সালাহ্ উদ্দিন সরকার তপন : বেশ কয়েক বছর ধরে রাক্ষুসে মাছ হিসেবে পরিচিত শোল মাছের চাষ শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। ময়মনসিংহস্থ হ্যাচারীগুলোতে চলছে বিস্তর কাজ ও গবেষণা।দেশের বাজারে চাহিদা থাকায় চাষিদের মধ্যেও শোল মাছ চাষে আগ্রহ দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশা করি, এক সময় শোল মাছের চাষ হবে আমাদের চাষীদের জন্য একটি লাভজনক বিনিয়োগ। শোল মাছ প্রধানত তিন পদ্ধতিতে চাষ করা যায়- ১. সনাতন পদ্ধতি; ২. আধা নিবিড় পদ্ধতি, এবং ৩. নিবিড় পদ্ধতি,
১. সনাতন পদ্ধতি
এই পদ্ধতিতে প্রতি শতাংশে ৫-৬টি মাছ দেয়া যেতে পারে। ছোট অবস্থায় জু প্লাংকটন (প্রাণীকনা) খেয়ে জীবন ধারন করে। পরবর্তীতে পুকুরের দেশি ছোট মাছ ও তেলাপিয়ার বাচ্চা শিকার করে খেয়ে ধীরে ধীরে ৭ – ১০ মাস পর বিক্রির উপযোগী হয়ে উঠে। এই পদ্ধতিতে বানিজ্যক চাষ লাভজনক হবেনা।
২. আধা নিবিড় পদ্ধতি
পদ্ধতির মধ্যে আবার দুইভাবে শোল মাছের চাষ করা যায়-
ক. বাহির থেকে ছোট মাছ খাদ্য হিসাবে পুকুরে দিয়ে চাষ করা;
খ. রেডি ফিড (সম্পুরক খাবার) দিয়ে চাষ করা।
বাহির থেকে ছোট মাছ খাদ্য হিসাবে পুকুরে দিয়ে চাষ করা
এই পদ্ধতিতে প্রতি শতাংশে ১৫-২০টি মাছ দেয়া যেতে পারে। ছোট অবস্থায় জু প্লাংকটন (প্রাণীকনা) খেয়ে জীবন ধারন করে। পরবর্তীতে বাহির থেকে ছোট মাছ কিনে পুকুরে খাদ্য হিসাবে দেওয়া হয় এবং পুকুরের দেশি ছোট মাছ এবং তেলাপিয়ার বাচ্চা শিকার করে খেয়ে ধীরে ধীরে ৬ – ৭ মাস পর বিক্রির উপযোগী হয়ে উঠে। এই পদ্ধতিতে বাণিজ্যক চাষ লাভজনক হবেনা। কারণ, ছোট মাছ খাইয়ে শো্ল মাছ চাষ করলে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় করলে পোষাতে পারবেননা। তাছাড়া ছোট মাছের দাম বেশি এবং বাজারে সরবরাহ কম। এছাড়াও শতাংশপ্রতি ১৫–২০টি মাছ চাষ করলে জমি ভাড়া এবং সামগ্রিক খরচের পর লাভ উঠানো এক খুবই মুশকিল।
রেডি ফিড (সম্পূরক খাবার) খাদ্য হিসেবে পুকুরে দিয়ে চাষ করা
এই পদ্ধতিতে প্রতি শতাংশে ৩০০ -১০০০টি মাছ দেয়া যেতে পারে। রেডি ফিড (সম্পূরক খাবার) দিয়ে শোল মাছ চাষ ব্যবস্থাপনা অন্য মাছ চাষ ব্যবস্থাপনা থেকে ভিন্ন, বিশেষ করে খাদ্য ব্যবস্থাপনা। আমরা জানি, শোল মাছ সাধারণত অন্য মাছ ও প্রাণীকণা খেয়ে জীবনধারন করে। তাই স্বভাবগতভাবেই শোলের ছোট পোনা প্রথমেই খাদ্য গ্রহণ করেনা। তাদের জন্য “ময়না” (এক ধরনের প্রাণীকণা) চাষ করতে হয় ট্যাংকিতে। একেবারে শুরুতে ময়না খাদ্য হিসেবে দেওয়া হয়। এর কয়েকদিন পরেই ময়নার সাথে নার্সারি খাবারও দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে খাদ্য সরবরাহ বাড়িয়ে ময়না কমিয়ে শতভাগ ফিড (খাদ্য) নির্ভর করতে হয়। হ্যাচারী মালিক ভাইদের বলছি, আপনার উৎপাদিত পোনাকে ফিডে অভ্যস্ত না করে দয়া করে চাষিদের কাছে বিক্রি করবেননা। বিশেষ করে নতুন চাষিদের কাছে, পুরাতন অভিজ্ঞ চাষি হলে ভিন্নকথা। এখানে উল্লেখ্য, শোলের ফিডে প্রাথমিক অবস্থায় ৪৩ ভাগ প্রাণীজ প্রোটিন ও উচ্চ এমাইনো এসিড প্রোফাইল সমৃদ্ধ হতে হয়। খাদ্যের গুণগত মানের ওপর ভিত্তি করে ৪.৫ – ৬ মাস পর বিক্রির উপযোগী হয়ে উঠে। বর্তমানে আমাদের দেশে এই পদ্ধতিটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং এই পদ্ধতিটি বেশ লাভজনক।
৩. নিবিড় পদ্ধতি
এই পদ্ধতিতে প্রতি শতাংশে ২৫০০ -৩০০০ টি মাছ দেয়া যেতে পারে। খাদ্য ব্যবস্থাপনা রেডি ফিড (সম্পুরক খাবার) খাদ্য হিসেবে পুকুরে দিয়ে চাষ করা ব্যবস্থাপনার মতই। তবে, সেখানে সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করা হয়। খাদ্যের গুণগত মানের ওপর ভিত্তি করে ৫ –৭ মাস পর বিক্রির উপযোগী হয়ে উঠে। বর্তমানে আমাদের দেশে এই পদ্ধতিতে শোল মাছের চাষ নেই।
এখানে উল্লেখ্য, শোলের ফিডে প্রাথমিক অবস্থায় ৪৩ ভাগ প্রাণীজ প্রোটিন ও উচ্চ এমাইনো এসিড প্রোফাইল সমৃদ্ধ হতে হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ভালো মানের শোলের ফিডের যথেষ্ট অভাব। তবে বাংলাদেশি চাষিদের জন্য সুখবর হচ্ছে- বিশ্বখ্যাত স্কেটিং শোলের ফিড “স্টেলা এস” এসেছে বাংলাদেশের বাজারে যার গড় এফসিআর প্রায় ৮০০ গ্রাম।
সঠিক মাত্রায় খাবার না দিলে বড় মাছ ছোটটিকে খেয়ে ফেলবে। খাবার যদি ৪৩% প্রোটিন ও উচ্চ এমাইনো এসিড প্রোফাইল সমৃদ্ধ না হয় তবে, মাছ বাঁকা হয়ে যাবে এবং মাছ ধরার সময় সংখ্যায় কম পাবেন।
আবারো হ্যাচারী মালিক ভাইদের বলছি, আপনার উৎপাদিত পোনাকে ফিডে অভ্যস্ত না করে নতুন চাষিদের কাছে বিক্রি করবেননা। চাষি ভাইদেরও বলছি ফিডে অভ্যস্ত নয় এমন পোনা সংগ্রহ করবেননা। দেখে শুনে বুঝে শোলের পোনা সংগ্রহ করবেন।