শেরপুর (নকলা) প্রতিনিধি: শেরপুর জেলায় বৃষ্টি নির্ভর আউশ আবাদে ব্রি-ধান চাষের পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। ভূগর্ভস্থ পানির মজুদ দিন দিন কমে যাওয়ায়, ভূগর্ভস্থ পানির মজুদ বাড়াতে সেচ নির্ভর বোরো চাষের পরিমান কমিয়ে আউশ আবাদ বাড়াতে কৃষি বিভাগ নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে আসছে।
সেচ হীন আউশ আবাদে খরচের তুলনায় লাভ বেশি পাওয়ায় আউশ চাষে ঝুঁকছেন নকলা উপজেলার কৃষক। এই আবাদে বিভিন্ন ব্রি-ধান এর গুরুত্ব ও চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। রবি ফসলের পরে ব্রি-ধান চাষ করা যায় বলেই এই ধান চাষের পরিমান দিন দিন বাড়ছে। সেচ ও বালাইনাশক ছাড়া ভালো ফলন হওয়ায় কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা খুশি। আলুসহ বিভিন্ন রবি ফসল ওঠার পর, কম খরচে ও অল্প সময়ে অতিরিক্ত ফসল পেতে আউশ আবাদে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (ব্রি) এর উদ্ভাবিত ব্রি-ধান-৪৮, ব্রি-ধান-৮২ ও জিঙ্কসমৃদ্ধ ব্রি-ধান-৭৪ এর চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এইসব ধান সম্প্রসারিত হওয়ায় নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। প্রতি বছর বাড়ছে এই ধানের চাষি ও আবাদের পরিমাণ।
অনেক কৃষক জানান, এই ব্রি-ধান চাষে তারা অধিক লাভবান হচ্ছেন। নকলা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২০ হেক্টর জমি এবং উৎপাদিত ধান থেকে ৫৫৭ মেট্রিকটন চাল পাওয়ার সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চাষে অর্জন ৭৫ হেক্টর বেড়ে হয়েছে ২৯৫ হেক্টর। তার মধ্যে ড্রাম সিডারের মাধ্যমে জালালপুর, ধুকুড়িয়া ও টালকী এলাকায় তিনটি প্রদর্শনী প্লটে ১৫ একর জমিতে আউশ ধান বপণ করা হয়েছিল। আর গেল বছর লক্ষ্য মাত্রা ও অর্জন ছিল ১৬০ হেক্টর জমি।
ড্রাম সিডারের মাধ্যমে ১৬ এপ্রিলে বপণ করা ব্রি-ধান-৮২ এর নমুনা ফসল কর্তন দিবস উপলক্ষ্যে এসে জালালপুর এলাকার ব্রি-ধানের মাঠ পরিদর্শন করেন ব্রি’র পরিচালক (গবেষণা) ড. তমাল লতা আদিত্য, উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হুমায়ূন কবীরসহ বেশ কয়েকজন ব্রি’র উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এসময় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ূন কবীর, পৌর সভার মেয়র হাফিজুর রহমান লিটন, উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আতিকুর রহমানসহ স্থানীয় কৃষক-কৃষাণি উপস্থিত ছিলেন। নমুনা ফসল কর্তনে ব্রি-ধান-৮২ হেক্টর প্রতি ৫.৩০ মেট্রিকটন শুকনা ধান পাওয়া যায়। ব্রি’র কর্মকর্তারা জানান, ব্রি-ধান-৮২ এর জীবনকাল ৯৫ দিন এবং ব্রি-ধান-৪৮ এর জীবনকাল ১০০ দিন।
কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এবছর ব্রিধান-৪৮, ব্রি-ধন-৮২, বিআর-২৬, নেরিকা মিউট্যান্ট জাতের ধান বেশি চাষ করা হলেও নতুন উদ্ভাবিত ব্রিধান-৮২ ড্রাম সিডারের মাধ্যমে ১৫ একর জমিতে চাষ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে উপজেলার ৫৪০ কৃষককে এক বিঘা করে ৫৪০ বিঘা জমিতে আউশ ধান রোপনের জন্য প্রনোদনা দেওয়া হয়েছে। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমে লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে উৎপাদন অনেক বাড়বে বলে ধারনা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, অধিক লাভের আশায় কৃষকরা তাদের অনেক পতিত জমিতেও আউশ ধান রোপন করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে অর্জন বেড়ে গিয়ে, গেল বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ আবাদ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন কবীর জানান, আউশ ধান রোপন উপযোগী সব জমিকে চাষের আওতায় আনতে এবং কৃষিপণ্য উৎপাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আউশ আবাদ বাড়াতে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও কৃষি প্রনোদনা দেওয়া