শুক্রবার , নভেম্বর ২২ ২০২৪

আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষে সফল হচ্ছেন খুলনা ও সাতক্ষীরার চাষিরা

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : আধুনিক পদ্ধতিতে কার্প-গলদা মিশ্র চাষ করে সাবলম্বী হয়েছে খুলনার ডুমুরিয়া ও সাতক্ষীরার তালার ১০টি ইউনিয়নের প্রায় ৩ হাজার মৎস্য চাষি পরিবার। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)’র অর্থায়নে সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থা (সাস)’র PACE প্রকল্পের আওতায় চাষিদের উক্ত সফলতা আসে। উদ্যোক্তাদের আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি শীর্ষক ভ্যালু চেইন উন্নয়ন উপ-প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার ৫টি এবং সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার ৫টিসহ মোট ১০টি ইউনিয়নে।

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, এ পর্যন্ত তাদের দেখানো পথে প্রকল্পভুক্ত প্রায় ১ হাজার ৮শ’ পরিবার আলাদাভাবে ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে। তারা মাছ চাষের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে বিভিন্ন প্রকার সবজি উৎপাদন করে বাড়তি মুনাফা আয় করে মূল লক্ষ বাস্তবায়নে এগিয়ে গেছে অন্যভাবে। উপকারভোগীদের বক্তব্য, আধুনিক পদ্ধতির প্রকল্প শুধু অর্থনৈতিকভাবে তাদের সাবলম্বী করেনি পরিবর্তন ঘটিয়েছে ভাগ্যেরও।

প্রকল্প’র আওতায় ৩ হাজার জন মৎস্যচাষি সম্পৃক্ত রয়েছেন। এদের মধ্যে তালায় ১২০০ জন ও ডুমুরিয়ায় রয়েছে ১৮০০ জন।  তারা মূলত কার্প-গলদা মিশ্র চাষ করছেন। প্রকল্পের আওতায় এ পর্যন্ত ১২০০ জন চাষিকে রিসোর্স পার্সন, লীড ফার্মার, সহকারী লীড ফার্মার হিসেবে আধুনিক মৎস্য চাষি যেমন- ঘেরের মাটি পানি পরীক্ষা, ভালো পিএল চিহ্নিতকরন, নার্সারির মাধ্যমে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য পূর্ণাঙ্গভাবে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা হয়েছে।

এছাড়া প্রকল্পভুক্ত তালার সদর, মাগুরা, খলিশখালী, জালালপুর ও ইসলামকাটি এবং ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরাঘোনা, আটলিয়া, শোভনা, খর্ণিয়া ও রুদাঘরা ইউনিয়নের প্রায় ২ হাজার চাষি মৎস্য চাষের পাশাপাশি ঘেরের পাড়ে বিভিন্ন প্রজাতির সবজি চাষ করে অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করছেন। প্রকল্পের মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৮০০ জন চাষি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তায় পরিণত হয়েছেন।

চাষীরা জানান, প্রকল্পের আওতায় তারা আধুনিক যন্ত্রপাতি ও বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করে বাড়িতেই তৈরি করছেন উন্নত মানের খাবার, ঘেরে বা পুকুরে ব্যবহার করছেন বায়োসিকিইরিটি নেট, মাছের রোগ-প্রতিরোধে প্রয়োগ করছেন প্রবায়োটিকসসহ আরো অনেক পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উন্নত পদ্ধতিতে কার্প-গলদা মিশ্র চাষ ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করেছেন ইউনিয়নের বারানগর গ্রামের শিবানী চক্রবতী, ধুকুড়িয়া গ্রামের শিতল ব্যানার্জীসহ আরা অনেকে। আধুনিক প্রযুক্তি বিষয়ক প্রশিক্ষণ, গুণগত মানসম্মত মাছের পোনা ও রেণু সংগ্রহ, প্রোটিন ও আমিষসমৃদ্ধ খাবার সরবারহ এবং নিয়মিত মাটি ও পানি পরীক্ষা নিশ্চিত করে উল্লেখযোগ্য হারে মাছের ফলন পেয়ে সফল হয়েছেন এসব মাছ চাষিরা। তাদের এ কাজে কারিগরি সহায়তাসহ সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন করছে সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থা (সাস)।

এ ব্যাপারে সফল মাছচাষী শিবানী জানান, পরিবারের আয়ের উৎস্ হিসেবে প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি মাছ চাষ করছেন। কিন্তু ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটছিলনা। ২০১৭ সালের এপ্রিলের শেষের দিকে ভ্যালু চেইন উন্নয়ন উপ-প্রকল্পটি ভাগ্য পরিবর্তনে ভিন্ন মাত্রা এনে দিয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও ঘেরের পাড়ে বাড়তি সবজি চাষ করে তার চৌদ্দ বিঘা জমিতে প্রায় দুই লাখ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা অর্জিত হয়েছে। বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ১২-১৫ হাজার টাকা। সারা বছর তার ঘেরের মাছ ও সবজি বিক্রি হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এবছরও আশানুরূপ মুনাফা পাবেন বলে বিশ্বাস এ চাষির। একই সাথে তিনি চলতি বছর কাজের স্বীকৃতি সরূপ পেয়েছেন মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে তালা উপজেলার সেরা গলদা চাষির সম্মাননা। অপর সফল মাছচাষি শীতল ব্যানার্জী জানান, কার্প-গলদা মিশ্র চাষের পাশাপাশি সাথী সবজি চাষ তিনি ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছেন।

এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট এনজিও প্রতিষ্ঠান সাস’র সমন্বয়কারী খান মো. শাহ আলম জানান, প্রকল্পের মাধ্যমে দীর্ঘদিন যাবৎ স্থিতিশীল অবস্থার মাছ চাষিদের ভাগ্যোন্নয়ন তথা মুখে হাসি ফুটাতে পেরে তিনি নিজেও ভীষণ খুশী। তার বিশ্বাস, প্রকল্পটি অচিরেই মৎস্য উৎপাদনের উর্বর ভূমি তালা, ডুমুরিয়া ছাড়াও প্রসারতা পাবে বিস্তীর্ণ জনপদে।

This post has already been read 4490 times!

Check Also

যে জেলায় ইলিশ উৎপাদন হয়, ওই জেলার মানুষ গরিব হতে পারে না -মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

ভোলা সংবাদদাতা: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ইলিশের সম্পদ রক্ষায় সবাইকে একসাথে কাজ …