শুক্রবার , নভেম্বর ২২ ২০২৪

দেশীয় বিজ্ঞানীদের বায়োচার ব্যবহারে সফলতা: কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন

ইফরান আল রাফি (পবিপ্রবি প্রতিনিধি) : বায়োচার ব্যবহারে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শামীম মিয়া নেতৃত্বে একদল গবেষক এ সফলতা পেয়েছেন। জানামতে, এটিই  প্রথম বাংলাদেশে বায়োচার নিয়ে গবেষণা। তাঁর নেতৃত্বে একদল গবেষক বায়োচার উৎপাদের চুল্লি  উদ্ভাবন করেন।তাঁদের উদ্ভাবিত চুল্লির মডেল আন্তর্জাতিক গবেষণা সাময়িকী (Pedosphere) এ প্রকাশিত হয়েছে । মাস্টার্স এর দুইজন শিক্ষার্থী সয়াবিন ও মসুর উৎপাদনে বায়োচার ব্যবহার করে সফলতা পেয়েছেন যা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।উক্ত মডেলটি আংশিক পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত  হচ্ছে।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শামীম মিয়া (ইনসেটে) নেতৃত্বে একদল গবেষক ও তাঁদের উদ্ভাবিত চুল্লী। উপরের বাম পাশে বায়োচার এর ছবি।

বায়োচার হল এক ধরনের জৈব পদার্থ (Biomass) যা অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে তৈরি এক ধরনের কাঠ কয়লা।মূলত কাঠ জাতীয় পদার্থ, বর্জ্য (পোল্ট্রি,  ময়লা আর্বজনা) ইত্যাদি থেকে বায়োচার তৈরি করা হয়।পাইরোলাইসিস প্রক্রিয়ায় অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে তাপ দেওয়ার সময় সরল লম্বা চেইন বিশিষ্ট জৈব পদার্থ থেকে অ্যারোমেটিক চেইন বিশিষ্ট জৈব পদার্থ তৈরি হয়।

এটি দীর্ঘদিন মাটিতে স্থায়ী হয়। কারণ, মাটির অনুজীব সহজে জৈব যৌগটিকে ভাঙ্গতে পারেনা। ফলশ্রুতিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে বায়োচার প্রযুক্তি ব্যবহার কৃষি এবং পরিবেশ রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।এই প্রক্রিয়া বাতাসের কার্বন ডাই অক্সাইডকে  প্রথমে গাছে তারপর মাটিতে শতবছরেরও বেশি সময় পর্যন্ত ধরে রাখা সম্ভব।

বায়োচার একটি অধিক পৃষ্ঠতল বিশিষ্ট এবং আয়ন যুক্ত পদার্থ যা মাটিতে প্রয়োগের মাধ্যমে মাটির ভৌত ও রাসায়নিক গুনাগুনের পরিবর্তন সাধিত হয়।ফলশ্রুতিতে মাটির পানি ধারন ক্ষমতা এবং ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। বায়োচার মাটি দূষণরোধেও  সহায়ক ভূমিকা রাখে।এটি থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন করা সম্ভব। উল্লেখ্য, বায়োচার উৎপাদনের সময় উৎপাদিত তাপশক্তি দ্বারা বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং রান্না করা সম্ভব।

বায়োচার সম্পর্কিত বর্তমান গবেষণা সম্পর্কে জানতে চাইলে ড.শামীম মিয়া এগ্রিনিউজ২৪.কম কে জানান, “বর্তমানে আমরা বায়োচার সক্রিয়করণ, সক্রিয় বায়োচার সমৃদ্ধ সার উৎপাদন, বায়োচার সমৃদ্ধ কম্পোস্ট উৎপাদন সহ বায়োচার সম্পর্কিত নানাবিদ গবেষণা চলমান রয়েছে। কৃষক পর্যায়ে বায়োচার উৎপাদন কৌশল সহজলভ্য করার জন্য গবেষণা চলছে।”

তিনি আরো জানান,”বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই গবেষণা কৃষি ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য সরকারি সহযোগীতা এবং অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন।”

 

This post has already been read 7821 times!

Check Also

বারি উদ্ভাবিত আনারসের লাড্ডু মেটাবে পুষ্টি চাহিদা

কৃষিবিদ ইফরান আল রাফি : বাংলাদেশের প্রধান ফলগুলোর মধ্যে পুষ্টিগুন সম্পন্ন আনারস অন্যতম। উৎপাদন মৌসুমে …