কৃষিবিদ মো. আবু সায়েম (রংপুর): নতুন নতুন রাস্তা-ঘাট ও স্কুল-কলেজ নির্মাণ করা হয়েছে। আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির ছোঁয়ায় কৃষি উৎপাদনে এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। দীর্ঘদিন বঞ্চনার পর দিন বদলের সুবাশ লেগেছে গ্রামীণ অর্থনীতিতে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। বাড়ি-ঘরের পরিবর্তন ঘটেছে, এমনকি মানুষের চেহারাতেও পরিবর্তন এসেছে বলে দাবি করেন পঞ্চগড় সদর উপজেলা থেকে আসা সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দা বিজয় কুমার। শনিবার (৫ মে) কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের সম্মেলন কক্ষে ছিটমহল (সাবেক) উন্নয়নের জন্য সমন্বিত কর্মসূচির আওতায় কর্মশালায় তিনি আরও বলেন বেশি দিন নয় ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই এর মধ্যরাত নিজ দেশে পরবাস সাবেক ছিটমহলবাসীর জন্য সবচেয়ে খুশির দিন। এর জন্য সর্বাগ্রে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে চান বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানকে।
কর্মশালায় কর্মসূচি পরিচালক ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর লালমনিরহাট জেলার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ বিধু ভুষণ রায় এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহ আলম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর দিনাজপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. আব্দুল ওয়াজেদ ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. আমিরুল ইসলাম।
কর্মসূচি পরিচালক কৃষিবিদ বিধু ভুষণ রায় বলেন কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও পঞ্চগড় জেলার ৯ উপজেলার ৮৬টি সাবেক ছিটমহলের মোট ৭,৬৫১ কৃষক পরিবার নিয়ে তিন বছর আগে সমন্বিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু হয় এবং এ বছরের জুন মাসে কর্মসূচিটি শেষ হবে। কৃষক প্রশিক্ষণ, কৃষক মাঠ স্কুলের মাধ্যমে মৌসুমব্যাপী কৃষি পরিবারকে প্রশিক্ষণদান, জৈব সার উৎপাদনের মাধ্যমে মাটির স্বাস্থ্যরক্ষা, কৃষি উপকরণ কার্ড সরবরাহ, কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ, কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের বীজ উৎপাদন ও উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা বিনিময় ছিল উল্লেখযোগ্য কর্মকান্ড। ৪০ হাজার জনগোষ্ঠিকে মূল স্রোত ধারার সাথে পরিচিতকরণই ছিল কর্মসূচির মূখ্য উদ্দেশ্য।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, স্বল্প সময়ে স্বল্প খরচে সুন্দরভাবে কৃষি উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালিত হয়েছে। তবে তিনি শুরু করা কৃষি উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যাহত রাখার জন্য নিয়মিত তদারকি করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। কর্মশালার শুরুতে কর্মসূচির ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর লালমনিরহাট জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমান। এরপর কুড়িগ্রাম জেলার পক্ষে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মাহবুবুর রশিদ। এছাড়া নীলফামারী ও পঞ্চগড় জেলার প্রতিনিধিগণ স্ব স্ব জেলার কর্মকান্ড উপস্থাপন করেন। ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মাহবুবুর রশিদ বলেন, সবচেয়ে বড় ছিটমহল দাসিয়ারছড়া তার উপজেলায় অবস্থিত। দাসিয়ারছড়ায় ২০১৫ সালের ১ আগস্টে শস্যের নিবিড়তা ছিল শতকরা ২০৯ ভাগ, বর্তমানে তা শতকরা ২২৮ ভাগে এসে দাঁড়িয়েছে। কৃষকেরা বাণিজ্যিকভাবে ভার্মি কম্পোস্ট ও সবজি উৎপাদন ও বিপণনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। দাসিয়ারছড়ার কৃষক মো. আমজাদ হোসেন বলেন বিদ্যুৎ, রাস্তা ও কৃষিক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। তিনি বলেন আগে আমনে বিঘা প্রতি ১০-১২ মণ ধান হতো সেখানে এখন ১৫-১৬ মণ ধান হচ্ছে; বোরোতে যেখানে ১৫-২০ মণ হতো বর্তমানে ২৫-২৬ মণ ধান পাচ্ছি। তিনি আরও বলেন গমের ক্ষেত্রে আগে বিঘা প্রতি ৭-৮ মণ ফলন হতো সেখানে বর্তমানে ২০-২২ মণ ফলন হচ্ছে। এছাড়া পুষ্টির ঘাটতি মেটানোর জন্য মিশ্র ফল বাগানে আম, পেয়ারা, লেবু, পেঁপে লাগানো হয়েছে। দেশের উন্নয়নে সাবেক ছিটমহলবাসী গর্বিত অংশীদার হতে চায় বলে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
কর্মশালায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি তথ্য সার্ভিস, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, বুড়িরহাট হর্টিকালচার সেন্টারের কর্মকর্তাসহ সাবেক ছিটমহল থেকে আগত কৃষক প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন।