নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং এসডিজি’এস অর্জনে ভেটেনারিয়ানদের গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমান সরকারের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে যে চ্যালেঞ্জ ভেটেরিনারিয়ানরা তার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। কিন্তু প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে প্রয়োজনীয় জনবলের সংখ্যা অপ্রতুল। প্রাণিসম্পদ অর্গানোগ্রাম দ্রুত বাস্তবায়ন করে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দেয়া উচিত।
মানুষ এবং প্রাণির কল্যাণ নিশ্চিত করা এ দিবসের মূল উদ্দেশ্য। এসডিজি’এস অর্জনের যে ১৭টি লক্ষ্য রয়েছে তার অধিকাংশের সাথেই ভেটেনারিয়ানরা সংশ্লিষ্ট। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, বেকারত্ব নিরসন এবং নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে ভেটেরিনারিয়ানদের অবদান রয়েছে।
শনিবার (২৮ এপ্রিল) ‘বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস-২০১৮’ উপলক্ষ্যে রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স এ আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। “টেকসই উন্নয়নে জীবনমান ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে ভেটেরিনারি পেশার ভূমিকা” শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে এবারের দিবস পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে সকালে এক বর্ণঢ্য র্যালী বের করা হয়। এতে ভেটেরিনারি পেশার সাথে জড়িত সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
সেমিনারের স্বাগত বক্তব্যে দি ভেট এক্সিকিউটিভ সভাপতি ডা. মো. আলী ইমাম বলেন, বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস শুধু ভেটেরিনারিয়ানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে এটি জাতীয়ভাবে পালন করা উচিত। কারণ, বর্তমান সরকারের ‘একটি বাড়ি, একটি খামার’ লক্ষ্য অর্জন এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে ভেটেরিনারিয়ানদের গুরুত্ব অপরিসীম।
অনুষ্ঠানে খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম এম.পি. বলেন, খাদ্য উৎপাদন থেকে মানুষের খাবার টেবিলে পৌঁছানো পর্যন্ত নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা বর্তমান সরকারের লক্ষ্য। সেজন্য পশু-পাখি, হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগলকে নিরাপদ খাদ্য প্রদান করতে হবে। কারণ, তারা যদি নিরাপদ খাদ্য না পায় তবে মানুষের খাদ্যও নিরাপদ থাকবেনা। কেবলমাত্র আর্থিক দিক দিয়ে উন্নতি করলে চলবে না, ক্ষেত থেকে পাত প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের উন্নতি করতে হবে। এক্ষেত্রে ভেটেরিনারিয়ানদের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। এ সময় তিনি ভেটেরিনারিয়ানদের মধ্যে দলাদলি ভুলে গিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব মো রইছউল আলম ম-ল বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতটি আরো ব্যাপক উন্নয়ন করার সুযোগ রয়েছে। বিদেশ থেকে আমাদের ভ্যাকসিন ও ওষুধ আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে। এত বেশি প্রকারের ভ্যাকসিন আমদানি না করে সুনির্দিষ্টভাবে জানতে হবে কোন কোন ভ্যাকসিন আগে প্রয়োজন। সরকারি ওষুধ কোম্পানিতে কীভাবে ভ্যাকসিন নিজেরাই তৈরি করা যায় সে উপায় খুঁজতে হবে। জুনোটিক রোগগুলোর ব্যাপারে খামারিদের সচেতন করে তুলতে হবে।
তিনি আরো বলেন, দেশে ডিমের দাম কমে যাওয়াতে অনেক খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ অবস্থায় বড়রা টিকে থাকলেও ছোট খামারিদের টিকে থাকা মুশকিল হয়ে দাড়িয়েছে। ছোট খামারিদের ঘুরে দাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে আলাদা একটি তহবিল গঠন করা জরুরি। এছাড়াও মৎস্য, পোলট্রি ও পশুখাদ্যে আরোপিত ট্যাক্স কমানোর ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস উদযাপন কমিটি ২০১৮ এর আহ্বায়ক এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. হিরেশ রঞ্জন ভৌমিক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন প্রাণিসম্পদ অধিদপÍরের মহাপরিচালক ডা. মো. আইনুল হক, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ -এর সভাপতি কৃষিবিদ এএমএম সালেহ, বিভিএ সভাপতি ডা. মো. নজরুল ইসলাম এবং মহাসচিব ডা. মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোল্লা।
উল্লেখ্য ২০০১ সন থেকে সারাবিশে^ দিবসটি পালন হয়ে আসছে। বাংলাদেশে দিবসটি পালন করা হচ্ছে ২০০৮ সন থেকে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি এসোসিয়েশন (বিভিএ) এবং দি ভেট এক্সিকিউটিভ যৌথভাবে দিবসটি পালন করে।