকে উৎসর্গ করে আমাদের সাজায় বাজায় সুন্দরের আবাহনে শুদ্ধচেতনার কাঙ্ক্ষিত বাতিঘরে পৌছে দেয় নিরলসভাবে কোন কিছুর প্রত্যাশা না করে।
জাতি সংঘের ঘোষণা অনুযায়ী ১৯৭৫ সাল থেকে সারা বছর ৮ মার্চ আর্ন্তজাতিক নারী দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। নারীর প্রতি সব ধরণের বৈষম্য রোধ, অধিকার ও ক্ষমতায়ন, নারীর উন্নয়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণে সংশ্লিষ্টতা,গণমাধ্যমে অভিগম্যতা, সুযোগ এবং অধিকার ও অংশগ্রহণ বাড়ানো, জেন্ডার সমতা, কর্মস্থলে নারী পুরুষের সমব্যবহার, সমমজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, যথাযথ ও সমজীবন তৈরিতে গুরুত্বারোপ করতে পুরুষের হৃদ্দিক সচেতনতা ও কার্যকর ভূমিকা রাখার বিষয়টি আবশ্যকীয়ভাবে বিবেচনা করতে হবে। নারীর জন্য পুরুষ এ কথাটি যেমন ভাবতে হবে তেমনি পুরুষের জন্য নারী এটা ভেবে মনে নিয়ে মেনে নিয়ে আগামির কাজ করতে হবে। এবারের প্রতিপাদ্য সময় এখন নারীর: উন্নয়নে তারা বদলে যাচ্ছে গ্রাম-শহরের কর্ম-জীবনধারা (Time is Now: Rural and urban activists transforming women’s lives)। নারী পুরুষ সমতা উন্নয়নে যাত্রা, বদলে যাবে দেশ কাজে আসবে নতুন মাত্রা।
পুরুষের মজুরি নারীর তুলনায় বেশি। কিংবা নারীর মজুরি অনেক কম। অথচ কাজ করে অনেক বেশি। পুরুষের তুলনায় নারীর কাজে সিস্টেম লচও অনেক কম । আমাদের পরিবারের প্রতিটি ঘরে পুষ্টির সমতা সুনিশ্চিত করতে হবে। কেননা এখনও কোন কোন পরিবারে ছেলেকে ১টা আস্ত ডিম দেয়, মেয়েকে অর্ধেক দেয়। ছেলেকে মুরগির রানের মাংস দেয়, মেয়েকে পাখনা, হাড্ডি দেয়। এটা কিন্তু পরিবারের মা-ই করেন। বিয়েতে নারীকে যৌতুকের ইস্যু তুলে অমর্যদায় নারীকে মূল্যহীন করা হয়। ধান উৎপাদন কৌশলে মোটামুটি ৩০টি ধাপ আছে। এর মধ্যে নারী এককভাবে করেন ২০টি। বাকি ১০ টি যৌথভাবে পুরুষ নারীর সম্মিলনে করে।
পোয়াতি নারী বিকেল রান্না করে রাতে পরিবারে সবাইকে খাইয়ে সব কাজ শেষ করে রাতে সন্তান জন্ম দেন। আবার প্রতুষে সবাই ঘুম থেকে উঠার আগেই সদ্য সন্তান প্রসবা নারীর রান্না করা নাস্তা খেয়ে পরিবারের সব সদস্যরা আয়েশি দিন কাটায়। কেউ একবার সে নারীর কথা ভাবেন না। এত বিনিয়োগ যে নারীর কিন্তু কই আমাদের জিডিপিতে আমার মায়ের বোনের কন্যার স্ত্রীর অবদানের কোন স্বীকৃতির কথাতো উল্লেখ থাকেনা কোনদিন। আমাদের সকলের বড় হবার পিছনে মূল অনুপ্রেরণাকারী মূখ্য বিনিয়োগ কারী মা। পরবর্তীতে সে মা কি তেমন ভাবে সম্মান ইজ্জত মূল্য পান না।
নারী রাতে ধান মাড়াই করে পরিষ্কার করে, সিদ্ধকরে, চুলায় শুকিয়ে, ধান ভানে, চাল বানায় ভাত রান্না করে। পুরুষ তেমনটি করে রাতভর? গ্রামের একজন নারী প্রতিদিন রান্না, তরিতরকারি খোজা, পুকুরে যাওয়া আসা ধোয়া মোছার কাজ, ঘর দুয়ার ঝাড়ু দেয়া, জ্বালানি খোজা এসব মিলিয়ে অন্তত ১২ থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরত্ব হাটেন। আন্তর্জাতিক ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশনের ২০০৯ এর এক রিপোর্ট অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বে পুরুষের চেয়ে নারী ১৬ ভাগ পারিশ্রমিক কম পায়।
অপর পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে নারীরা কাজ করছে শতকরা ৬৫ ভাগ।বিপরীতে তার আয় মাত্র শতকরা ১০ ভাগ। পৃথিবীতে নারী-পুরুষের সংখ্যানুপাত প্রায় সমান। অথচ, দুনিয়ার মোট সম্পদের ১০০ ভাগের মাত্র ১ অংশের মালিক নারীরা। নারীদের গৃহস্থালী কাজের আর্থিক স্বীকৃতি এখনও দেয়া হয়নি। অর্থাৎ, তা অর্থনৈতিক মূল্যে অদৃশ্যই থাকে। নারীরা কি আসলে ভালো আছেন। বিশ্ব, সমাজ, যুগ যত তাল মিলিয়ে এগোচ্ছে, ততোই এগিয়ে চলার চেষ্টা চালাচ্ছে মেয়েরাও। কিন্তু, কিছু মানুষের লোভ-লালসা, আর কিছু অদৃশ্য শক্তি মহিলাদের কেমনভাবে যেন পিছনে টেনে ধরে রেখেছে প্রতিনিয়ত। সেই অদৃশ্য শক্তিকে অগ্রাহ্য করে কেউ কেউ অনেক উপরে উঠতে পারলেও, বেশিরভাগই সেই অদৃশ্য শক্তির কাছে পরাজয় স্বীকার করছেন হার মেনে নিয়েছেন। ইতিহাসের পাতা কিন্তু বলছে মেয়েরা পারবে সেই অদৃশ্য শক্তিকে ভেঙে ফেলে অনেকদূর এগিয়ে যেতে নতুন ইতিহাস গড়তে। দেশের কর্ম বাজারে নিয়োজিত ১ কোটি ৮২ লাখনারী। বিদেশে কর্শরত লৈাখ ১০ হাজার নারী।
নারীরা নিজের জন্য কিছুই জমা রাখে না টোটাল বিলিয়ে দেয় বাকি সবার জন্য আন্তরিকতায় উচ্ছ্বাসে উৎসর্গে আগ্রহে স্বযতনে। পিছনে ফিরে তাকায়না আপনজনদের বৃহৎ কল্যাণের মঙ্গলের জন্য। জীবনের শেষ প্রান্তে গিয়ে এদের সঞ্চয় থাকে শূন্য। তখনও তারা নির্ভিঘ্নে উচ্ছলতায় বলে সুখী আমি বড় সুখী তোমার তোমাদের কল্যাণে। এরা দেয় নেয়না, দিয়েই সুখী নিতে জানেনা। অকূল সাতরিয়ে মুক্তামানিক খুঁজে এনে নির্দ্বিধায় সমর্পন করে আদরে সোহাগে প্রশান্তিতে হৃদ্দিক মাতমে। তোর লাগি তোমার লাগি। এরা অর্ঘ সমর্পন করে অবনত বিনম্র বিগলিত চিত্তে। এরা পরিকল্পনা, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ, পরিবেশন, আপ্যায়ন, সেবা, সামাজিকতা দিয়ে বিদুষী মহিয়সী হয়ে স্বর্গের দেবী বনে যায়। কিন্তু এত কিছুর বিনিময়ে আমরা তাদের জন্য কি করি কি করেছি। সত্যি তাঁদের বিনিময়ে সে তুলনায় তেমন কিছু না।এটা কি ঠিক? এটা কি যৌক্তিক? এটাকি মহানুভবতার মধ্যে পড়ে? সুষ্ঠু মানবতার সংগায় পড়ে ও যথাযথভাবে প্রকাশ করে?
আসুন না আমরা আরেকটু বেশি সচেতন বিবেকবান যৌক্তিক মানবতাবাদী সহমর্মী হই। কথায় যথায়, চলায় বলায়, আসনে বসনে, শয়নে স্বপনে, প্রাত্যহিকতায়, সাধনায় আরাধনায়, সম্মান মর্যদায় বিশেষ দায়িত্ববান কেয়ারিং এর সাথে চলি।শ্রদ্ধায় ভালোবাসায় স্নেহ মায়া মমতায় কৃতজ্ঞতায় আমরা আমাদেরকে পরিপূর্ণভাবে উৎসর্গ করি তাদের জন্য। একবার ভাবি একবার প্রতিশ্রুতি নিয়ে বলি…এসেছি তব দুয়ারে ফিরায়ে দিও না সোনাবন্ধু আমার প্রিয় বান্ধব মোর। কি দিব বলো শতভাগ অধিকার নিয়ে। আমি প্রতিশ্রুতি দিলাম আজ থেকে আমি আমার সব উজাড়ি দিবো বিলায়ে দিবো তোমার লাগি তোমাদের লাগি। বিশুদ্ধ চিত্তে ঘোষণা করলাম…শেয়ার জয় ইজ ডাবল জয়, শেয়ার সরো ইজ হাফ সরো। এ বেলায় কৃতজ্ঞতায় আর বিনম্র চিত্তে আমার সৃষ্ট কাব্যিকতা দিয়ে শেষ করবো …
নারী তুমি জননী ভগিনি কন্যা জায়া আমার
তুমিইতো গড়েছো আয়েশি ভুবনে শুদ্ধ প্রেমের বিশুদ্ধ খামার
এ বেলায় আজ সাজাবো পৃথিবী ফুলের সৌরভে ভরিয়ে অঞ্জলি
বিশ্ব নারী দিবসে তাবত নারী তোমার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি…