নাহিদ বিন রফিক : তরমুজ রসালো ফল। এর পানির পরিমাণ শতকরা প্রায় ৯৬ ভাগ। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে ফল হিসেবে স্থান পেলেও কেউ কেউ একে সবজির তালিকায় রাখেন। এর আকার-আকৃতি হরেক রকমের। কোনোটি গোল। কোনোটি লম্বাটে। আবার গোলও নয় লম্বাও নয়। ত্বকের রঙেও ভিন্নতা আছে। শাঁসের মধ্যেও। তবে শাঁসের রঙ বেশ আকর্ষণীয়। গ্রীষ্মের গরমে এক টুকরো তরমুজ খেলে দেহে তৃপ্তি এনে দেয়।
বাজারে বিভিন্ন জাতের তরমুজ পাওয়া যায়। এসব হাইব্রীড জাতের বীজগুলো চীন, জাপান, কোরিয়া, তাইওয়ানসহ বেশ ক’টি দেশ থেকে আমদানি করা হয়। তরমুজ গ্রীষ্মকালিন ফসল হলেও অল্প পরিসরে বর্ষায়ও চাষ হয়। গ্রীষ্মকালিন জাতের মধ্যে ওয়ার্ল্ড কুইন, চ্যাম্পিয়ন, টপ ইল্ড, সুগার অ্যাম্পায়ার, ফিল্ড মাস্টার, গ্লোরি, ক্রিমসন গ্লোরি, সুইট বেবি, সুগার বেলে, বিগটপ, মিলন মধু, ভিক্টর, অমৃত, মোহিনি, কানিয়া, আমরুদ, আধারি, কঙ্গোসহ আরো অনেক। উপকূলীয় এলাকার জন্য পাটনাগরা এবং মধু এফ ওয়ান। বর্ষাকালের জন্য জেসমিন-১ ও জেসমিন-২।
এক সময় যশোরের তরমুজকে সেরা বলা হতো। এ বিশেষণ এখন ভোলা এবং পটুয়াখালীর দখলে। ভোলার সাত উপজেলাই এর ব্যাপক চাষাবাদ। পটুয়াখালীর কলাপাড়া, দশমিনা এবং রাঙ্গাবালিতেও হচ্ছে সমান তালে। বীজ বোনা হতে শুরু করে ৮০Ñ১০০ দিন হলে ফলের পরিপক্কতা আসে। দিনক্ষণ হিসেব না করেও বোঝার উপায় আছে। হাত দিয়ে টোকা দিলে ড্যাব ড্যাব শব্দ হবে। একটি তরমুজের ওজন ১০-১২ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন প্রায় ৬০ মেট্টিকটন।
তরমুজ খেতে কেমন? এ প্রশ্নের জবাবে সবাই বলবেন, দারুণ জুসি। অসাধারণ। বলতেই হবে, এতো আল্লাহর নেয়ামত। তরমুজ কেবল খেতেই সুস্বাদু নয়, পুষ্টিগুণও আছে যথেষ্ঠ। এর প্রতি ১০০ গ্রাম ফলে (আহারোপযোগী) ৭.৯ মিলিগ্রাম লৌহ এবং ১১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে। অন্য পুষ্টি উপাদানের মধ্যে ৩.৩ গ্রাম শর্করা, ০.২ গ্রাম আমিষ, ০.২ গ্রাম চর্বি, ০.০৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন-বি২, ভিটামিন-সি ১ মিলিগ্রাম, ০.৩ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ০.২ গ্রাম আঁশ এবং খাদ্যশক্তি আছে ১৬ কিলোক্যালরি।
তরমুজে রয়েছে ভেষজগুণে ভরপুর। স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত তরমুজ খেলে কিডনির কার্যকারিতা বাড়ে, যে কারণে পাথর হওয়ার আশংকা কমে যায়। প্রস্রাবের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে। তরমুজে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। সে সাথে আছে লাইকোপেন। এ জন্য ফুসফুসে ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। হার্ট ও লিভার ভালো রাখে। উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি রক্তে অতিরিক্ত জমাটবাঁধা প্রতিরোধ করে। যক্ষ্মা, পেটের আলসার, কোষ্ঠকাঠিন্য, অ্যাজমা, প্রসাবের জ্বালাপোড়া, দাঁতের অ্যালার্জি, মুখে ঘা, টনসিল, ফোড়া, চোখওঠা, রাতকানা, জ্বর, সর্দি, হাঁচি, কাশি, কফসহ আরো অনেক রোগের জন্য উপকারি। তরমুজ প্রজননতন্ত্রকে শক্তিশালী করে। রক্তবাহি ধমনীকে শীতল রাখে। অকাল বার্ধক্য প্রতিরোধ করে। সহসা চামড়ায় ভাঁজ পড়ে না।
বিলাসি নারীদের রূপচর্চায় তরমুজ অনন্য। এর রস ব্যবহারে ত্বকের ময়লা পরিষ্কার করে উজ্জ্বলতা বাড়ায়। চুল হয় সুন্দর, মোলায়েম। মুখে কোনো দাগ হলে তরমুজের টুকরো দিয়ে ঘষতে হবে। ব্রণ দূর করতে এর রস লাগিয়ে ১৫/২০ মিনিট পর কুসুম গরম পানিতে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে দু’সপ্তাহ নিয়মিত ব্যবহার করলে ব্রণ চলে যাবে। এখন বাজারে তরমুজে ছড়াছড়ি। দামও হাতের নাগালে। তাই আসুন, এ সুযোগে তরমুজ খেয়ে শরীরে পুষ্টি এনে দেই। রোগ প্রতিরোধে দেহকে রাখি সতেজ-তরতাজা।
লেখক: টেকনিক্যাল পার্টিসিপেন্ট, কৃষি তথ্য সার্ভিস ও পরিচালক, কৃষি বিষয়ক আঞ্চলিক অনুষ্ঠান, বাংলাদেশ বেতার, বরিশাল।