রেদোয়ানুল হক : রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে প্রতি বছরই পবিত্র রমজান মাস মানুষের নিকট ফিরে আসে। সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই এ পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে অসংখ্য ঘটনা ঘটিয়েছেন।
মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে আল্লাহ তাআলা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহাগ্রন্থ আল-কুরআনুল কারিমও এ মাসেই নাজিল করেছেন। এ মাসেই আল্লাহ তাআলা ইসলামের সুমহান বিজয় দান করেছেন।
তাবুক যুদ্ধ
নবম হিজরির ৮ রমজান মোতাবেক ১৮ সেপ্টেম্বর ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ জিহাদ তাবুক যুদ্ধ করেন এবং এ মাসেই যুদ্ধ শেষে বিজয়ী বেশে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করেন।
তাবুক মদিনা ও দামেস্কের (সিরিয়া) মধ্যবর্তী একটি স্থানের নাম। মদিনা থেকে এটি ৬৯০ কিলোমিটার দূরে এবং সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক থেকে ৬৯২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের বিরুদ্ধে আরবের কাফের ও মুনাফিকদের শেষ পেরেক মারার প্রানান্তকর চেষ্টা। রোমান সৈন্যদের দ্বারা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দূত হজরত হারেস ইবনে উমায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহুকে হত্যার মধ্য দিয়ে এ যুদ্ধের সূত্রপাত হয়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনার সব মুসলিমকে এ যুদ্ধে শরিক হওয়ার নির্দেশ দিলেন। এটা ছিল এক কঠিন পরীক্ষা। কেননা দীর্ঘ ১০ বছর ধরে বহু যুদ্ধের পর এটা ছিল মুসলমানদের কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সময়। আবার এ সময়টা ছিল মদিনাবাসীদের প্রধান খাদ্য খেজুর পাকার সময়। এ সময় তাদের সারা বছরের খেজুর সংগ্রহ করতে হতো। ওই মুহূর্তে বাগান ছেড়ে যাওয়াটা তাদের জন্য ছিল কঠিন কাজ।
ওই সময় আরব অঞ্চলে তীব্র গরমের মওসুম চলছিল। আর তাবুক যুদ্ধের এ সফর ছিল অনেক দীর্ঘ এবং দুর্গম মরুভূমি আর মরুভূমি। তাছাড়া মদিনায় তখন খাদ্য সংকট এবং দুর্ভিক্ষ চলছিল। যুদ্ধের জন্য মুসলমানদের যুদ্ধসরঞ্জাম এবং বাহন পশুর সংখ্যাও ছিল নিতান্তই কম।
ওই মুহূর্তে তৎকালীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ পরাশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাওয়া ছিল অনেক দুঃসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাপার। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ অবস্থায় রমজান মাসের ৮ তারখ ৩০ হাজার যোদ্ধা সাহাবির এক বাহিনী নিয়ে তাবুক অভিযানে অংশ গ্রহণ করেন।
পরিশেষে… আল্লাহ তাআলা পবিত্র রমজান মাসেই মুসলমানদেরকে বড় বড় অনেক বিজয় দান করেছেন। বদর, খন্দক, তাবুক, স্পেন, সিন্ধু ইত্যাদি ঐতিহাসিক বিজয়ও অর্জিত হয়েছিল পবিত্র রমজান মাসে। এ মাসে আল্লাহর সাহায্য থাকে মুমিন মুসলমানের অতি নিকটে। তাই ইবাদত বন্দেগীর এ মাসে বেশি বেশি সৎকাজ করে আল্লাহর কাছে মুমিন মুসলমানের দৈনন্দিন জীবনসহ সব বিষয়ে সফলতা অর্জনের জন্য প্রার্থনা করা উচিৎ।