আব্দুল কাদের ও বকুল হাসান খান : ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে গ্রামে-গঞ্জে, শহরে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে ঘর-বাড়ির সংখ্যা। ক্রমাগতভাবে হ্রাস পাচ্ছে আবাদযোগ্য কৃষি জমি। প্রকৃতি হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। পরিবেশের ওপর পড়ছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। এমনি অবস্থার মুক্ত আকাশের নীচে একখন্ড জমিতে বাগান রচনার ইচ্ছা ও শখ ক্রমশঃ হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষ প্রকৃতিপ্রেমী আর প্রকৃতি তার সৌন্দর্যকে মোহনীয় জাদুতে পৃথিবিকে বিস্ময়ে ভরিয়ে রেখেছে। চারিদিকে শুধু ইট, বালু, রড, সিমেন্টের গাঁথুনীতে তৈরি আকাশ ছোয়া ভবন। কোথাও খুঁজে পাওয়ার উপায় নেই একখন্ড খালি জায়গা, যেখানে বাগান রচনা করা আকাশ-কুসুম কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়। এমনি পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে মানুষ ঝুঁকছে তার বসতবাড়ির ছাদে, ব্যালকনিতে গাছ লাগিয়ে বাগান রচনা করার দিকে। ছাদের ছোট পরিসরে পরিকল্পিতভাবে বাগান রচনা করে সহজেই নিজের চাহিদা পূরণ করা যেতে পারে। এজন্য নিজের ইচ্ছা ও কিছু আর্থিক ব্যয়ের মাধ্যমে গড়ে তোলা যেতে পারে সুন্দর, মনোরম, আকর্ষণীয় একটি ছাদ বাগান।
ছাদ বাগান করার সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখা দরকার
– বাগান তৈরির ফলে ছাদের যেন কোন ক্ষতি না হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
– ছোট আকারের গাছ-পালা ছাদে বাগান করার জন্য উত্তম। বড় আকারের গাছ-পালা হলে সেগুলো বীম বা কলাম বরাবর স্থাপন করতে হবে।
– ছাদ যাতে স্যাঁতসেঁতে হতে না পারে সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। ড্রাম বা টবের নীচে ইট দিয়ে বসানো যেতে পারে। এছাড়া নীট ফিনিসিং বা চিপস্ ঢালাইয়ের মাধ্যমেও ছাদকে ড্যাম্প প্রতিরোধী করা যেতে পারে।
– ‘সৌন্দর্য ’ ছাদ বাগানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই যেকোন ধরনের গাছ লাগিয়ে ছাদ জঙ্গল করা চলবে না। এজন্য বাগান করার পূর্বে কতটুকু জায়গায় বাগান করবেন ও কি কি গাছ লাগানো হবে তার একটি পরিকল্পনা ও নক্শা করে নেয়া খুবই জরুরি একটি বিষয়।
ছাদ বাগানে ব্যবহার্য প্রয়োজনীয় উপকরণ
একটি খোলা ছাদ। মাটির বা সিমেন্টের টব, হাফ ড্রাম, প্লাস্টিক বা স্টিলের ট্রে । সুবিধামতো স্থানে খালি বেড তৈরি। (বেড ও ছাদের মাঝে ফাঁকা রাখতে হবে)। কোদাল, কাচি, ঝরনা, বালতি, সিকেচার, করাত, খুরটি, রাবারের হুজ পাইপ, স্প্রে মেশিন ইত্যাদি। দো-আঁশ, বেলে দো-আঁশ মাটি, পঁচা গোবর, কম্পোস্ট বালু ও ইটের খোয়া ইত্যাদি। গাছের চারা-কলম, বীজ। পানি সরবরাহের ব্যবস্থা। বালাই/ কীটনাশক।
ছাদে লাগানোর উপযোগী গাছপালা
আম : ( বারি আম-৩, ৪), বাউ আম-২, কাচা মিঠা, মল্লিকা, ব্যানানা ম্যাংগো ইত্যাদি।
পেয়ারা : বারি পেয়ারা- ২, ইপসা পেয়ারা- ১, থাই পেয়ারা ইত্যাদি।
কুল : আপেল কুল, ইপসা কুল-১, বাউ কুল-১, থাই কুল-২।
লেবু : কাগজি, বারি লেবু- ২, ৩ ।
কমলা /মাল্টা: বারি কমলা- ১, বারি মাল্টা- ১ ।
ডালিম : দেশি-বিদেশি উন্নত জাত।
করমচা : থাই করমচা ।
আমড়া : বারি আমড়া- ১, বাউ আমড়া- ১, থাই আমড়া।
ড্রাগন ফল : থাই ড্রাগন ফল (সাদা ও লাল)
কলা : সাগর কলা (টিস্যু কালচার)।
শাক-সবজি : পুঁইশাক, লালশাক, পালংশাক, মূলাশাক, ডাটা, কলমিশাক, লেটুশ, বেগুন, টমেটো, ঢেড়স, শীম, বরবটি, থানকুনি ইত্যাদি।
মসলা : মরিচ, পুদিনা পাতা, ধনিয়া পাতা, বিলাতি ধনিয়া, আদা, হলুদ, রসুন, লেমন গ্র্যাস ইত্যাদি।
ফুল : গাঁদা, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, পিটুনিয়া, জারবেরা, কারনেশান, দোলনচাঁপা ইত্যাদি।
অন্যান্য গাছ : স্টেভিয়া, ঘৃতকুমারী, আ্যাসপ্যারাগাস, তুলশী, পাথরকুঁচি ইত্যাদি।
ছাদে বাগন করার পদ্ধতি
– অতিরিক্ত পানি নিকাশের জন্য হাফ ড্রামের তলদেশে ১ ইঞ্চি ব্যাসের ৪- ৫টি ছিদ্র রাখতৈ হবে। ছিদ্রগুলোর উপর মাটির টবের ভাংগা টুকরা বসিয়ে দিতে হবে।
– ১ ইঞ্চি পরিমাণ ইটের খোয়া ড্রামের তলদেশে বিছিয়ে দিতে হবে তার উপর বালি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
– সম-পরিমাণ দোআঁশ মাটি, পঁচা গোবর / কম্পোস্ট মিশ্রণ দিয়ে ড্রামটির দুই তৃতীয়াংশ ভরার পর হাফ ড্রামে মিশ্র সার ৫০-১০০ গ্রাম মিশিয়ে দিয়ে মাটি দ্বারা সম্পূর্ণ ড্রাম ভরে দিতে হবে।
– ১৫ দিন পর ড্রামের মাঝখানে কাংখিত গাছটি সুন্দরভাবে রোপণ করে দিতে হবে। গাছটি খুঁটি দিয়ে ভালোভাবে বেঁধে দিতে হবে।
– গাছের বাড়-বাড়তি বুঝে বছরে ২ বার ৫০-১০০ গ্রাম মিশ্র সার দিয়ে ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। ফলগাছে ফুল আসার অন্ততঃ দুই মাস আগে সার দেয়ার কাজ শেষ করতে হবে।
– প্রয়োজনমতো পানি সেচ, সার দেয়া ও রোগ-বালাই/ পোকামাকড় দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে।