নাহিদ বিন রফিক : পোকার উপস্থিতি না বুঝে বালাইনাশক ব্যবহার করছেন কৃষকরা। ফলে বিষাক্ত পদার্থগুলো অনায়াসে জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়ে মাছের বিপদ ডেকে আনছে। এ অশুভ লক্ষণ থেকে পরিত্রাণের জন্য বিকল্প ব্যবস্থার প্রয়োজন। সে প্রেক্ষাপটে কৃষি বিশেষজ্ঞরা একটি প্রযুক্তি বের করেছেন, যার নাম সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা। সংক্ষেপে বলা হয় আইপিএম। আলোক ফাঁদ হচ্ছে এরই অংশ বিশেষ। অন্যভাবে বলা যায়, কী ধরনের পোকার আক্রমণ হয়েছে তা চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এক সহজ পদ্ধতির নাম আলোক ফাঁদ। অত্যন্ত কার্যকর এ পদ্ধতি ব্যবহারে একদিকে যেমন ফসলের ক্ষতিকর পোকাগুলো মারা যাবে, সে সাথে উপকারি পোকাও হবে সংরক্ষণ। পক্ষান্তরে পরিবেশেরও কোনো ক্ষতি হবে না। আসুন তাহলে জেনে নিই আলোক ফাঁদ কীভাবে তৈরি করতে হবে।
আলোক ফাঁদ তৈরির জন্য লাগবে বৈদ্যুতিক তার, বাল্ব/ হারিকেন/ হ্যাজাক লাইট/ চার্জার, তিনটি বাঁশ/ গাছের ডাল, প্লাস্টিকের গামলা, রশি, পানি এবং ডিটারজেন্ট পাউডার/ কেরোসিন। জমির আইল থেকে আনুমানিক ৫০ মিটার দূরে স্থান নির্বাচন করতে হবে। প্রথমে বাঁশের তিনটি খুঁটি ত্রিভুজ আকারে মাটিতে পুঁতে মাথার অংশ একত্রে বেঁধে দিতে হয়। এরপর মাটি থেকে আড়াই থেকে তিন ফুট উপরে একটি জলন্তবাল্ব খুঁটির তিন মাথার সংযোগস্থলে রশি সাহায্যে ঝুলিয়ে দিতে হবে। এর নিচে একটি বড় আকারের প্লাস্টিকের গামলা বা পাত্রে ডিটারজেন্ট পাউডার অথবা কেরোসিনমিশ্রিত পানি রেখে এমনভাবে বসাতে হবে, যাতে পোকা এর বাহিরে না পড়ে।
সূর্যাস্তের আধা ঘণ্টা পর থেকে শুরু করে সন্ধ্যার কালো কালিমা দূর না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ দু’আড়াই ঘণ্টা সময় ধরে আলোক ফাঁদ চালু রাখতে হয়। এভাবে প্রতিসন্ধ্যায় একাধারে ৩/৪ দিন করতে হবে। জ্যোৎ¯œা রাতে এর কার্যকারিতা নেই। উজ্জ্বল আলোতে আকৃষ্ট হয়ে ধানের মাজরা পোকার মথ, বাদামি গাছ ফড়িং, শিষকাটা লেদা পোকা, ধানের পাতা মোড়ানো পোকা, সবুজ পাতা ফড়িং, চুঙ্গি পোকা, গলমাছি, গান্ধিপোকা, সাদা ফড়িং, পাটের বিছাপোকা, উড়চুঙ্গা, কালো শোষক পোকা, ডগা ও ফল ছিদ্রকারি পোকার মথ, শুঁয়া পোকাসহ বিভিন্ন ফসলের অনিষ্টকারি পোকা এসে ফাঁদে পড়ে মারা যায়। সৌরশক্তির মাধ্যমেও আলোর ফাঁদ তৈরি করা যায়। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত এ ফাঁদ সূর্যের আলো নিভে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ¦লে ওঠে এবং অন্ধকার কেটে আকাশ পরিষ্কার হলে বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য ২০ ওয়াটের স্বচ্ছ একটি সৌর প্যানেল লাগবে। আর এতে খরচ হবে দেড় হাজার টাকা। ব্যবহার করা যাবে অনেক দিন। এতে ১০০ মিটার দূর থেকেও পোকা আসে। প্রতিদিন পরিষ্কারের প্রয়োজন হয না। সপ্তাহে একবার করলেই যথেষ্ট।
লেখক: টেকনিক্যাল পার্টিসিপেন্ট, কৃষি তথ্য সার্ভিস, কারিকর বিড়ির ব্রাঞ্চ সংলগ্ন, সাগরদি, বরিশাল।