সোমবার , নভেম্বর ২৫ ২০২৪

প্রান্তিক খামারিদের বাঁচাতে হলে বাস্তবসম্মত পোলট্রি পলিসি দরকার -এজি এগ্রো’র পরিবেশক সম্মেলনে বক্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্ষুদ্র খামারি না থাকলে দেশের পোলটি শিল্প থাকবেনা। শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। এজন্য সবার সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। শনিবার (৩১ মার্চ) এজি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড -এর উদ্যোগে আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় আয়োজিত ‘খামারির হাঁসি, আমাদের খুশি’ শিরোনামে অনুষ্ঠিত এগ্রো সম্মেলনে এসব কথা বলেন অনুষ্ঠানে আগত বক্তারা। বক্তারা এ সময় পোলট্রি শিল্পের জন্য বাস্তবসম্মত পলিসি থাকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সকাল ১০ টায় পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনার পর এতে স্বাগত বক্তব্য দেন এজি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটিড -এর বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কৃষিবিদ এএমএম নুরুল আলম। এ সময় তিনি আগত অতিথিদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এজি এগ্রো’র বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন। এছাড়াও এজি’র গ্রীন চিকেন দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করেছে বলে এ সময় জানান তিনি।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ, এমপি বলেন, স্বাধীনতার লক্ষ্য ছিল ক্ষুধা ও দারিদ্রম্ক্তু বাংলাদেশ গড়ার। একটি দেশ উন্নয়নের জন্য সরকার, বেসরকারি উদ্যোগ এবং জনগণের মেলবন্ধন খুবই জরুরি এবং এর মাধ্যমেই দেশ এগিয়ে যায়।

তিনি বলেন, দেশে ছোট খামারিরা না থাকলে পোলট্রি শিল্পে বিপর্যয় নেমে আসবে। সরকার কোনভাবেই এটি এড়িয়ে যেতে পারেনা যে, আমাদের ক্ষুদ্র খামারিরা নিঃশেষ হয়ে যাবে। বাচ্চা, ফিড ও ডিমের দামের একটি সমন্বয় দরকার।

মন্ত্রী বলেন, পোলট্রি সেক্টরের উদ্যোক্তারা দেশ ও জাতির উপকারে কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমান পোলট্রি শিল্পে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে সেটি উত্তরণ এবং আমাদের পোলট্রি সেক্টরকে এগিয়ে নিতে হলে একটি পলিসি থাকার প্রয়োজন আছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করছি এবং অচিরেই সংশ্লিষ্টদের সাথে বসে করণীয় ঠিক করবো। এজন্য খামারি, উদ্যোক্তা, হ্যাচারি ও ফিডমিল মালিক সবার সমন্বয় দরকার।

তিনি আরো বলেন, আমাদের উৎপাদন যেহেতু বাড়ছে তাই রপ্তানির বিষয়টি মাথায় রেখে ভ্যালু এডেড পণ্য উৎপাদন করতে হবে। আমাদের পোলট্রিকে আন্তর্জাতিক বাজারে নিয়ে যেতে হবে। যে যে খাতে ভর্তুকি কিংবা সহযোগিতা প্রয়োজন আমরা সেটি করবো।

এজি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ এর চেয়ারম্যান শহিদুল আহসান বলেন, বাংলাদেশের বিপুল জনগোষ্ঠী কর্মক্ষম হলেও সবার জন্য কাজের সুযোগ নেই। দেশের পোলট্রি শিল্প অনগ্রসর জনগণ ও বেকার যুবক-যুবতীরেদ কাজের সুযোগ তৈরির জন্য একটি কার্যকর মাধ্যম। আহসান গ্রুপ সে লক্ষ্যকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে পোলট্রি শিল্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক খামারিরা। কারণ, এ সেক্টরে বাস্তব কোন পলিসি নেই। প্রান্তিক খামারিদের বাঁচাতে হলে বাস্তবসম্মত পোলট্রি পলিসি দরকার। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার এ ব্যাপারে আন্তরিক এবং খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা নিবেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরি বলেন, দেশের জিডিপিতে পোলট্রি সেক্টরের অবদান ২.৬৭ ভাগ। ভবিষ্যতে পোলট্রি খাতের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা প্রচুর। সরকার এবং ব্যাক্তি উদ্যোগের সমন্বয় ঠিকমতো করতে পারলে এ প্রবৃদ্ধি ৬-৭ ভাগে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।

অনুষ্ঠানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (সম্প্রসারণ) ডা. হিরেশ চন্দ্র ভৌমিক বলেন, প্রান্তিক খামারিদের বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। প্রান্তিক খামারিদের বাচিয়ে রাখতে পারলে শিল্প টিকে থাকবে, উদ্যোক্তা ডিলারগণ উপকৃত হবেন এবং সর্বোপরি দেশ উপকৃত হবে।

অনুষ্ঠানে দেশের পোলট্রি শিল্পে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. প্রিয় মোহন দাস কে বিশেষ সম্মাননা ও এক লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়।

এ তাঁর অনুভ’তি ব্যাক্ত করতে যেয়ে প্রফেসর প্রিয় মোহন দাস বলেন, নিজেকে পরম সৌভাগ্যবান মনে করছি বিশেষ সম্মাননা প্রদান করার জন্য। এক সময় আমরা একটা ডিম চারভাগে ভাগ করে খেতাম। কিন্তু বর্তমানে দিন পাল্টেছে। তবে এ পথ পরিক্রমা এত সহজ ছিলনা।

বাংলাদেশের পোলট্রি শিল্পে একটি নাজুক অবস্থায় চলছে উল্লেখ করে ড. প্রিয় মোহন দাস বলেন, আমরা এজন্য একে অন্যকে দোষারোপ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছি। বাস্তবতা হলো বর্তমান পরিস্থিতির জন্য কম-বেশি আমরা সবাই দায়ী।

অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠান হিসেবে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (কেআইবি) কে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। কেআইবি মহাসচিব কৃষিবিদ মো. খায়রুল আলম প্রিন্স এ পুরস্কার গ্রহণ করেন।

মো. খায়রুল আলম প্রিন্স বলেন, কেআইবি দেশের অন্যতম বৃহৎ পেশাজীবী সংগঠন। প্রায ৩০ হাজার কৃষিবিদ এ সংগঠনের সদস্য। দেশের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সংগ্রামের অংশীদার হিসেবে প্রতিটি সদস্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

এছাড়াও এগ্রো সম্মেলনে এজি এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর সর্বোচ্চ ফিড বিক্রয়কারী সেরা দশ ডিলারকে বিশেষভাবে পুরষ্কৃত করা হয়। পরিশেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্মেলনের সমাপ্তি হয়।

This post has already been read 4609 times!

Check Also

ডিমের মূল্যের ঊর্দ্ধগতিতে মধ্যস্বত্বভোগীরা বড় সমস্যা- মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

পাবনা সংবাদদাতা: ডিমের মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মধ্যস্বত্বভোগীরা বড় সমস্যা উল্লেখ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা …