ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ও মাগুরাঘোনা ইউনিয়নের নোনাডোরা ও বিষের খাল দু’টি দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় ভুমিদস্যু কর্তৃক অবৈধভাবে খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন। একশ্রেনীর রাজনৈতিক প্রভাবশালীর ছত্র-ছায়ায় খালে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে করছে মাছ চাষ। এর ফলে বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশনসহ নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এলাকাবাসীর। খালের অবৈধ দখল মুক্ত করতে স্থানীয় সংসদ ও মৎস্য ও প্রানীসম্পদ মন্ত্রীর নির্দেশনা থাকলেও দখলদ্বারদের অদৃশ্য কারনে তাদের উচ্ছেদ কার্যকর হয়নি। এর ফলে দুটি ইউনিয়নের প্রায় ২০টি বিলের পানি নিষ্কাশন ব্যাবস্থা ব্যাহত হয়। এলাকার কৃষকরা পানিবদ্ধতার কারণে তাদের জমি চাষাবাদ করতে পারেনা। এসব কারণে খাল দু’টি থেকে বাঁধ অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছে এলাকার আপামর জনসাধারণ। এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকলেও অদৃশ্য কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি।
এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার আটলিয়া ও মাগুরাঘোনা ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নোনাডোরা ও বিষের খাল। প্রায় চার কিলোমিটার দীর্ঘ এই দুটি খাল দিয়ে ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামের পানি কুলবাড়িয়া সুইচস গেট দিয়ে ঘ্যাংরাইল নদীতে পড়তো। কিন্তু কয়েক বছর ধরে খাল দুটিতে বাঁধ দেয়ার কারণে পানি নিষ্কাশন ব্যাবস্থা ব্যাহত হয়ে গ্রামগুলোতে মৌসুমি পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আটলিয়া ইউনিয়নের মালতিয়া, চুকনগর দক্ষিণপাড়া, চাকুন্দিয়া, কুলবাড়িয়া, উড়াবুনিয়া, গাদর চক, মাগুরাঘোনা ইউনিয়নের মাগুরাঘোনা, হোগলাডাঙ্গা, বেতাগ্রাম, আরশনগর, গোদার ডাঙ্গিসহ বিভিন্ন গ্রাম ও বিলে পানি নিষ্কাশনের একমাত্র মাধ্যম হলো নোনাডোরা ও বিষের খাল। কিন্তু মহল বিশেষ দীর্ঘদিন ধরে খাল দুটি দখলে নিয়ে ৪০/৪৫টি বাঁধ ও নেটপাটা দিয়ে মাছ চাষ করার ফলে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশন না হওয়ার কারণে একদিকে যেমন এলাকাবাসীকে মৌসুমী পানিবদ্ধতার কবলে পড়তে হয়, অন্যদিকে রবি মৌসুমে তাদের চাষাবাদের বিঘ্ন ঘটে।
এ প্রসঙ্গে আব্দুল গফুর মোড়ল, রবিউল ইসলাম মিঠু, অচিন্ত্য ঘোষসহ এলাকার শত শত মানুষ এই অভিযোগ করেন, স্থানীয় প্রভাবশালী আব্দুল জলিল, আলতাফ সরদার, সাত্তার গাজী, দৌলত সরদার, কামরুল ইসলাম লাভলু, সিরাজ ও সজলসহ ২০/২৫ জন দীর্ঘ দিন ধরে খাল দুইটি দখলে রেখে ব্যবহার করছে। ইচ্ছামত বেড়ি বেঁধে ও নেটপাটা দিয়ে তারা মাছ চাষ করছে। এভাবে বাঁধ দেওয়ায় পানি নিষ্কাশন হতে পারে না। আবার রবি মৌসুসেও পানির অভাবে কৃষিকাজ ব্যাহত হয়। আমরা অনেক দিন ধরে খাল দুইটি উচ্ছেদের চেষ্টা করছি।
কিন্তু ক্ষমত্সীনদের প্রভাবের কারনে আজও খাল দুটির অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাড.প্রতাপ কুমার রায় বলেন, এই খাল দুইটির বিষয়ে আমি অবগত রয়েছি। সম্প্রতি দুই ইউনিয়নের জনগণ মৎস্য ও প্রানীসম্পদ মন্ত্রীর নিকট খাল দুটি দখল মুক্ত করতে আবেদন করেছে। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ৩১ মার্চ মন্ত্রী মহোদয় খাল দখলের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য খুলনা জেলা প্রশাসক মহোদয়কে নির্দেশ দেন। কিন্তু মন্ত্রীর সেই নির্দেশ জেলা প্রশাসনের লাল ফিতায় বন্ধি থাকায় খাল দখল মুক্ত করতে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি জেলা প্রশাসন।