চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: বিশ্ব নেতৃবৃন্দ খাদ্য অধিকার ও পুষ্টি নিরাপত্তার বিষয়ে সমর্থন দিয়ে ক্ষুদ্র মুক্ত বিশ্ব গড়ার প্রত্যয় ঘোষণা করে এসডিজি অনুমোদন করেছেন। এসডিজি বাস্তবায়নে প্রয়োজন রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও সহযোগিতামূলক আইন ও নীতি। নীতি ও আইন যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব। তাই এসডিজির মূল লক্ষ্য অনুযায়ী দেশে সবার জন্য খাদ্য নিশ্চিত করতে দ্রুত খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন দরকার।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ি দেশের ৪ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে বসবাস করে এবং এর মধ্যে ২ কোটি লোক অতিদরিদ্র।যারা দৈনিক ২১২২ ক্যালরি খাবার কিনতে অক্ষম তারাই দরিদ্র। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ২০৩০ (এসডিজি)র উন্নয়ন কাঠামোর অন্যতম লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে সব ধরনের দারিদ্রের অবসান এবং আগামী ১৫ বছরের মধ্যে ক্ষুদামুক্তির অঙ্গীকার। সবার জন্য খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিধান ও খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে চট্টগ্রামে খাদ্য অধিকার বাংলাদেশ এর চট্টগ্রাম জেলা কমিটির বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (৭ এপ্রিল) নগরীর আইএসডিই বাংলাদেশ মিলনায়তনে খাদ্য অধিকার আন্দোলন চট্টগ্রামের সভাপতি এসএম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে সভায় আলোচনায় অংশ নেন খাদ্য অধিকার আন্দোলন চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, বিশিষ্ট নারী নেত্রী ও এডাব চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, ক্যাব নেতা আলহাজ্ব আবদুল মান্নান, জান্নাতুল ফেরদৌস, তৌহিদুল ইসলাম, শাহীন চৌধুরী, জানে আলম, অন্বেষা চট্টগ্রামের আবুল কাসেম, যুগান্তরের কল্লোল কান্তি, ইউসেপ’র শহিদুল ইসলাম, বিবিএফ’র সোহাইল দোজা, নারী নেত্রী সায়মা হক, নাসিমা আলম, ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের সেলিম জাহাঙ্গীর, ড্রিংকিং ওয়াটার ম্যানুফেকচার অ্যাসোসিয়েশন ফয়সল আবদুল্লাহ আদনান, জেলা স্কাউটস -এর অধ্যাপক শাহনেওয়াজ আলী মির্জা, ইশিকা ফাউন্ডেশনের জহুরুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আসমা খানম ও ক্যাব আইবিপি প্রজেক্ট এর মশিউর রহমান প্রমুখ।
সভায় বলা হয়, খাদ্য উৎপাদন ও বিপণনে বহুজাতিক কোম্পানি ও দেশীয় কর্পোরেট হাউজগুলোর একচ্ছত্র আধিপত্যের কারণে সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। সে কারণে বিগত বিশ বছরে দেশে খাদ্যের মুল্য বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণেরও অনেক বেশি, মোটা চালের দাম বিগত ১ বছরে দ্বিগুণেরও বেশি বৃদিধ পেয়েছে। অথচ মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলোতে খাদ্যের মূল্য সেভাবে বাড়েনি। অন্যদিকে, প্রকৃত কৃষক তার উৎপাদিত খাদ্য পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না, যা মধ্যস্বত্বভোগী ও ফাড়িয়ারা এবং খাদ্য ব্যবসায়ীরাই সিংহভাগ হাতিয়ে নিচ্ছে। ফলে দেশীয় কৃষক প্রতিবছরই লোকসান গুনছে। সে কারণেই সবার জন্য খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা প্রদানে রাষ্ট্রকে বাধ্য করতে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার।
সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে খাদ্য অধিকার আইন প্রণয়ন, নিরাপদ খাদ্য আইনের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে ভেজালমুক্ত ও নিরাপদ খাদ্যের যোগান নিশ্চিতকরণ, নিরাপদ খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম জোরদার, স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠির জন্য রেশনিং ব্যবস্থা এবং সরকারি বণ্টন ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, কৃষিতে ভর্তুকির মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং প্রান্তিক কৃষক ও বর্গাচাষীদের সরাসরি ভর্তুকির আওতায় আনা, প্রান্তিক কৃষক এবং বর্গাচাষীদের নিয়ে সমবায় গড়ে তোলার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা জোরদার, সমবায়ভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, কৃষিপণ্যের সঠিক মূল্য নিশ্চিতকরণ, সকল পর্যায়ে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা, নারী কৃষকদের স্বীকৃতি ও তাদের অধিকার নিশ্চিতকরণ, নারী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, পশু পালনকারী, জেলেদের মতো জনগোষ্ঠীর জন্য ভূমি নিরাপত্তা, শিক্ষা, আর্থিক লেনদেনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার উৎস নিশ্চিতকরণ, খাদ্য সংকট মোকাবিলায় সরকারকে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ নিশ্চিত করা, কৃষি উৎপাদনে পরিবেশের ভারসাম্য নিশ্চিত করে জলবায়ু পরিবর্তন, প্রতিকূল আবহাওয়া, বন্যা, খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে যাতে ফসল টিকে থাকতে পারে তা নিশ্চিত করা; ২০২০ সালের মধ্যে বীজ, শস্য, পালন করা পশুর জিনগত বৈচিত্র বাড়ানোয় কাজ করা; বিশ্ব খাদ্য পণ্যের বাজারে দাম স্থিতিশীল ও ক্রেতার হাতের নাগালের মধ্যে রাখতে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ, কৃষিভিত্তিক গবেষণা ও প্রযুক্তি উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলোর কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর দাবি জানানো হয়।
সভায় দেশব্যাপী কর্মসূচির আলোকে আগামি ১০ এপ্রিল সবার জন্য খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা চাই, খাদ্য অধিকার আইনের দাবিতে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে মানববন্ধন ও প্রধান মন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি গৃহিত হয়।