বাংলাদেশের বৃহত্তর দরিদ্র জনগোষ্ঠির আমিষের চাহিদার যোগান দিয়ে থাকে ডাল। এজন্যে ডালকে গরীবের মাংসও বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে সব জেলাতেই মুগ চাষাবাদ হয়ে থাকে তবে বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলায় এর চাষাবাদ সার্বাধিক। পুষ্টিহীনতা দুর করার পাশাপাশি ডালের আবাদ মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। গবেষণায় দেখা গেছে মুগ চাষাবাদে মাটিতে জৈব পদার্থ এবং নাইট্রোজেন যোগ হয়।
মাটির ধরন : বেলে দো- আঁশ বা দো- আঁশ মাটি মুগডাল চাষের জন্য বেশি উপযোগী। মাঝারী উঁচু জমি যেখানে পানি জমেনা বা পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা আছে এমন জমিতে মুগ চাষ করতে হবে।
বীজ বপনের সময় : ঋতুভিত্তিক ও অঞ্চল ভেদে বছরের ৩টি সময়ে বাংলাদেশে মুগডাল বপন করা হয়ে থাকে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সাধারনত বীজ বপন করা হয় বিলম্ব রবি মৌসুমে অর্থাৎ জানুয়ারীর ২য় সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারী ২য় সপ্তাহ পর্যন্ত। উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে খরিপ- ১ মৌসুমে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারী মাসের ১ম সপ্তাহ থেকে মার্চ মাসের ১ম সপ্তাহ পর্যন্ত। তবে মধ্য মার্চের আগে বীজ বপন শেষ করতে হবে তা না হলে আষাঢ় মাসের বৃষ্টিতে (মধ্য জুন থেকে মধ্য জুলাই) ফল পঁচে যেতে পারে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে খরিপ-২মৌসুমে বপন করা যায় আগস্ট মাসের ১ম সপ্তাহ থেকে সেপ্টেম্বর মাসের ১ম সপ্তাহ পর্যন্ত।
জাত নির্বাচন : বিনা এবং বারি এর উচ্চ ফলনশীল জাত সমূহ । যেমনঃ বিনা মুগ ৫, বিনা মুগ ৬, বিনা মুগ ৮, বারি মুগ ৫, বারি মুগ ৬, বারি মুগ ৭, বারি মুগ ৮ ।
বপন পদ্ধতি : সারিতে বীজ বপন করলে ব্যবস্থাপনার (আগাছা দমন,ফল সংগ্রহ) সুবিধা হয় এবং এতে ফলন বেশী হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব ১২ ইঞ্চি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২-৩ ইঞ্চি রাখতে হয়।
সিডার মেশিনের মাধ্যমে বীজ বপন করলে অল্প সময়ে ও কম খরচ সারিতে বীজ বপন করা যায়। তবে ছিটিয়ে বীজ বপন করলে বপনের পর মই দিয়ে বীজগুলি ভালভাবে ঢেকে দিতে হবে। বীজ গজানোর পর গাছ বেশি ঘন হয়ে গেলে থিনিং করতে হবে।
বীজের হার : হেক্টরপ্রতি ২৫-৩০ কেজি হারে বীজ বপন করতে হবে। তবে ছিটিয়ে বপনের ক্ষেত্রে সামান্য বেশী বীজ দিতে হয়।
সারের পরিমান ও প্রয়োগ পদ্ধতি : জমি প্রস্তুতির সময় শেষ চাষের সাথে সকল সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটির উর্বরতা ভেদে সারের পরিমানের কিছু তারতম্য হতে পারে। মধ্যম ধরনের উর্বর মাটির জন্য সারের মাত্রা নিম্নরূপ:
জীবানু সার ব্যবহার করলে ইউরিয়া সার ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। জীবানু সার ব্যবহারের পূর্বে বীজ গুলিতে চিটাগুড় বা ভাতের মাড় মাখিয়ে নিয়ে তার সাথে জীবানু সার মিশাতে হবে যেন বীজ গুলির গায়ে কালো প্রলেপ পড়ে। তবে জীবানু সার অবশ্যই উৎপাদনের ১৮০ দিনের মধ্যে ব্যবহার করতে হবে এবং জীবানু সার সর্বদা রোদমুক্ত, শুস্ক ও ঠাণ্ডা স্থানে রাখতে হবে ।
সেচ ব্যবস্থাপনা: খরিপ- ১ মৌসুমে জমি শুকনা থাকলে (বৃষ্টি না হলে) বীজ বপনের পূর্বে একটি সেচ দিয়ে উপযুক্ত “জো” অবস্থায় বীজ বপন করতে হবে। এতে বীজের অংকুরোদগমের সুবিধা হয়। বীজ বপনের ২০-২৫ দিন পর জমি শুকনা থাকলে সেচ দিতে হয়। গাছে ফুল ধরার সময় খরা হলে এবং মাটি শুকনা থাকলে ফুল ঝরে পড়ে এবং ফলন কমে যায়। এসময় প্রয়োজনে হালকা সেচ দিতে হয়। অতিবৃষ্টি ফলে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে না পারে সেজন্য অতিরিক্ত পানি বের করার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
মুগডাল চাষে সঠিকভাবে সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা করলে ফলন বৃদ্ধি পাবে এতে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে।
লেখক: মো. আকতারুল ইসলাম, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ড. মো. হোসেন আলী, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, কৃষি প্রকৌশল বিভাগ, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), ময়মনসিংহ-২২০২।