নিজস্ব সংবাদদাতা: রাজধানীতে ফলদ বৃক্ষ রোপণ পক্ষ ও জাতীয় ফল প্রদর্শনী ২০১৮ এর উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজধানীর ফার্মগেটস্থ আ. কা. মু. গিয়াস উদ্দীন মিলকী অডিটরিয়াম চত্বরে এ উপলক্ষ্যে তিন দিনব্যাপি জাতীয় ফল মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলা চলবে ২৪ জুন পর্যন্ত। এবারের প্রতিপাদ্য‘অপ্রতিরোধ্য দেশের অগ্রযাত্রা, ফলের পুষ্টি দেবে নতুন মাত্রা’।
মেলায় ৯টি সরকারি ও ৫১টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মোট ৮১টি স্টল রয়েছে। মেলায় আমের ১০২টি জাতসহ ৯৯ প্রজাতির ফল প্রদর্শন করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রচলিত ফল ৫৪, অপ্রচলিত ৩৬ ও বিদেশি ফলের জাত ৯টি রয়েছে। এছাড়াও মেলায় রয়েছে জাতীয় ফল কাঁঠালের একটি বিশেষ কর্নার। মেলা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মেলায় আগত দর্শনার্থীরা ফল চাষের বিভিন্ন প্রযুক্তি সম্পর্কে এবং রাসায়নিকমুক্ত বিভিন্ন জাতের ফল ক্রয় করতে পারবেন।
শুক্রবার (২২ জুন) ফলদ বৃক্ষ রোপণ পক্ষ ও জাতীয় ফল প্রদর্শনী উপলক্ষ্যে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকে আ. কা. মু. গিয়াস উদ্দীন মিলকী অডিটরিয়াম চত্বর পর্যন্ত এক বর্ণাঢ্য র্যালি ও কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ অডিটরিয়ামে ‘মানব সম্পদ উন্নয়নে পুষ্টি সমৃদ্ধ ফলের অবদান’ শীর্ষক সেমিনারের অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারের প্রধান অতিথি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপি বলেন, আমাদের দেশের আবহাওয়ায় সারাবছর ফসল উৎপাদনের উপযোগি। জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অধিক জনসংখ্যার মধ্যেও কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের অনেক উন্নতি হয়েছে। যা অনেক দেশের জন্য অনুকরণীয়।
মন্ত্রী বলেন, দেশে কৃষি জমির পরিমান দিন দিন কমে যাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য উৎপাদন ধরে রাখতে আমাদের সকলকে সচেতন হয়ে কাজ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, ফলের বাণিজ্যিক উৎপাদন বাড়লেও সংগ্রহোত্তর অপচয় ও প্রক্রিয়াজাতকরণের অভাবে অনেক ফল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এজন্য উন্নত ব্যবস্থাপনা ও ছোট-মাঝারি শিল্প স্থাপন করতে হবে। তাহলে সারা বছর ফল পাওয়া যাবে। ফলে বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক প্রয়োগের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে বিজ্ঞানভিত্তিক কৌশল অবলম্বন ও কার্যকরী রাসায়নিক প্রয়োগ করতে হবে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এমপি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৯৯১ সালে কৃষকলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে বলেছেন- আমাদের প্রত্যেকের ভেষজ, ফলদ ও বনজ এ তিনটা গাছ পরিবার প্রতি রোপন করি, তাহলে আমরা নিজেদের উপকার করবো, দেশের উপকার করবো, জলবায়ুর উপকার করবো এবং মানব সভ্যতার জন্য অবদান রাখবো।
কাঁঠাল সম্পর্কে কৃষিমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কাঁঠালকে আমাদের জাতীয় ফল হিসেবে ঘোষণা করেছেন। কাঁঠালের পুষ্টিগুণ অপরিসীম। গ্রামে যখন এক সময় খাবারের অভাব ছিলো, তখন মেহনতি মানুষের পুষ্টির যোগান দিতো কাঁঠাল। কাঁঠালের সব কিছুই ব্যবহার করা যায়।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের নিজস্ব ফলের জাতের উৎকর্ষতা ঘটাতে হবে, পাশাপাশি বিদেশী ফলের অভিযোজন ঘটাতে পারলে আমরা সারা বছর ফল পাবো। গ্রাফটিং এর মাধ্যমে কিভাবে অল্পদিনে কাঁঠাল পাওয়া যায়, এ বিষয়ে সম্প্রসারণ কাজ এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান এ সময় তিনি।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ্ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ। মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এম এনামুল হক। সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ মহসীন।
সেমিনারে কৃষি তথ্য সার্ভিস কর্তৃক নির্মিত প্রতিপাদ্যভিত্তিক প্রামাণ¬¬্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এছাড়াও জনগণকে সচেতন করতে পোস্টার, লিফলেট ও বুকলেট বিতরণ করা হয়েছে এবং স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের ফলদ বৃক্ষ রোপণে উদ্বুদ্ধ করতে রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। মাসিক ‘কৃষিকথা’ পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা, জাতীয় দৈনিকে ক্রোড়পত্র প্রকাশসহ বেতার ও টেলিভিশনে ফলদ বৃক্ষ রোপণ সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে বিনামূল্যে ফলের চারা/কলম বিতরণ, সেমিনার, কর্মশালা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতি।